E-Paper

‘হয় আপনি চোর, না হয় অপদার্থ, আপনার ভুলেই এত মানুষের প্রাণ গেল!’ ববির ভর্ৎসনা ইঞ্জিনিয়ারকে

পুরসভার বিল্ডিং দফতরের সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারকে বৈঠকে ডেকে মেয়রকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনারা বিকিয়ে গিয়েছেন। বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে কাউকে রেওয়াত করা হবে না।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩৮
firhard hakim

ফিরহাদ হাকিম। — ফাইল চিত্র।

‘‘হয় আপনি চোর, না হয় অপদার্থ। আপনার ভুলের জন্যই এতগুলো মানুষের প্রাণ গেল...’’ — রাখঢাক না করে কলকাতার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে দাঁড় করিয়ে ভর্ৎসনা করলেন মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিম। বুধবার, পুরভবনে।

এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। পুরসভার বিল্ডিং দফতরের সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারকে এ দিন বৈঠকে ডেকে মেয়রকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনারা বিকিয়ে গিয়েছেন। বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে কাউকে রেওয়াত করা হবে না।’’ দরকারে ডিজি (বিল্ডিং)-এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের কথাও বলেন ববি।

বেআইনি নির্মাণ, তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া বহুতলের নীচে চাপা পড়ে দশ জনের মৃত্যু — এ সবের দায় রাজনৈতিক নেতাদের নয়। সমস্ত দায়ই পুরসভার অফিসারদের। গার্ডেনরিচের ঘটনার পরে প্রথম থেকেই ববিকে এ ভাবেই দায় ঝেড়ে ফেলতে শোনা গিয়েছিল। যার খানিকটা প্রতিবাদ করে পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেছিলেন, সব দায় এ ভাবে এড়িয়ে যেতে পারে না পুরসভার রাজনৈতিক প্রশাসকেরা। কিন্তু, ববি যে তাঁর জায়গায় অনড়, তা বুধবারের বৈঠকে আবারও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

মেয়রের আচরণে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিল্ডিং দফতরের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘বেআইনি নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিরাই নাক গলান। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের কিছু করার থাকে না। অথচ বৈঠকে বেআইনি নির্মাণের জন্য মেয়র শুধু আমাদেরই আক্রমণ করে গেলেন।’’

গার্ডেনরিচের ঘটনার পরে তিন দিন কেটে গেলেও এখনও উদ্ধারকাজ শেষ হয়নি। শেরু নামে স্থানীয় তৃণমূল নেতা এখনও নিখোঁজ বলে স্থানীয়দের দাবি। তাঁর খোঁজে এ দিন সকাল থেকে দফায় দফায় উদ্ধারকাজ চালায় পুরসভা এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। তবে বৃষ্টিতে তা ব্যাহত হয়। বড় আর্থ-মুভার নিয়ে যাওয়া হলেও তা দিয়ে ধ্বংসাবশেষ সরানো শুরু করা যায়নি। আশপাশের বড় বড় বহুতলের ক্ষতির আশঙ্কায় ভরসা রাখতে হয়েছে ছোট ছোট যন্ত্রেই। রাস্তা সরু হওয়ায় ধ্বংসাবশেষ সরাতেও বেগ হচ্ছে। এ দিন ঘটনাস্থলে যান পুর-কমিশনার ধবল জৈন। তবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

লালবাজার সূত্রে খবর, এ দিনই গার্ডেনরিচ এবং মেটিয়াবুরুজ থানার দুই ওসির সঙ্গে বৈঠক করেন কলকাতা পুলিশের নগরপাল। ছিলেন বন্দরের ডেপুটি কমিশনারও। হোমিসাইড শাখা ইতিমধ্যেই গার্ডেনরিচ থানার থেকে ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে।

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, নির্মীয়মাণ বহুতলটি যে জমিতে তৈরি হয়েছিল, তা দু’টি প্লটে বিভক্ত। তিন জন মালিক। একটি প্লটের মালিক মহম্মদ সরফরাজকে গ্রেফতার করা হয়েছিল মঙ্গলবার। এ দিন আলিপুর কোর্টে তার আরও ১৩ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়। লালবাজার বুধবার জানিয়েছে, বাকি দুই মালিকের খোঁজ চলছে। অভিযোগ, এর মধ্যে এক মালিকের চাপেই নীচের তিনতলা বাদ দিয়ে পঞ্চম তলায় ইটের গাঁথনি শুরু হয়েছিল। পুলিশের অনুমান, ওই ভার সহ্য করতে না পেরেই বহুতলটি ভেঙে পড়ে রবিবার রাতে।

এসএসকেএম হাসপাতাল এবং গার্ডেনরিচের বেসরকারি হাসপাতালে আহতদের কয়েক জনের সঙ্গে এ দিন তদন্তকারীরা কথা বলেন। তদন্তে কলকাতা পুরসভার কর্তাদেরও ডাকা হতে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বিকেলে পুরসভার অধিবেশন কক্ষে বিল্ডিং দফতরের সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে প্রায় আধ ঘণ্টার বৈঠকে মেয়রের নির্দেশ, “বেআইনি নির্মাণ খুঁজতে এলাকায় ঘুরুন।” ইঞ্জিনিয়ারেরা ঠিক মতো এলাকা পরিদর্শন করছেন কি না, তা জানতে পুরসভা শীঘ্রই অ্যাপ চালু করবে বলে জানা গিয়েছে। এ দিন মেয়রকে বলতে শোনা যায়, “কোনও বেআইনি নির্মাণ বা অবৈধ কাজে কোনও নেতা, জনপ্রতিনিধি বাধা দিলে তাঁদেরকে বলুন, আপনি লিখিত দিন।” এক ইঞ্জিনিয়ারের প্রশ্ন, “কোনও নেতাকে আমি কি লেখার কথা বলতে পারব? না কি উনি লিখে দেবেন?” জানা গিয়েছে, গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে ইতিমধ্যেই শোকজ়ের মুখে পড়া পুর কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Garden Reach Building Collapse KMC TMC Garden Reach

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy