ফাঁকা ঘরে নিজের একরত্তি ছেলেকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে দেহ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ উঠল বাবার বিরুদ্ধে। রক্তাক্ত ছেলের দেহ কোলে করে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামের লোক তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সন্ধ্যায় তেতে ওঠে ক্যানিংয়ের শ্যামাপ্রসাদ কলোনি। অভিযুক্ত তপন সমাদ্দারকে ধরে উত্তম মধ্যম দেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। পরে গ্রেফতারও করেছে। পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই খুন, প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের।
নিহত শিশুটির নাম সায়ক সমাদ্দার (৪)। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তপনের সঙ্গে স্ত্রী সবিতাদেবীর অশান্তি লেগেই থাকত। তপনের এই নিয়ে তিনটি বিয়ে। ওই যুবক আবার সবিতার দ্বিতীয়পক্ষের স্বামী। তবে সায়ক তাদের দু’জনেরই ছেলে। তপনের কাঠের ব্যবসা ছিল। কিন্তু ব্যবসা ভাল না চলায় তা বন্ধ করে দেয়। সবিতা কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁর আয়েই কার্যত সংসার চলে। অভিযোগ, তপন নেশা করতেন। এ জন্য মাঝেমধ্যেই স্ত্রীর কাছে টাকা চাইতেন। টাকা না দিলে সবিতাদেবীকে সে মারধর করত। ঝগড়ার সময়ে ছেলে সায়ককে মেরে ফেলারও হুমকি দিত ওই যুবক।
অন্য দিনের মতোই এ দিনও সকালে সবিতাদেবী কাজে বেরিয়ে যান। তপনও বেরিয়ে গিয়েছিল। সায়ক পাশের এক বাড়িতে ছিল। বিকেল ৫টা নাগাদ তপন বাড়ি ফেরে। এরপরে এক পড়শির হাতে ১০ টাকা দিয়ে ছেলেকে ডেকে পাঠায়। সায়ক টাকা হাতে আনন্দে বাবার কাছে আসে। অভিযোগ, ঘরের ভিতরে একটি ছুরি দিয়ে ছেলের গলার নলি কেটে দেয় তপন। পেটে ছুরি ঢুকিয়ে নাড়িভুড়ি বের করে ফেলে। রক্তে ঘর ভেসে যায়। ছেলের নিথর দেহ একটি কাপড়ে মুড়ে মাতলা নদীর দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তপনের এক আত্মীয়া দেখে ফেলায় সে কোলে থাকা বাচ্চাটির দেহ লুকনোর চেষ্টা করে। কিন্তু কাপড় থেকে বাচ্চাটির পা বেরিয়ে যায়। ওই মহিলা তখন বাচ্চাটির পা জাপটে ধরে চেঁচাতে শুরু করেন। তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। গ্রামবাসীদের প্রশ্নের কোনও জবাব তাকে ওই অবস্থায় দেখে সকলে খেপে যান। শুরু হয় মার। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে ক্যানিং হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তপনের ভাইপো অলীক সমাদ্দার বলেন, ‘‘কাকার সঙ্গে কাকিমার প্রায়ই ঝামেলা হত। কাকা নেশাভাঙ করে সংসারে অশান্তি করত। টাকা চাইত। না পেলেই কাকিমাকে মারত। সায়ককে মেরে ফেলার ভয় দেখাত। কিন্তু সত্যি সত্যিই যে এ ভাবে নিজের ছেলেকে কাকা মেরে ফেলবে, ভাবতে পারিনি।’’