E-Paper

রাজ্যে ফের ডেঙ্গির বলি দুই, নভেম্বর থেকে দেশের ২০টি কেন্দ্রে প্রতিষেধকের পরীক্ষা শুরু

ইতিমধ্যেই ভাঙড়-১ ও ২ ব্লকের বেশ কয়েক জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। স্থানীয়দের দাবি, কাটাডাঙা ছাড়াও মাঝেরাহাট, লাঙলবেঁকি, কাশীপুর, শোনপুর, জয়পুর গ্রামে প্রচুর মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:০৫
An image of Dengue

—প্রতীকী চিত্র।

ধীরে হলেও রাজ্যে একের পর এক ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হচ্ছে। সোমবারও রাজ্যে দু’জনের মারা যাওয়ার খবর মিলেছে। তাঁদের এক জন কলেজপড়ুয়া, অন্য জন গৃহবধূ। যদিও এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। বেসরকারি সূত্রের খবর, চলতি মরসুমে গত জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন ৩৩ জন।

অন্য দিকে, একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আইসিএমআর দেশ জুড়ে ডেঙ্গির প্রতিষেধকের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করছে। নভেম্বর থেকে তা শুরু হবে। এ রাজ্যে একমাত্র নাইসেডে হবে এই গবেষণা। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘প্রতিষেধক বেরোলে মানুষ উপকৃত হবেন। কিন্তু এখন তাঁদের সচেতন করতে হলে প্রকৃত পরিসংখ্যান জরুরি।’’

জানা যাচ্ছে, সোমবার রাতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ভাঙড়-২ ব্লকের কাটাডাঙা গ্রামের বাসিন্দা, বছর ৩৩-এর মানোয়ারা বিবির। গত ১৬ সেপ্টেম্বর জ্বর এবং অন্যান্য উপসর্গ থাকায় তাঁকে জিরেনগাছা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরদিন ওই গৃহবধূকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেন জিরেনগাছা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও পরিবারের লোকেরা তাঁকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রথমে সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মানোয়ারাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই মারা যান তিনি। ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি শক সিনড্রোম, বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যুর উল্লেখ রয়েছে।

ইতিমধ্যেই ভাঙড়-১ ও ২ ব্লকের বেশ কয়েক জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। স্থানীয়দের দাবি, কাটাডাঙা ছাড়াও মাঝেরাহাট, লাঙলবেঁকি, কাশীপুর, শোনপুর, জয়পুর গ্রামে প্রচুর মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। যদিও এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ব্লক প্রশাসন ও ভাঙড়ের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা।

অন্য দিকে, সোমবারই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক কলেজছাত্রীর। তাঁর নাম সুস্মিতা মণ্ডল (২১)। ওই রাতে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর রানাঘাটের তারাপুর লাগোয়া শান্তিপুরের পুলতা গ্রামের বাসিন্দা সুস্মিতা জ্বরে আক্রান্ত হন। ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁকে হবিবপুর যাদব দত্ত গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পরিবারের সদস্যেরা সুস্মিতাকে রানাঘাটের আঁইশতলার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করেন। সেখানে ডেঙ্গি পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। সোমবার দুপুর থেকে সুস্মিতার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরিবারের অভিযোগ, ওই দিন দুপুর ২টো নাগাদ নার্সিংহোমের চিকিৎসক অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ রোগীকে ছাড়তে পাঁচ ঘণ্টা সময় নেন।

রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে আটটা নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি হন সুস্মিতা। তখন থেকেই তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল বলে দাবি। রাতেই তাঁকে এইচডিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ মারা যান ওই ছাত্রী। সুস্মিতার আত্মীয় শুভেন্দু বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘নার্সিংহোমের অসহযোগিতার কারণেই সুস্মিতার মৃত্যু হয়েছে। ওকে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো দুপুরেই সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো বাঁচানো যেত।’’

অন্য দিকে, নভেম্বর থেকে দেশের ২০টি কেন্দ্রে ডেঙ্গির প্রতিষেধকের চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হবে। নাইসেডের অধিকর্তা শান্তা দত্ত জানান, প্রায় ১০ হাজার ৫০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের উপরে ওই প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হবে। তাঁদের এক বছর পর্যবেক্ষণে রেখে দেখা হবে, ডেঙ্গির অ্যান্টিবডি কাজ করছে কি না।

এর পাশাপাশি, ডেঙ্গি ঠেকাতে শহরের পুজো কমিটিগুলিকে নোটিস পাঠাল কলকাতা পুরসভা। মঙ্গলবার ১৬টি বরোর এগ্‌জিকিউটিভ হেল্‌থ অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানান, মণ্ডপ তৈরির বাঁশের উপরের অংশে যাতে জল না জমে, তার জন্য বাঁশের মুখগুলি বালি বা কাপড় দিয়ে বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর পেলেই স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের বাড়িতে যেতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dengue Death Dengue Dengue Fear West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy