Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
WB Panchayat Election 2023

কোর্টের নির্দেশ মতো কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘হিসাব’ মিলছে না, শাহি মন্ত্রককে আবার চিঠি দিল কমিশন

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মতো পঞ্চায়েত ভোটের জন্য কেন্দ্রের কাছে দু’বার মিলিয়ে মোট ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছে কমিশন। এখনও পর্যন্ত অর্ধেক বাহিনীও রাজ্যে এসে পৌঁছয়নি।

West Bengal State Election Commission.

বকেয়া কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে আবার চিঠি দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩ ২৩:৪৬
Share: Save:

২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছচ্ছে জেলায় জেলায়। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মতো রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আবেদনের ভিত্তিতে আরও ৩১৫ কোম্পানি বাহিনী পাঠানোর কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই বাহিনীও আসতে শুরু করেছে। কিন্তু বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী নিয়ে কেন্দ্রের তরফে কোনও উত্তর না মেলায় ‘টানাপড়েনের’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই বাহিনী কবে আসবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে বকেয়া বাহিনী চেয়ে রবিবারও অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছে কমিশন।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কমিশনের প্রথমে চাওয়া ২২ কোম্পানি মোতায়েন নিয়ে সমস্যা নেই। কারণ, জেলা পিছু একটি করে কোম্পানি মোতায়েন করার পরিকল্পনা হয়েছিল। সমস্যা তৈরি হয়েছে পরবর্তী ৩১৫ কোম্পানি নিয়ে। সেই বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনাও এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্র বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী পাঠালে গোটা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ করা হবে। সেই কারণেই বকেয়া বাহিনী চেয়ে আবারও কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়া হল। কেন্দ্রের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, বাহিনী কোথায় কত পাঠানো হবে, তা নিয়ে কমিশন এখনও স্পষ্ট ভাবে কিছু জানায়নি। এ দিকে আবার প্রতি বুথে চার জন করে জওয়ান মোতায়েনের দাবি জানিয়ে কমিশনকে চিঠি লিখেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। এই সব নিয়ে বিস্তর জল্পনার মধ্যে রবিবার রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ। রাজভবন সূত্রে খবর, বৈঠকে রাজীবকে নিরপেক্ষ ভাবে ভোট পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস।

অন্য দিকে, সোমবার থেকে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে নামছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যে ভাল ফল করলেও, উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে তৃণমূলের ফল আশানুরূপ হয়নি। তাই লোকসভা ভোটের ঠিক এক বছর আগে কোচবিহারকে ‘পাখির চোখ’ করে সেখান থেকেই মমতা প্রচারযাত্রা শুরু করছেন বলে অনেকে মনে করছেন। ঘটনাচক্রে, এই একই সময় উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শুধু তৃণমূলনেত্রী মমতাই নন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও মঙ্গলবার থেকে ভোটের প্রচারে নামছেন। ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে বেরিয়ে দু’মাসের কাছাকাছি সময় ধরে প্রায় সব জেলাই ঘুরেছেন অভিষেক। মনোনয়ন পর্বের মধ্যেই তাঁর সেই কর্মসূচি শেষ হয়েছে। এ বার নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থেকে প্রচারে নামছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

পঞ্চায়েত ভোট যত এগোচ্ছে, রাজনৈতিক উত্তাপও বাড়ছে রাজ্য জুড়ে। মনোনয়ন পর্ব শুরু হওয়ার পরেই বার বার অশান্তির কারণে শিরোনামে উঠে এসেছিল মুর্শিদাবাদের রানিনগর। কখনও তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষ, কখনও আবার বিস্ফোরক উদ্ধার এবং বোমাবাজির মতো ঘটনা ঘটেছে সেখানে। মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও উত্তেজনা থামার নাম নেই রানিনগরে। রবিবারও সেখানে এক কংগ্রেস কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শাসকদল অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

লাল বোমা বানানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে রবিবার উত্তেজনা ছড়িয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি-২ ব্লকের চালতি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। এই ঘটনায় দু’জন গ্রেফতারও হন। এ নিয়ে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপি। উল্টো দিকে, এর পিছনে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছে শাসকদল।

শাহি মন্ত্রককে চিঠি কমিশনের

বকেয়া কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে আবার চিঠি দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রে খবর, বাকি ৪৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে রবিবার আবার চিঠি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রকে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মতো পঞ্চায়েত ভোটের জন্য কেন্দ্রের কাছে দু’বার মিলিয়ে মোট ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছে কমিশন। এখনও পর্যন্ত অর্ধেক বাহিনীও রাজ্যে এসে পৌঁছয়নি। এই অবস্থায় কেন্দ্রের কাছে আবার বাহিনী চাইল কমিশন। পঞ্চায়েত ভোটে আদালতের নির্দেশ মতো প্রথমে ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চায় নির্বাচন কমিশন। হাই কোর্টের ভর্ৎসনা এবং পুনরায় নির্দেশের পর কেন্দ্রের কাছে আরও ৮০০ কোম্পানি বাহিনীর চেয়ে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের আবেদন মতো প্রথম ২২ কোম্পানি বাহিনী পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ওই বাহিনী ইতিমধ্যে রাজ্যে এসে পৌঁছে গিয়েছে। জেলায় জেলায় তারা রুটমার্চ শুরু করে দিয়েছে। পরে কেন্দ্রের তরফে ৮০০ কোম্পানির মধ্যে ৩১৫ কোম্পানি বাহিনী বরাদ্দ করা হয়। ওই বাহিনীও রাজ্যে আসতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশনের দাবি, এখনও পর্যন্ত ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনী দিয়েছে কেন্দ্র। বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী নিয়ে তাদের স্পষ্ট অবস্থান জানা যায়নি। ফলে কোথায়, কত বাহিনী মোতায়েন করা হবে সেই কাজ সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না। যদিও কেন্দ্রের একটি সূত্রের দাবি, বাহিনীর ব্যবহার নিয়ে কমিশনের পরিকল্পনা স্পষ্ট নয়। কোন এলাকায় কত বাহিনী ব্যবহার করা হবে তারা তা জানায়নি।

রাজভবনে রাজীব

রাজীবের যোগদান রিপোর্টে সই না করেই তা রাজ্য সরকারকে ফেরত দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস। তা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রবিবার রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে আসেন কমিশনার। প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক হয় দু’জনের মধ্যে। রাজভবন সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের। এখনও পর্যন্ত ভোটের জন্য কী কী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, রাজ্যপালকে তা জানান রাজীব। বৈঠকে রাজ্যপাল পরামর্শ দেন, ‘‘আপনি স্বাধীন ভাবে কাজ করুন। ভোটে অশান্তি কোনও ভাবেই যেন বরদাস্ত না করা হয়। শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে সমস্ত পদক্ষেপ করতে হবে। কমিশনের যেন নিরপেক্ষ ভূমিকা থাকে।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যাতে সঠিক ভাবে কাজে লাগানো হয়, সে ব্যাপারেও রাজীবকে বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল। স্পর্শকাতর বুথে বাড়তি নজর দেওয়ার কথাও বলেছেন রাজ্যপাল বোস। মনোনয়ন-পর্বে অশান্তির আবহে রাজভবনে ‘পিস রুম’ খোলা হয়েছিল। সেখানে যে সব অভিযোগ পেয়েছে রাজভবন, সেই অভিযোগ নিয়ে রাজীবের সঙ্গে কথা হয় রাজ্যপালের। রাজীবের যোগদান রিপোর্ট প্রত্যাহার করেছিলেন রাজ্যপাল। সেই নিয়ে টানাপড়েন চলেছিল। এই নিয়েও দু’জনের মধ্যে কথা হয় বলে রাজভবন সূত্রে খবর।

প্রতি বুথে চার জওয়ান

কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোটের দাবি আগেই জানিয়েছিল সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। রবিবার আরও এক কদম এগিয়ে ভোটের দিন প্রতি বুথে চার জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখার দাবি জানাল তারা। নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে দু’পাতার একটি স্মারকলিপিও তুলে দেওয়া হয়। সুষ্ঠু ভাবে পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার জন্য মোট ১১ দফা দাবি জানানো হয়েছে তাতে। ভোটগ্রহণ তো বটেই, ভোট গণনার সময়েও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। একটি দাবিতে লেখা হয়েছে, গণনার সময় নিরাপত্তার বলয় তৈরি করতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে। গণনা কেন্দ্রগুলি সরাসরি লাইভ ভিডিয়ো কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা রাখারও দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়াও সব ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ওয়েব ক্যামেরা ও ওয়েবকাস্টিংয়ের ব্যবস্থা রাখার দাবিও জানানো হয়েছে।

প্রচারে মমতা-অভিষেক

কোচবিহার থেকে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার শুরু করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সোমবার কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভার চাঁদামারি প্রাণনাথ হাই স্কুলের ময়দানে তাঁর জনসভা করার কথা। পর দিন যাবেন জলপাইগুড়ি। মঙ্গলবার সেখানকার মালবাজারের ডামডিম এলাকায় তৃণমূলনেত্রীর সভা করার কথা বলে খবর দলীয় সূত্রে। অন্য দিকে, ২৭ জুন নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থেকে নিজের পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার সফর শুরু করবেন অভিষেক, তার পরের সভা মুর্শিদাবাদের ডোমকল। আগামী ৩০ জুন অভিষেকের সভা বীরভূম জেলায়। ওই দিনই পশ্চিম বর্ধমান জেলার বারাবনি বিধানসভায় আরও একটি সভা করবেন তিনি। জুলাই মাসের ১ তারিখে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার এবং দিনাজপুরে প্রথম দু’টি জনসভার কর্মসূচি রয়েছে অভিষেকের। জুলাই মাসের ৩ তারিখে পুরুলিয়া জেলায় একটি জনসভার পাশাপাশি বাঁকুড়ায় একটি রোড শোর কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। ৪ জুলাই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে জনসভা করবেন অভিষেক। আপাতত স্থির হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকে জনসভা করবেন তিনি। তমলুকে সভার পর পশ্চিম মেদিনীপুরে একটি রোড শো করার কথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের। ৮ জুলাই ভোটের কথা মাথায় রেখে নিজের শেষ কর্মসূচি ৫ জুলাই রেখেছেন অভিষেক। ওই দিন পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনায় জনসভার সঙ্গে পাণ্ডুয়াতে একটি রোড শো করার কথা তাঁর।

নিরাপত্তা পেলেন নওশাদ

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অবশেষে নিরাপত্তা পেলেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের একমাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। রবিবার বিকেলে তাঁর ফুরফুরা শরিফের বাড়িতে পৌঁছে গেল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। মঙ্গলবার নওশাদকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। সেই সাত জন সদস্যের মধ্যে পাঁচ জন সশস্ত্র জওয়ান মোতায়েন থাকবে তাঁর নিরাপত্তায়। শনিবার সন্ধ্যায় হুগলির ফুরফুরা শরিফের বাড়িতে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিকরা। তাঁরা ঘুরে দেখেন নওশাদের বাড়ি ও এলাকা। সূত্রের খবর, শীঘ্রই যে তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তাও জানিয়ে যান নওশাদকে। আর রবিবার বিকেলে ফুরফুরায় সাত জনের একটি কেন্দ্রীয় বাহিনীর দল পৌঁছায় নওশাদকে নিরাপত্তা দিতে। প্রথমেই নিরাপত্তারক্ষীরা বাড়িতে এলে একে একে তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হন নওশাদ। তারপর তাঁরা নওশাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব বুঝে নেন। আইএসএফের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে নওশাদের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটলে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র বিধায়ক। কিন্তু কোনও দিক থেকে কোনও সাড়া না পেলে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্ট তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নওশাদের জন্য সাতজন কেন্দ্রীয় জওয়ান মোতায়েন করল। নওশাদ বলেন, ‘‘রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে জানিয়েও কোনওরকম নিরাপত্তা না পাওয়ার কারনে মাননীয় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কলকাতা হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আমার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ব্যাপারে। সেই অনুযায়ী আজকে বেলা ৪টের সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সের (সিআইএসএফ) সাত জনের একটা টিম আমার বাড়িতে এসে পৌঁছয় এবং আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।’’ তবে বিধায়কের অভিযোগ, ‘‘কোন ক্যাটাগরির নিরাপত্তা চূড়ান্ত করা হচ্ছে সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট হয়নি, আগামীকাল কলকাতা হাই কোর্টে আমার নিরাপত্তা বিষয়ক মামলা শুনানি আছে হয়তো সেখানে বিস্তারিত জানতে পারব।’’

রানিনগরে উত্তেজনা

রানিনগরে এক কংগ্রেস কর্মীকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রামের বেশ কয়েক জনকে বেআইনি ভাবে সরকারি আবাস পাইয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের বিদায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য। এমনই অভিযোগ করে ফেসবুক পোস্ট করেন রানিনগর-১ ব্লকের রায়পুর এলাকায় কংগ্রেস কর্মী শরদিন্দু মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের শাসকদলের দুর্নীতি নিয়ে সমাজমাধ্যমে লেখালেখির জন্য তাঁকে আক্রমণ করা হয়। রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ স্থানীয় তৃণমূল নেতা চিন্ময় মণ্ডলের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময় আচমকা তাঁকে আক্রমণ করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে ঘিরে ধরেন শাসকদলের কয়েক জন সদস্য। তিনি রুখে দাঁড়াতে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য শরদিন্দু তাঁকে হাঁসুয়া দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, শরদিন্দুর দাবি, মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর তাঁকে পিস্তলের বাট দিয়ে বুকে আঘাত করা হয়। আহত ওই কংগ্রেস কর্মীকে উদ্ধার করে প্রথমে ইসলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি। হাসপাতাল থেকে শরদিন্দু বলেন, ‘‘বিধবা, দলিত মহিলার নামে আবাস যোজনার ঘর এলেও তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তার প্রতিবাদে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। তাই আমাকে ঘিরে ধরে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়েছে। পিস্তলের বাঁট দিয়ে মেরেছে।’’ অন্য দিকে, অভিযুক্ত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘উনি গালিগালাজ করছিলেন। স্থানীয় মানুষজন তার প্রতিবাদ করেছে। এর বেশি কিছু হয়নি।’’

কাঁথিতে লাল বোমা

রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি-২ ব্লকের চালতি গ্রাম পঞ্চায়েতের বসন্তিয়া এলাকায় বোমা বানাতে গিয়ে হাতেনাতে পাকড়াও হলেন দুই দুষ্কৃতী। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বেলার দিকে গ্রামবাসীদের কয়েক জন দেখতে পান দুই অপরিচিত যুবক এলাকায় ঘোরাঘুরি করছেন। তাঁদের পিছু ধাওয়া করে গ্রামেরই ফাঁকা মাঠের পাশে থাকা একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে যান গ্রামবাসীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, সেখানে তৈরি করা হচ্ছে বোমা। এর পর তাঁরা ওই দুই দুষ্কৃতীকে ধরে মারধর করে তুলে দেন কাঁথি থানার পুলিশের হাতে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু বোমা উদ্ধার করেছে। বেশ কিছু বোমা লাল সুতলি দিয়ে তৈরি। এমন জিনিস যে বোমা হতে পারে তা ধারণা করতে পারছেন না গ্রামের অনেকেই। ধৃতদের মধ্যে এক জনের নাম শঙ্কর প্রধান। তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘‘আমি কাঁথির দারুয়া-২ ওয়ার্ডের বাসিন্দা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য বোমা বানাতে আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি সব মিলিয়ে ২১৬টি বোমা তৈরি করেছি। আমাকে ২ হাজার টাকার বিনিময়ে বোমা বানানোর জন্য চুক্তি করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ২০০ টাকা হাতে পেয়েছি। সেইসঙ্গে দু’টি বিস্কুটের প্যাকেটও দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নির্দেশেই আমি বোমা তৈরির কাজ করছিলাম।’’ বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুদাম পণ্ডিত অবশ্য বলেন, ‘‘এর আগে ভূপতিনগরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে তৃণমূল নেতার বাড়িতে। খেজুরিতেও তৃণমূল নেতার বাড়ি বোমায় উড়ে গিয়েছিল। এগরায় শাসকদলের মদতে তৈরি অবৈধ বোমা কারখানা বিস্ফোরণে একাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনার স্মৃতি এখনও টাটকা। এ বার সামনের পঞ্চায়েত ভোটে এলাকায় উত্তেজনা তৈরির উদ্দেশ্যে এখানে বোমা তৈরি হচ্ছিল। দুষ্কৃতীদের হাতেনাতে পাকড়াও করতেই এর সঙ্গে বিজেপিকে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’ পাল্টা চালতি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান তপনকুমার সামন্তের দাবি, ‘‘বিজেপি, সিপিএম এবং বিক্ষুব্ধ তৃণমূল জোট বেঁধে নির্দল প্রার্থী নিয়ে লড়াই করছে আমাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এরা ভোটের সময় এলাকার দখল নিতেই ষড়যন্ত্র করছিল। গ্রামবাসীরা অভিযুক্তদের পাকড়াও করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE