হাঁপাতে হাঁপাতে মাঝবয়েসি ভদ্রলোক বলে যাচ্ছিলেন, ‘‘আমার মেয়ের বয়েস ১৮ হয়নি। ওর মা ভুল বুঝিয়ে বাড়ি থেকে ওকে নিয়ে গিয়েছে। জোর করে বিয়ে দিয়ে দেবে। বিয়েটা ঠেকান। মেয়েটাকে বাঁচান!’’
শুক্রবার দুপুরে কুলচান্দা গ্রামের এক বাসিন্দার মুখে এই আবেদন শুনে অবাক হলেও কাজে নামতে দেরি করেননি বর্ধমানের ভাতার থানার পুলিশকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও ‘চাইল্ড লাইন’-এর হস্তক্ষেপে বিয়ে আটকেছে নাবালিকার।
মেয়ের বয়স বছর পনেরো। বাবা প্রান্তিক কৃষক। এই বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়ায় স্বামীর আপত্তি ছিল, মেয়েও নারাজ— সে কথা ভালই জানতেন নাবালিকার মা। কিন্তু ‘ভাল ছেলে’ হাতছাড়া করতে রাজি ছিলেন না। তাই এক শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে যাওয়ার নাম করে মেয়েকে নিয়ে পাত্রের বাড়িতে যান তিনি। পাত্রপক্ষের সাহায্যে মেয়ের বিয়ের তোড়জোরও করে ফেলেন। লোকের মুখে সে খবর পেয়ে বাদ সাধেন তাঁর স্বামী। তিনি ছুটে যান থানায়। ভদ্রলোক বলেন, ‘‘স্ত্রী-ই জোর করছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় বিয়ের ঠিকও করে ফেলেছিলেন। কোনও মতে খবর পেয়ে মেয়েটাকে বাঁচাতে পারলাম!’’ ভাতার থানার ওসি পুলক মণ্ডল বলেন, ‘‘মেয়েটির বাবা সব ঘটনা জানাতেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’
থানা থেকে ‘চাইল্ড লাইন’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। চাইল্ড লাইনের আধিকারিক অভিষেক বিশ্বাস কুড়মুন ফাঁড়ির পুলিশকে নিয়ে হাজির হন পাত্রের বাড়ি, বর্ধমানের পারুই গ্রামে। অভিষেকবাবুর দাবি, ‘‘মেয়েটির মা নানা অজুহাত দিচ্ছিলেন। কিন্তু আমরা চেপে ধরি।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, এই টানাপড়েন যখন চলছে, বছর বাইশের পাত্র দাঁড়িয়েছিলেন বাড়ির উঠোনে। পুলিশকর্মীদের কাছে তিনি লাগাতার দাবি করতে থাকেন, বিয়ে এখন হচ্ছে না। শুধু কথাবার্তা চলছিল। শেষ পর্যন্ত ১৮ বছর বয়সের আগে ওই নাবালিকার বিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকা দেন তার মা। পাত্রপক্ষ অবশ্য তার আগেই রণে ভঙ্গ দিয়েছে। কিশোরীর মা বলেন, ‘‘আমরা গরিব। মেয়ের জন্য বড় চাষি পরিবারের ছেলের সম্বন্ধ পেয়ে হাতছা়ড়া করতে চাইনি। মেয়ের ভাল ভেবেই এতটা এগিয়ে ছিলাম।’’
নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী জানিয়েছে, সে-ও এগোতে চায়। সে জন্য আরও অনেক দূর পড়তে চায়।