চেক দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দফতর। কুলতলির কিছু কৃষককে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সেই মানুষগুলির নামে কাটা চেক ভাঙানো হয়েছে গুজরাতের ভাবনগরে! যার দৌলতে অন্তত ষাট লক্ষ টাকা জালিয়াতেরা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ।
২০১৫-র জুলাইয়ে অভিযোগটি পেয়ে সিআইডি নড়েচড়ে বসে। নানা ধাপ পেরিয়ে আট মাস বাদে চক্রের মূল চাঁই-সহ মোট ন’জনকে তারা গ্রেফতার করেছে। আর তদন্তের সুবাদে সামনে উঠে এসেছে ঠগবাজির নিপুণ কায়দার বৃত্তান্ত। ‘‘জালিয়াতেরা যেন চেকের উপরে প্লাস্টিক সার্জারি করত!’’— পর্যবেক্ষণ এক তদন্তকারীর। লালবাজারের অফিসারেরা অবশ্য জানিয়েছেন, কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা বছর দুয়েক আগে এমনই এক জালিয়াত-চক্রকে পাকড়াও করেছিল।
প্রতারণার বিবরণ দিতে গিয়ে সিআইডি-কর্তারা জানাচ্ছেন, চাষের ক্ষতিপূরণ হিসেবে কুলতলির মেরিগঞ্জের অনেক চাষিকে চেক বিলি করেছিল রাজ্য সরকার। বেশ কিছু চেকে প্রাপকের নাম ভুল ছিল। প্রাপকদের বলা হয়, নাম শোধরাতে হলে ব্যাঙ্কে যেতে হবে। সেই ঝক্কি পোহাতে হবে না— এই আশ্বাস দিয়ে ওই প্রান্তিক চাষিদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় জালিয়াতেরা, ব্যাঙ্কের এজেন্ট (ব্যাঙ্কবন্ধু) সেজে। নগদ টাকার বিনিময়ে চেকগুলো তারা হস্তগত করে। তার পরে শুরু হয় আসল খেলা। কী রকম?
সিআইডি-সূত্রের খবর: চাষিদের নামে কাটা চেক চলে যেত মুম্বই। সেখানে তার উপরে ‘অপারেশন’ চালাত দক্ষ ঠগবাজেরা। প্রথমে দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ব্লেড ঘষে আসল প্রাপকের নাম ও টাকার অঙ্ক চেক থেকে তুলে ফেলা। তার পরে চেকের উপরে নতুন গ্রহীতার নাম ও অঙ্ক (যা অবশ্যই অনেক বেশি) লেখা। শেষে ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া। এক গোয়েন্দার কথায়, ‘‘চেকগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই যে, তাতে এমন সার্জারি চালানো হয়েছে!’’
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ভাবনগরের এক বেসরকারি কোম্পানির নাম লিখে চেকগুলো ভাঙানো হচ্ছিল। কোম্পানির অ্যাকাউন্টে জমা পড়া টাকা তুলে দিব্যি বাঁটোয়ারা করে নিচ্ছিল চক্রের শরিকেরা।
তদন্ত চালিয়ে শেষমেশ ভাবনগরের কোম্পানিটির দুই কর্ণধার— কিশোরভাই মোদী ও জাভেদ মার্চেন্টকে সিআইডি গ্রেফতার করেছে। তাদের জেরা করে পাকড়াও করা হয়েছে চক্রের মুম্বইয়ের দুই সদস্য— জিতেন্দ্র জমানদার ও কেতন ভাইকে। চক্রের মাথা অনুপম মণ্ডলও ধরা পড়েছে। অনুপম পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। সে-ই কুলতলিতে ভুয়ো ‘ব্যাঙ্কবন্ধু’ নিয়োগ করেছিল বলে সিআইডি’র দাবি। চক্রের আর এক সদস্য মহম্মদ সাত্তার জালে পড়েছে সোমবার। গোয়েন্দাদের হিসেবে, এ পর্যন্ত প্রায় ছ’হাজার চেকে নকলনবিশি চালিয়ে চক্রটি মোট ষাট লক্ষ টাকা পকেটে পুরেছে।
জালিয়াতদের হদিস মিলল কী ভাবে? সিআইডি-সূত্রের দাবি, প্রথমে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় চক্রের এক এজেন্ট ধরা পড়েছিল। তার কাছে কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নম্বরের চেকগুলোর টাকা যে অ্যাকাউন্টে জমা পড়ছিল, গুজরাত থেকে তারও সন্ধান আসে। তদন্তকারীদের অভিযোগ, ভাবনগরের অ্যাকাউন্টটিও খোলা হয়েছে ভুয়ো নথি দিয়ে। ‘‘এই ঠগ-চক্রে আরও বহু লোক জড়িত। তাদের খোঁজ চলছে।’’— বলেন এক সিআইডি অফিসার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy