Advertisement
E-Paper

কলেজ কমিশনের পরীক্ষায় সফল তৃতীয় লিঙ্গের ৩ জন

কলেজ সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র চেয়ারম্যান দীপক কর জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নির্দেশমাফিক তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের এ বার নিজেদের লিঙ্গ-পরিচয়ে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ০৪:৪০
প্রথম বারেই সফল হয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের তিন জন পরীক্ষার্থী। প্রতীকী ছবি।

প্রথম বারেই সফল হয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের তিন জন পরীক্ষার্থী। প্রতীকী ছবি।

লিঙ্গ-পরিচয় গোপন না-করে এই প্রথম কলেজ-শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট (সেট)-এ বসার সুযোগ পেয়েছিলেন তাঁরা। প্রথম বারেই সফল হয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের তিন জন পরীক্ষার্থী।

কলেজ সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র চেয়ারম্যান দীপক কর জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নির্দেশমাফিক তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের এ বার নিজেদের লিঙ্গ-পরিচয়ে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষা হয় গত বছরের শেষ দিকে। ফল বেরিয়েছে গত সপ্তাহে। তৃতীয় লিঙ্গের সাত প্রার্থী (রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিত) আবেদন করেছিলেন। ‘‘এক জন পরীক্ষায় বসেননি। বাকি ছ’জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিন জন। অর্থাৎ সাফল্যের হার ৫০ শতাংশ। যা সার্বিক সাফল্যের হারের থেকে অনেকটাই বেশি,’’ বলেন দীপকবাবু। তিনি জানান, তৃতীয় লিঙ্গের সফল তিন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার বিয়য় ছিল বাংলা, শিক্ষাতত্ত্ব ও জীববিদ্যা। ওই তিন পরীক্ষার্থীর এক জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত। শিক্ষাতত্ত্বে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক প্রার্থী সফল হয়েছেন বাংলায়। তৃতীয় জন সাধারণ শ্রেণিভুক্ত। তাঁর বাড়ি গার্ডেনরিচে।

শিক্ষা দফতরের খবর, সফলদের মধ্যে আছেন গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষক দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য। তিনি শারীরবিদ্যার শিক্ষক। বেতন পান মাসে ১৪ হাজার টাকা। দেবজ্যোতি বলেন, ‘‘অনেক রূপান্তরকামীই নিজের লিঙ্গ-পরিচয় প্রকাশ্যে আনতে চান না। আমি অবশ্য ওই পরিচয়েই পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কমিশন জানিয়েছে, আমি উত্তীর্ণ হয়েছি। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’’ পরিবারে তিনিই একমাত্র রোজগেরে।

লহমায় সেট

• পরীক্ষার্থী - ৫০,৯০৮
• উত্তীর্ণ - ৩৩৭৪
• তৃতীয় লিঙ্গের পরীক্ষার্থী -
• উত্তীর্ণ -

২০০১ সালে গার্ডেনরিচ মুদিয়ালি হাইস্কুল থেকে ৭৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন দেবজ্যোতি। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞানের পড়ুয়া ছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে শারীরবিদ্যায় স্নাতক হন। স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে মানবশরীরে মোবাইল ফোন থেকে নির্গত ‘ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রে’-র প্রভাব নিয়ে পিএইচ ডি করছেন। দেবজ্যোতি বলেন, ‘‘রূপান্তরকামী হওয়ায় আমাকে অনেক লড়াই লড়তে হয়েছে। অনেক লড়াইয়ে জিতেছি।’’

দীপকবাবু জানান, ইউজিসি-র নির্দেশিকা অনুযায়ী তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি পরিচয়ে পরীক্ষায় বসা প্রার্থীদের ‘কাট অফ মার্কস’-এ কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছিল। এ বার সেটে বসার জন্য ৬২ হাজার পরীক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিলেন। বসেন ৫০,৯০৮ জন। দীপকবাবু বলেন, ‘‘ইউজিসি-র নিয়ম অনুযায়ী মোট প্রার্থীর ছয় শতাংশকে ‘এলিজিব্‌ল’ (উত্তীর্ণ) ঘোষণা করা হয়েছে।’’

রূপান্তরকামীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুক্ত কৃষ্ণনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষা মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে রূপান্তরকামীদের আন্দোলন। সামাজিক বৈষম্যের কারণে এক সময় অনেকেই তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি বলে প্রকাশ্যে নিজেদের পরিচয় দিতেন না। আস্তে আস্তে সেই জড়তা কাটছে।’’ তাঁর আশা, এ বার যে-সব পরীক্ষার্থী সফল হতে পারেননি, তাঁরা আগামী বছর সফল হবেন। এবং আগামী দিনে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি পরিচয়ে অনেক বেশি প্রার্থী পরীক্ষায় বসবেন।

Third gender Transgender College service commission তৃতীয় লিঙ্গ কলেজ সার্ভিস কমিশন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy