এখনও ডুবে কীর্ণাহার-মিরাটি সড়ক। বিপজ্জনক ভাবে চলছে পারাপার। পরোটা গ্রামের কাছে ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের যে সব এলাকা প্লাবিত হয়েছিল, সেগুলির পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হচ্ছে বলে জানালেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
টানা বৃষ্টির জেরে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলমগ্ল হয়ে রয়েছে। নদীর জলস্তরও বিপদসীমার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু ওই সমস্ত জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন না রাজ্যের সেচ কর্তারা। সোমবার সেচমন্ত্রী বলেন, ‘‘বন্যা ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। ওটা আমাদের কাজ নয়। তবে ওই দু’টি জেলার কয়েকটি ব্লক জলমগ্ল হয়ে পড়লেও বন্যা হয়নি। পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে।’’
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে সেচমন্ত্রী দাবি করেন, ‘‘তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টি হয়েছে। তাতে পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়েছিল। কিন্তু তৎপরতার সঙ্গে তার মোকাবিলা করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিন যদি বৃষ্টিপাত কম হয় তবে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে।’’ মন্ত্রীর দাবি, বৃষ্টির ফলে রাজ্যের কোন জেলায় কী পরিস্থিতি তা জানতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনও লন্ডন থেকে এসএমএস করে খবর নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী যে টাস্ক ফোর্স তৈরি করে দিয়েছেন সেটিও সেচ-সহ অন্যান্য দফতরের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে কাজ করছে।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, ২২ জুলাই পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণবঙ্গে গড়ে ৫০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। মুর্শিদাবাদে ৪৭ শতাংশ, বর্ধমানে ৭০ , বীরভূমে ৫৭, হাওড়ায় ৪৫ ও নদিয়ায় ৪৯ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাতে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা। মুর্শিদাবাদে নবগ্রাম, খড়গ্রাম, কান্দি ও বীরভুমের মহম্মদবাজার, লাভপুর, ময়ূরেশ্বর ১ ও ২, সাঁইথিয়া এবং সিউড়ি ২ ব্লক প্লাবিত হয়েছে।
সেচমন্ত্রী জানান, এখনও বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের বাবলা, কুঁয়ে ও দ্বারকার জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। পরিস্থিতি সামলাতে এই প্রথম দ্বারকা ও কুঁয়ে নদীর উপরে জঙ্গিপুর ব্যারাজ খুলে দেওয়া হয়েছে। এক সেচকর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘এর ফলে ভাগীরথীর বাড়তি জল পদ্মায় পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। তাতে বীরভূম-মুর্শিদাবাদ বাঁচবে।’’ মুর্শিদাবাদকে বাঁচানোর জন্য বাবলা নদীর মুখে ড্রেজিংও শুরু করেছে সেচ দফতর।
বীরভূমে লাভপুরে লাঘাটা রাস্তা দিয়ে এখনও প্রবল বেগে জল বইছে। দু’টি নৌকার ব্যবস্থা রাখা হলেও প্রবল স্রোতের কারণে সেগুলি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। হিংলো জলাধারে অবশ্য বিপদসীমার নীচে রয়েছে জল, তাই নতুন করে জল ছাড়তে হয়নি। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে শাল-হিংলো কজওয়েও চালু রয়েছে। অন্তত ১০১টি পঞ্চায়েতের ১৯,৮৯৩ হেক্টর জমির ধান ডুবেছে। বীজতলা ডুবেছে ৪,৯৯৬ হেক্টর। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৩ কোটিরও বেশি টাকার ধান এবং বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত। মুর্শিদাবাদে তিন দিন জলবন্দি বড়ঞার দশ হাজারেরও বেশি পরিবার। এ দিন বাবলা নদীর বাঁধ ভেঙে বহরমপুর ব্লকের সাটুই-সহ বেশ কিছু এলাকাও প্লাবিত হয়। ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়ে স্কুলগুলোতে। পাকা সড়ক দিয়েই চলছে নৌকা। ২৫টি গ্রামের চার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। সাধারণ নৌকার সঙ্গে সিভিল ডিফেন্সের বোট নেমেছে।
সেচমন্ত্রীর বক্তব্য, দিল্লির মৌসম ভবন থেকে আগাম বার্তায় জানানো হয়েছিল এ বার ভারী বর্ষণ হবে না। কিন্তু পরিস্থিতি উল্টে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন নদী ও বাঁধে নজরদারি চালিয়ে, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। সেচ দফতর সূত্রের খবর, এ দিন ডিভিসি সিস্টেম থেকে ২৫ হাজার কিউসেক, মশানজোড় থেকে ১১০০ কিউসেক, কংসাবতী থেকে ৫ হাজার কিউসেক এবং ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে ২৪ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে।
রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু নবান্নে বলেন, ‘‘আবহাওয়া দফতর বলছে, ২৯ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা। গত দু’তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে প্রায় এক লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান-বীজ নষ্ট হয়েছে। আরও বৃষ্টি হলে বেশি ক্ষতি হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy