Advertisement
E-Paper

দূষণে গাছই অস্ত্র ঝাড়খণ্ডে, শেখেনি বাংলা

টাকার গাছ না। গাছেই টাকা! যে-সংস্থা যত বেশি গাছ লাগিয়েছে, তারা সরকারের কাছ থেকে তত বেশি টাকা পুরস্কার পাবে। শুক্রবার, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। উদ্দেশ্য একটাই— পরিবেশ বাঁচানো। রাজ্যকে আরও সবুজ করে তোলা। রঘুবীরের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অনেক পরিবেশকর্মী বলছেন, পড়শি রাজ্য তো তবু কিছুটা হলেও চেষ্টা করছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ?

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৫ ০৩:৩৭
গাড়ি থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ। শুক্রবার কলকাতায়।—নিজস্ব চিত্র।

গাড়ি থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ। শুক্রবার কলকাতায়।—নিজস্ব চিত্র।

টাকার গাছ না। গাছেই টাকা!

যে-সংস্থা যত বেশি গাছ লাগিয়েছে, তারা সরকারের কাছ থেকে তত বেশি টাকা পুরস্কার পাবে। শুক্রবার, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। উদ্দেশ্য একটাই— পরিবেশ বাঁচানো। রাজ্যকে আরও সবুজ করে তোলা। রঘুবীরের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অনেক পরিবেশকর্মী বলছেন, পড়শি রাজ্য তো তবু কিছুটা হলেও চেষ্টা করছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ?

এ দিন শ্যামবাজার, ধর্মতলা, হাজরা, গড়িয়াহাট-সহ কলকাতার কয়েকটি মোড়ে তৃষ্ণার্ত পথচারীদের ওআরএস মেশানো জল খাওয়ানো হয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উদ্যোগে। পর্ষদের তিনটি ভ্যান ঘুরে ঘুরে এই কাজ করেছে। যা দেখেশুনে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের মন্তব্য, ‘‘এটা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, নাকি জলসত্র পর্ষদ! রাজ্যবাসীর একটা বড় অংশ তো বছরভর অপরিশোধিত জল পান করেন। সেখানে এক দিন ওআরএস-জল খাইয়ে কী হবে!’’

ওই পর্ষদের তীব্র সমালোচনা করেছেন পরিবেশকর্মী নব দত্তও। তাঁর বক্তব্য, পর্ষদ এক দিকে এমন দিনে সাধারণ মানুষকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হতে আহ্বান জানাবে। অথচ কিছু মানুষ সচেতন হয়ে গাছ কাটা, পুকুর বোজানোর মতো পরিবেশ-বিধ্বংসী কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে মার খেলে পর্ষদ তার পাশে দাঁড়াবে না। এটা কেমন কথা? তাঁর কথায়, ‘‘পর্ষদের মুখস্থ বুলি, ‘আমাদের এক্তিয়ার নেই।’ তা, আমাদের প্রশ্ন, পর্ষদের এক্তিয়ার কি শুধু ওআরএস-জল খাওয়ানো?’’

পরিবেশ দিবসে ঘটা করে কলকাতার ১১টি মোড়ে বায়ুদূষণের তথ্য জানানোর ‘ডিসপ্লে বোর্ড’ বসানোর কথাও ঘোষণা করেছেন পর্ষদ এবং রাজ্যের পরিবেশ দফতরের কর্তারা। অথচ পর্ষদ সূত্রেই জানা গেল, এ দিন শহরে পর্ষদের মোট ১০টি বায়ুদূষণ পরিমাপক যন্ত্রের মধ্যে কাজ করেছে মাত্র একটি। যদিও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের দাবি, যন্ত্রগুলির মধ্যে দু’টি (ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে) ২৪X৭ কাজ করে। বাকিগুলি সপ্তাহে দু’দিন তথ্য দেয়।

পশ্চিমবঙ্গে যখন এমন চাপান-উতোর, তখন তুলনায় পিছিয়ে থাকা রাজ্য ঝাড়খণ্ডের সরকারও দূষণ কমানোর জন্য বৃক্ষরোপণে উৎসাহ দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর এ দিন বন দফতরের এক অনুষ্ঠানে জানান, চারা গাছ রোপণের ক্ষেত্রে শুধু সংস্থাগুলিকে নয়, ব্যক্তিগত প্রয়াসকেও পুরস্কৃত করা হবে। কেউ যদি নিজের জমিতে গাছ লাগান, সেই খরচের ৫০ শতাংশ দেবে সরকার। এমনকী গাছ লাগানোর এই প্রতিযোগিতায় সামিল করা হয়েছে স্কুলগুলিকে।

কিন্তু কী করছে বাংলা? রাজ্যের পরিবেশ ও বন দফতরের সচিব চন্দন সিংহ জানান, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও বন দফতর যৌথ ভাবে বাঁকুড়া, বর্ধমান, পুরুলিয়ায় বনসৃজন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষও এ দিন পরিবেশ সুরক্ষায় এক গুচ্ছ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। বন্দরের চেয়ারম্যান রাজপাল সিংহ কাহালোঁ এ দিন নেতাজি সুভাষ ডকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে যোগ দেন। শু‌ধু এই সব উদ্যোগে
কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে পরিবেশকর্মীরা যথেষ্ট সংশয়ে আছেন। বিশেষ করে যেখানে দূষণের নিরিখে কলকাতা এবং বেশ কয়েকটি জেলা শহর দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের নিরিখে কলকাতা ভারতের মহানগরগুলির মধ্যে দ্বিতীয়।

এ বার গরমে নাকাল শহরবাসী। অথচ হাওয়া অফিসের থার্মোমিটার বলছে, পারদ সে-ভাবে চড়েনি। তা হলে এত গরম লাগছে কেন?

পরিবেশবিদদের ব্যাখ্যা, দূষণ বাড়ার ফলে তুলনামূলক কম তাপমাত্রাতেও বেশি গরম লাগছে। তাঁদের বক্তব্য, বাতাসে কার্বন কণা যত বাড়বে, ততই বাড়তে থাকবে গরমের প্রকোপ। কারণ, কার্বন কণা তাপ ধরে রাখে। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘বিভিন্ন পরিবেশ বিধি কী ভাবে রূপায়ণ করা যেতে পারে, আমরা তার নিয়মাবলি তৈরি করে দিতে পারি। কিন্তু সেটা বলবৎ করতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকেই।’’

এ-সব কথা আসলে সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়ার ছল বলে অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের। পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পর্ষদ আইন রূপায়ণে ভূমিকা নেবে না, এটা কী করে হয়! আইনের কার্যকারিতার অভাবেই ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ।’’

Aryabhatta Khan kuntak chatterjee Ranchi Jharkhand tree pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy