আগুন নেভার পরে জেসপ কারখানায় দমকলকর্মীরা। মঙ্গলবার। — শৌভিক দে
জেসপ কারখানায় আগুন লাগার পরে সোমবার রাতেই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দমদমের ওই কারখানায় বার বার আগুন লাগার তদন্ত শুরু করল সিআইডি। পাশাপাশি তদন্ত চালানো হবে ওই কারখানায় চুরির ঘটনারও। মঙ্গলবার থেকেই ওই তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন ভবানী ভবনের তদন্তকারীরা। এ দিকে, একই সঙ্গে ডানলপের সাহাপুর কারখানা থেকে মাল চুরির ঘটনার তদন্তভারও তুলে দেওয়া হয়েছে সিআইডির হাতে।
এই কারখানাগুলির মালিক পবন রুইয়া। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সোমবার আগুন লাগার ঘটনায় মঙ্গলবার তাঁর বিরুদ্ধেই দমদম থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে জেসপ কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হচ্ছে, গত ফেব্রুয়ারিতে এই কারখানা অধিগ্রহণের বিল বিধানসভায় পাশ হওয়ার পরে সরকার শ্রমিকদের বেতন (মাসে ১০ হাজার টাকা) দিচ্ছে। তাই এখন কারখানার কোনও ব্যাপারেই রুইয়াদের কোনও ‘দায়’ নেই।
মঙ্গলবার ভবানী ভবনে সিআইডি-র ডিআইজি ভরতলাল মিনা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে ওই কারখানায় একাধিকবার আগুন লেগেছে। এর পিছনে কী কারণ রয়েছে, তা খুঁজতেই তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। এ ছাড়া, দমদমের ওই কারখানা এবং ডানলপে ওই একই গোষ্ঠীর আরেকটি বন্ধ কারখানা থেকে পর পর চুরির ঘটনা ঘটছিল। দু’টি ঘটনারই তদন্ত করবে সিআইডি।
সিআইডি সূত্রে খবর, সোমবার সন্ধ্যায় জেসপ কারখানায় লাগা আগুন নিভতে রাত হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে যান দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় ও এলাকার বিধায়ক ব্রাত্য বসু। দমকলের ১৪টি ইঞ্জিন মাঝরাতে আগুন নেভায়। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে তিন বার আগুন লাগল ওই বন্ধ কারখানায়। এলাকাবাসী থেকে শুরু করে কারখানার শ্রমিকেরা চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন। কারখানার গেট-সহ এলাকায় নিরাপত্তারক্ষী মোতায়ন থাকা সত্ত্বেও বারবার আগুন লাগার পিছনে অন্তর্ঘাত রয়েছে বলে অভিযোগ। সেই ভিত্তিতেই মঙ্গলবার সকালে দমকল দমদম থানায় অভিযোগ দায়ের করে। সিআইডি সেই অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে বলে ভবানী ভবন সূত্রে খবর। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে সিআইডি-র এক তদন্তকারী জানান, কার গাফিলতিতে বার বার ওই কারখানায় আগুন লাগছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ দিকে দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানার ভিতরে কোনও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, তাই শর্ট সার্কিটের প্রশ্নই আসছে না। যে বিরাট গুদামে আগুন লেগেছে, সেটির কড়িবরগা ও জানলার ফ্রেম যে ভাবে পুড়েছে তাতে প্রথমেই মনে হচ্ছে আগুন লাগানো হয়েছে। পুজোর পর থেকে তিন বার কারখানায় আগুন লাগলেও মালিক পক্ষের তাতে হেলদোল না থাকায় স্বভাবতই উঠছে প্রশ্ন। এ ছাড়া, কেন দিনের পর দিন মালপত্র চুরি হলেও কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দায়ের করছেন না বা পুলিশ জেসপের মাল বোঝাই গাড়ি আটক করলেও মালিকপক্ষ তা ছাড়াতে আসেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে পুলিশের অন্দরেই।
সরকারি সূত্রে খবর, জেসপ কোম্পানি অধিগ্রহণের জন্য বিধানসভায় বিল পাশ হলেও কেন্দ্র থেকে এখনও সম্মতি আসেনি। নবান্নের শীর্ষমহল এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাদের মতে সরকার হাতে পেলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সহজ হয়। যদিও সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এখন তো রাজ্য সরকারই এই সংস্থার দেখাশোনা করছে। তা সত্ত্বেও জেসপ কারখানা থেকে যন্ত্রপাতি চুরি হচ্ছে কেন? কেন বার বার আগুন লাগছে? সর্ষের মধ্যেই ভূত নেই তো?’’
সাম্প্রতিক কালে দমদমের জেসপ কারখানায় প্রথম আগুন লাগে ১০ অক্টোবর। ওই দিন একই সঙ্গে কারখানার তিনটি জায়গায় আগুন দেখা যায়। দ্বিতীয় বার, তিন দিন পরে ১৩ অক্টোবর। এর পরে ফের সোমবার আগুন লাগে। এ ছাড়া, সম্প্রতি বেশ ক’টি চুরির ঘটনা নজরে এলে পুলিশই নিজে থেকে অভিযোগ দায়ের করে। তার ভিত্তিতে কিছু দিন আগেই দমদম থানায় যায় সিআইডি। মঙ্গলবার সিআইডি-র ডিআইজি জানান, কিছু দিন আগেই আইজি সিআইডি-র নেতৃত্বে একটি দল ওই কারখানা পরিদর্শনে যান। এর পরেই ঠিক হয় ওই চুরির তদন্তও করবে সিআইডি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy