Advertisement
E-Paper

চোখ খুলে সুকুমার দেখল, মাঠে পড়ে বাকি ফুটবলাররা

গোটা গ্রামের এখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না, তরতাজা চারটে ছেলে নিমেষের মধ্যে এ ভাবে মারা যেতে পারে। সন্দেশখালির দক্ষিণ আখড়াতলায় রবিবার ফুটবল মাঠে বাজ পড়ে মারা গিয়েছে মিঠুন মুন্ডা (১৭), শুভজিৎ সর্দার (১৭), অমিত সর্দার (১৬) এবং নারায়ণ সর্দার (১৪)। সকলেরই বাড়ি ওই এলাকার অর্জুন সর্দারপাড়ায়। জখম হয়েছে আরও এগারো জন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৫
হাসপাতালে পড়ে নিথর দেহ। দেখে গেলেন বিধায়ক। ছবি: নির্মল বসু।

হাসপাতালে পড়ে নিথর দেহ। দেখে গেলেন বিধায়ক। ছবি: নির্মল বসু।

গোটা গ্রামের এখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না, তরতাজা চারটে ছেলে নিমেষের মধ্যে এ ভাবে মারা যেতে পারে।

সন্দেশখালির দক্ষিণ আখড়াতলায় রবিবার ফুটবল মাঠে বাজ পড়ে মারা গিয়েছে মিঠুন মুন্ডা (১৭), শুভজিৎ সর্দার (১৭), অমিত সর্দার (১৬) এবং নারায়ণ সর্দার (১৪)। সকলেরই বাড়ি ওই এলাকার অর্জুন সর্দারপাড়ায়। জখম হয়েছে আরও এগারো জন।

এ দিন হাসপাতালে গিয়ে কথা হল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সুকুমারের সঙ্গে। তার কথায়, ‘‘খুব বৃষ্টি পড়ছিল। কিন্তু আমরা খেলা থামাইনি। হঠাৎ আলোর ঝলকানি, শব্দ। কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ হয়ে গেল। বল নিয়ে একটি জটলা চলছিল মাঝমাঠে। আমি ছিলাম একটু দূরে। চোখ মেলতেই দেখি, মাঠে সকলে শুয়ে আছে। আমার শরীরে অস্বস্তি হচ্ছিল। পা কাঁপছিল। শুয়ে পড়লাম। খানিকক্ষণ পরে চোখ খুলে দেখি, আশপাশে কেউ নড়ছে না। দূর থেকে লোকজনের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি উঠে ছুটতে শুরু করলাম। দু’চার পা গিয়েই পড়ে গেলাম। তারপরে আর কিছু মনে নেই।’’

গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু সর্দার, প্রসেঞ্জিত সর্দার, ইলিয়াস গাজিরা বলেন, ‘‘যারা মারা গিয়েছে, যারা আহত, সকলেই খুব গরিব আদিবাসী পরিবারের।’’

হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের চার চারটি তরতাজা প্রাণ হঠাৎ চলে যাওয়ায় কান্নার রোল উঠেছে। গ্রামের শ’য়ে শ’য়ে মানুষ ভিড় করেছেন হাসপাতালে। একই সঙ্গে শোক আর আতঙ্কেরও পরিবেশ।

গ্রামের মানুষই জানালেন, মিঠুন মুন্ডার বাবা-মা নেই। উচ্চমাধ্যমিকের পরে টাকার জন্য কলকাতায় শ্রমিকের কাজ জুটিয়ে নিয়েছিল। সামান্য আয়ে কোনও রকমে বোন প্রিয়ঙ্কাকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করছিল।

যারা ফুটবল খেলছিল, তাদের কাউকে এ দিন হাসপাতালে দেখা যায়নি। গ্রামের লোকজন জানালেন, ছেলেরা সকলে আতঙ্কিত। যে যার বাড়ি ফিরে গিয়েছে। কিন্তু বাড়িতে গিয়েও অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেকে। প্রথমে চার জন জখমকে হাসপাতালে আনা হলেও বিকেলের পরে ভর্তি করা হয় আরও সাত জনকে।

হাসপাতালে এসেছিলেন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। সকলের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি মর্মান্তিক। যারা ফুটবল খেলছিল, তারা গরিব আদিবাসী পরিবারের। ওরা যাতে সরকারি সাহায্য পান, সে বিষয়ে মহকুমাশাসক এবং সংশ্লিষ্ট বিডিওর সঙ্গে কথা বলব।’’

রবিবারই স্বরূপনগরে বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরীর। বৃষ্টির মধ্যেই হরিশপুর গ্রামের নরেশ মণ্ডল এবং তাঁর স্ত্রী কবিতা মাঠে কাজে গিয়েছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বাবা-মা ফিরছে না দেখে ছোট মেয়ে পুষ্পিতা (১৪) ভাত নিয়ে মাঠে যাচ্ছিল। হঠাৎই বাজ পড়ে। স্থানীয় মানুষ তাকে শাঁড়াপুল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মেয়েটি প্রায় পৌঁছেই গিয়েছিল বাবা-মায়ের কাছে। তার মা-ও জ্ঞান হারিয়েছিলেন। তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। তেঁতুলিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাবা নরেশবাবু বলেন, ‘‘কী যে দরকার ছিল বৃষ্টির মধ্যে খাবার নিয়ে মাঠে আসার!’’

sansdeshkhali sandeshkhali thundering four footballer footballer died four footballer died tribal footballers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy