E-Paper

লক্ষ্য মেরুকরণ, ১৯৪৬ নিয়ে ছবি বিবেকের

হিন্দুত্বের পালে হাওয়া তুলে যে আগামী বিধানসভা ভোট পার করতে চাইছে বিজেপি, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। এক দিকে মালদহ, মুর্শিদাবাদের ঘটনাকে নিজস্ব বিশ্লেষণ ও ভাষ্যে প্রচার করছে তারা, অন্য দিকে কাশ্মীরের পহেলগামের ঘটনার পর থেকেও ‘হিন্দুরা আক্রান্ত’ নিয়ে প্রচার কম হয়নি।

বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৫ ০৬:০৪
বিবেক অগ্নিহোত্রী।

বিবেক অগ্নিহোত্রী। —ফাইল চিত্র।

সামনের বছরই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। আর তার আগে প্রায় আশি বছরের পুরনো ঘটনা নিয়ে ছবি তৈরি করছেন বিজেপি ঘনিষ্ঠ চিত্র পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী।

হিন্দুত্বের পালে হাওয়া তুলে যে আগামী বিধানসভা ভোট পার করতে চাইছে বিজেপি, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। এক দিকে মালদহ, মুর্শিদাবাদের ঘটনাকে নিজস্ব বিশ্লেষণ ও ভাষ্যে প্রচার করছে তারা, অন্য দিকে কাশ্মীরের পহেলগামের ঘটনার পর থেকেও ‘হিন্দুরা আক্রান্ত’ নিয়ে প্রচার কম হয়নি। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে সেই প্রচারে যোগ করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী আবেগ।

এর মধ্যে রুপোলি পর্দায় আসতে চলেছে ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার রক্তাক্ত ইতিহাসের আবহে তৈরি একটি ছবি। ‘কাশ্মীর ফাইলস’, ‘কেরল স্টোরি’র পরে পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী বাংলার পটভূমিকায় তৈরি করেছেন ছবিটি। প্রাথমিক ভাবে তার নামকরণ হয়েছে, ‘দ্য দিল্লি ফাইলস: বেঙ্গল চ্যাপ্টার’। যদিও জনপ্রিয় করে তুলতে নামকরণে কিছু বদল আনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিচালক। যে ছবির কথা জানতে পেরে বিজেপি বিরোধীরা প্রায় সকলেই বলছেন, বিভাজনের চেষ্টায় আশি বছরের পুরনো ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন এত পুরনো ঘটনার প্রাসঙ্গিকতাই বা কী?

পরিচালকের অবশ্য দাবি, চার বছরের নিবিড় গবেষণার ফল এই ছবি। ১৯৪৬-এর সাক্ষী অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, বাংলা, দিল্লিতে বসবাসকারী যে গুটিকয়েক মানুষ আছেন, তাঁদের বক্তব্য, একশোর বেশি বই, অন্তত এক হাজার প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে তৈরি হয়েছে ছবিটি। মিঠুন চক্রবর্তী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অনুপম খের রয়েছেন ছবিতে। ওই সময়ে কলকাতার অন্যতম উল্লেখযোগ্য চরিত্র গোপাল মুখোপাধ্যায়ের (পাঁঠা) চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌরভ দাস। মুর্শিদাবাদ-সহ বাংলার বেশ কয়েকটি জায়গায় আউটডোর শুটিং হলেও পরিচালকের অভিযোগ, বাংলায় তিনি কোনও স্টুডিয়োয় শুটিং করার অনুমতি পাননি। তাঁকে মুম্বইয়ে স্টুডিয়ো ভাড়া করে শুটিং করতে হয়েছে।

এখন কেন ১৯৪৬ সালের ঘটনাকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে হচ্ছে? রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, এর মাধ্যমে মেরুকরণকে পোক্ত করতে চাইবে বিজেপি। হিন্দুদের মধ্যে অতীতের আতঙ্কের স্মৃতিকে উস্কে দিয়ে ভোট গোছানোর কাজটাও সেরে ফেলতে চাইবে তারা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতা এবং সেখানে সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণের আবহে এই ছবি পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালিদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবেই বলেই আশা বিজেপির।

পরিচালক বিবেকের দাবি, “বাংলা যে রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিল, তার কারণ কী ছিল? সাম্প্রদায়িক সমস্যার কি সম্পূর্ণ সমাধান হয়েছে? পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা কাশ্মীরের মতো।” তাঁর অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগেও আমার ‘কাশ্মীর ফাইলস’ চালাতে দেননি। তা-ও মানুষ দেখেছেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমার অধিকার ছবি তৈরি করা। ওঁর মনে অপরাধ না থাকলে উনি বাধা দেবেন না।’’

বিষয়বস্তু নিয়ে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “১৯৪৬ সালের বাংলার ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার কাজ সুশীল সমাজের। এটা ভাল কাজ। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান অবস্থা যে ১৯৪৬ সালের মতো জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, এই সত্য অস্বীকার করার জায়গা নেই।”

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, “যাঁরা বর্তমানে উন্নয়নের মধ্যে নেই, তাঁরা বিকৃত অতীত তুলে ধরে বিষ ছড়ানোর চেষ্টা করবেন। এটা ছবি নয়, নির্বাচনের আগে বিকৃত প্রচার।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায় “সামাজিক পরিস্থিতির ব্যাপার নয়, নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক প্রচারকে সামনে রেখে বিভাজনকে পোক্ত করার চেষ্টা। পরিচালকের নামেই বোঝা যাচ্ছে কী উদ্দেশ্যে এই ছবি তৈরি হচ্ছে!”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Vivek Agnihotri Film Director BJP West Bengal Assembly Election

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy