নেট-বিশ্বের দাক্ষিণ্য পৌঁছে গিয়েছে গ্রামগঞ্জের আনাচেকানাচে, প্রত্যন্ত এলাকাতেও। বিজ্ঞানের এই আশীর্বাদের সঙ্গে সঙ্গে এর অভিশাপ অর্থাৎ সাইবার অপরাধের প্রকোপও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। অথচ এই ধরনের দুষ্কর্মের অভিযোগ নেওয়া বা তদন্ত করার কেন্দ্র মুষ্টিমেয়। তাই এই অপরাধ ঠেকাতে এবং দ্রুত তদন্ত করতে জেলায় জেলায় সাইবার থানা তৈরির প্রস্তুতি চালাচ্ছে রাজ্য পুলিশ।
ভবানী ভবন সূত্রের খবর, ২৩টি জেলায় পৃথক সাইবার থানা তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে নবান্নে। থানা তৈরির সঙ্গে সঙ্গে নিচু তলার পুলিশকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং পরিকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, প্রতিটি সাইবার থানায় দু’জন ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার অফিসার-সহ ১০ জন পুলিশকর্মী রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সাইবার অপরাধ তদন্ত করার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মীরা থাকবেন ওই সব থানায়। প্রতিটি থানায় ডিজিটাল ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ রাখারও পরিকল্পনা আছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক কালে অপরাধের বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, খুন, অপহরণ-সহ নানা ধরনের দুষ্কর্মে মোবাইল ব্যবহার করা হচ্ছে। তদন্তের সুবিধার জন্য মোবাইল ফরেন্সিক এবং নেটওয়ার্ক ফরেন্সিকের প্রয়োজন বেড়েছে। প্রতিটি সাইবার থানায় ডিজিটাল ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।’’
রাজ্য পুলিশের আশা, প্রতিটি জেলায় সাইবার থানা থাকলে সাধারণ মানুষের সুবিধা হবে। অভিযোগ জানানোর তাঁদের কথায় কথায় ভবানী ভবনে ছুটে আসতে হবে না। সেই সঙ্গে তদন্তের গতিও দ্রুততর হবে। সময়ের সঙ্গে দ্রুত বদলে যাচ্ছে অপরাধের চরিত্র। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা সাইবার অপরাধের রাশ টানতেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজ্য পুলিশের একাংশ।
পুলিশকর্তারা জানান, সিআইডি-র সাইবার অপরাধ দমন বিভাগের উপরে চাপ বাড়ছিল। এখন ছ’টি কমিশনারেট এলাকা ছাড়া রাজ্যের কোথাও সাইবার অপরাধের ঘটনা ঘটলে অভিযোগ জানানোর জায়গা বলতে শুধু রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা দফতর। কলকাতা, বিধাননগর, ব্যারাকপুর, হাওড়া এবং দুর্গাপুর-আসানসোল, শিলিগুড়ি ছাড়া অন্য কোথাও আলাদা ভাবে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ নেওয়ার ও তদন্তের পরিকাঠামো নেই। জেলায় জেলায় সাইবার থানা থাকলে চাপ কমবে এবং কাজ দ্রুত হবে। ভবানী ভবনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘সাইবার অপরাধের জাল এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে, অপরাধের পরে দ্রুত তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে না-পারলে প্রামাণ্য নথিপত্রও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই জন্য দ্রুত তদন্তের স্বার্থেও আলাদা সাইবার থানা দরকার।’’
রাজ্য পুলিশের কর্তাদের একাংশ স্বীকার করছেন, শহরতলি এবং জেলায় যে-হারে সাইবার অপরাধ বাড়ছে, জেলার পুলিশ তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। কারণ, সাইবার অপরাধের তদন্তের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে উঠে আসছে বাদুড়িয়া ও দেগঙ্গার সাম্প্রতিক গোলমালের কথা। ‘‘কোথাও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল ছবি পোস্ট করে আইনশৃঙ্খলা ভাঙার চেষ্টা চলেছে । আবার কোথাও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করে মহিলাকে অপহরণের মতো ঘটনা ঘটেছে। এ-সবের দ্রুত মোকাবিলা করার জন্য সাইবার থানা প্রয়োজন,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা।
সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি রায়চৌধুরীর মতে, প্রতিটি জেলায় সাইবার শাখা একান্ত জরুরি। এবং সেই শাখার সঙ্গে সব থানার সমন্বয় দরকার। সাধারণ মানুষ যাতে সেই শাখায় সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারেন, তার সুবন্দোবস্ত রাখতে হবে। নেট-অপরাধের ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ এবং তদন্তের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিটি শাখায় প্রযুক্তিবিদ, আইনজ্ঞও রাখা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy