Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শোকের গাঁয়ে মমতা-ছায়া, মিলল ক্ষতিপূরণও

২৯ অক্টোবরের ওই জঙ্গিহানার পরে শ্রমিকদের দেহ নিয়ে গ্রামে এসেছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য সরকারের তরফে প্রতিটি পরিবারের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের চেক  তুলে দিয়ে শুভেন্দুবাবু পরিবারের এক জনকে চুক্তিভিত্তিক চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

জহিরুদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

জহিরুদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

বিমান হাজরা ও কৌশিক সাহা
বাহালনগর শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৬
Share: Save:

কাশ্মীরের জঙ্গিহানায় নিহত পাঁচ শ্রমিকের গ্রাম বাহালনগরে পৌঁছে বুধবার ফের এক দফা ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে এলেন, নিহতদের পরিবারগুলি যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সে জন্য সরকারের তরফে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সঙ্গে, বাংলা আবাস যোজনায় তাঁদের সকলের জন্য গড়ে দেওয়া হবে দু’কামরার পাকা ঘর। নিহত কামিরুদ্দিন শেখের অসুস্থ মেয়ে রহিমা খাতুনের পাশেও থাকছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জানান, দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর চিকিৎসার যাবতীয় দায় নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।

২৯ অক্টোবরের ওই জঙ্গিহানার পরে শ্রমিকদের দেহ নিয়ে গ্রামে এসেছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য সরকারের তরফে প্রতিটি পরিবারের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের চেক তুলে দিয়ে শুভেন্দুবাবু পরিবারের এক জনকে চুক্তিভিত্তিক চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। গ্রামের মেরাজ শেখ বলছেন, “এত শোকের মধ্যেও মানুষ ওই আশ্বাসে ভরসা পেয়েছিল।” মৃতের পরিবারগুলির দাবি, এ দিন বাহালনগরে এসে মুখ্যমন্ত্রী পরিবারগুলির হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেবেন বলে আশা করেছিলেন তাঁরা।

গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী আসবেন শুনে বাহালনগর যেন ভেঙে পড়েছিল জাতীয় সড়কের কোল ঘেঁষে। মৃত কামিরুদ্দিন শেখের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় পাঁচশো মিটার রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়েছিলেন কয়েক হাজার বাসিন্দা। দু’টো নাগাদ দূর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় দেখেই সোল্লাসে ফেটে পড়েন তাঁরা। মাসখানেক আগে গুঁড়ো পাথর ফেলে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। তবুও হু হু করে উড়েছে ধুলো। সেই ধুলো মেখেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে বাহালনগর। কামিরুদ্দুনের বাড়িতে আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য উঠোনের মধ্যে রাখা ছিল দড়ির একটি খাটিয়া। তার উপরে বসে মৃত ও জখম শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

তার পরেই বাড়ির বাইরে এসে বলেন, “এই শ্রমিক পরিবারের জন্য এখনও পর্যন্ত যা করার করেছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত কোনও সাহায্য করেনি। ওই শ্রমিক পরিবারের লোকজনকে ব্যবসা করার জন্য টাকা ও একটি করে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা মিলন শেখ, জ্যোৎস্না বিবিরা বলেন, “দুপুর থেকে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছি। ভেবেছিলাম, গ্রামের অন্য বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কিছু ঘোষণা করবেন। তা হল না। তবে মমতাদিকে তো দেখা হল!’’

বিকেলে বহরমপুরের রবীন্দ্রসদনেও তাঁকে দেখতে ভিড় ভেঙেছিল পাঁচিল ঘিরে। সেখানে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি থেকে ফরাক্কার ড্রেজিং— বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ফরাক্কায় ড্রেজিং না হওয়ায় গঙ্গার নাব্যতা কমেছে, ফলে বাংলায় ও বিহারে বন্যা হচ্ছে।’’ বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতরের সচিবের কাছে জানতে চান। উত্তরে তিনি বলেন ‘‘২০০৫ সালে জলচুক্তির সময় চুক্তি মতো টাকা কেন্দ্র দেয়নি। তারা ভাঙন প্রতিরোধের ব্যাপারেও উদ্যোগী হয়নি।’’

মুর্শিদাবাদে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। সেই পেঁয়াজ যাতে সংরক্ষণ করা যায় সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। আবার উত্তরবঙ্গে ড্রাগন ফ্রুটস চাষের প্রসঙ্গ তুলে মুর্শিদাবাদে সেই চাষ করা যায় কিনা তা দেখার কথা বলেন। বৈঠকে তিনি জানতে চান, কী করলে রেজিনগরের শিল্পতালুকের সাফল্য আসবে? মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগপতিদের কাছে সেই প্রশ্ন করতেই ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জমির দাম কমালে ও ঋণ পেতে সাহায্য করলে সাফল্য আসবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে তাঁদের আশ্বাসও দেন।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘‘রাজশাহী সিল্কের আদলে যে বাংলার সিল্কের কাজ শুরু হয়েছিল তার মান ভাল হয়নি।’’ তার মান বাড়াতে আর্ট কলেজের পড়ুয়াদের সাহায্য নেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে মৌলবাদী সংগঠনগুলি নিয়ে তিনি সতর্ক করেন পুলিশকেও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কিছু সংগঠন এখানে ইনডোর বা আউটডোরে টাকা নিয়ে এসে কিছু সাম্প্রদায়িক প্ররোচনা দিচ্ছে। এরা দুটো সম্প্রদায়েরই। এটা আপনাদের আটকাতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Bahal Nagar Compensation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE