E-Paper

বনমহোৎসব: সূচি বদলে বিতর্কের মুখে বন দফতর

শিলিগুড়ির লাগোয়া ‘বেঙ্গল সাফারি পার্কে’ আয়োজন ছিল সম্পূর্ণ। এমনকি অতিথি আপ্যায়নের জন্য ‘ফুড প্যাকেট’-এর বরাত দেওয়ার কাজেও ফাঁক ছিল না বলে স্থানীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে।

রাহুল রায়

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৫ ০৫:৪৫
নবান্ন।

নবান্ন। —ফাইল চিত্র।

রাতারাতি বদলে গেল সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজনস্থল। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে একেবারে সাড়ে ছ’শো কিলোমিটার দূরের জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রামে। যার ফল স্বরূপ সোমবার, বন দফতরের রাজ্যস্তরীয় বনমহোৎসব অনুষ্ঠান ঘিরে বিরোধীরা তুললেন সরকারি অর্থ অপচয়ের অভিযোগ।

অথচ শিলিগুড়ির লাগোয়া ‘বেঙ্গল সাফারি পার্কে’ আয়োজন ছিল সম্পূর্ণ। এমনকি অতিথি আপ্যায়নের জন্য ‘ফুড প্যাকেট’-এর বরাত দেওয়ার কাজেও ফাঁক ছিল না বলে স্থানীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘ঐকান্তিক উদ্যোগ’ খচিত আমন্ত্রণপত্রও যথা সময়ে পৌঁছে গিয়েছিল মন্ত্রী-আমলা এবং অতিথিবৃন্দের কাছে।

নবান্ন সূত্রে খবর, বনমহোৎসবের আমন্ত্রণপত্রটি মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে পৌঁছতেই নির্দেশ আসে— স্থান বদল করতে হবে। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা জানান, নির্ধারিত অনুষ্ঠান ছিল সোমবার। শুক্রবার সকালেই বন বিভাগের প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, শিলিগুড়ি নয়, অনুষ্ঠান করতে হবে ঝাড়গ্রামে। বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘৪৮ ঘণ্টার নোটিসেই সব আয়োজন করতে হয় ঝাড়গ্রামে।’’

কিন্তু কেন? এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে প্রশ্ন করেও জবাব মেলেনি। বনকর্তারাও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বারংবার চেষ্টা করলেও ফোন ধরেননি বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। জবাব দেননি ওয়টস্যাপ বার্তারও।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘এমন তুঘলকি সিদ্ধান্তে যে সরকারি অর্থের অপচয় হয় এ সরকার তা-ও বোঝে না। বাম আমলে বনমহোৎসব হত ছোট শহরে মানুষকে বন ও বন্যপ্রাণ নিয়ে সজাগ করতে। এখন তা হচ্ছে চিড়িয়াখানার অন্দরেই!’’ বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা অবশ্য মনে করেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ বিজেপির শক্ত ঘাঁটি মনে করেই রাতারাতি অনুষ্ঠান সরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গকে অবজ্ঞা করার এমন রাজনৈতিক রোষের অজস্র নজির আছে।’’

তবে বনমহোৎসবের অনুষ্ঠানস্থল হিসেবে শিলিগুড়ির ‘বেঙ্গল সাফারি পার্ক’ কিংবা ঝাড়গ্রামের ‘জ়ুলজিক্যাল পার্ক’ যে বন আইন অনুসারে অনুষ্ঠান আয়োজনের সঠিক স্থল নয়, তা নিয়ে বন্যপ্রেমীরা সরব হয়েছেন। রাজ্য বন দফতরের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যের কথায়, ‘‘যেখানে পশুপাখিদের নিরুপদ্রব প্রাকৃতিক পরিবেশ দেওয়ার কথা, সেই সাফারি পার্ক কিংবা চিড়িয়াখানায় কখনও মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠান হতে পারে? এ বন্যপ্রাণ আইনেরই পরিপন্থী।’’ এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের অধীনস্থ সেন্ট্রাল জ়ু অথরিটি’র (সিজেডএ) কাছে নালিশ জানিয়েছে বিভিন্ন বন্যপ্রেমী সংস্থা। এমন বেনিয়মের ‘শাস্তি’ হিসেবে সংশ্লিষ্ট চিড়িয়াখানায় সিজেডএ তার অনুদানও বন্ধ করে দিতে পারে বলে সিজেডএ সূত্রে জানা গিয়েছে। সংস্থার সদস্য সচিব ভি ক্লেমেন্ট বেন বলেন, ‘‘সরকারি দফতর নিজেই কী করে এমন আইন ভাঙে?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nabanna WB Forest Department Mamata Banerjee TMC Siliguri Jhargram

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy