Advertisement
E-Paper

‘নিতান্ত ব্যক্তিগত’ ছবি ফোনে রাখবেন না, বলছে পুলিশ

নিউটাউনের সুখবৃষ্টি আবাসনের বাসিন্দা ৩৫ বছরের সংঘমিত্রা (নাম পরিবর্তিত) ফোন হারানোর পর পুলিশের কাছে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। এ বছর মে মাসে তাঁর এক বন্ধু প্রথম খবরটা দেন। সং‌ঘমিত্রার একাধিক ছবি এবং ভিডিয়ো দেখা যাচ্ছে একটি পর্নোগ্রাফিক সাইটে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ১৭:২৬
ফোনের গোপন ছবি চলে যাচ্ছে পর্ন সাইটে। প্রতীকী চিত্র। গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

ফোনের গোপন ছবি চলে যাচ্ছে পর্ন সাইটে। প্রতীকী চিত্র। গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

গত বছর অগস্ট মাসে হাওড়া স্টেশনে নিজের অ্যানড্রয়েড ফোনটি হারিয়েছিলেন তিনি। নিউটাউনের সুখবৃষ্টি আবাসনের বাসিন্দা ৩৫ বছরের সংঘমিত্রা (নাম পরিবর্তিত) ফোন হারানোর পর পুলিশের কাছে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। তার পর চাকরি ও নিজের নানা কাজের চাপে ফোনের কথা ভুলেই গিয়েছিলেন।

প্রায় দশ মাস পরে এ বছর মে মাসে তাঁর এক বন্ধু প্রথম খবরটা দেন। সং‌ঘমিত্রার একাধিক ছবি এবং ভিডিয়ো দেখা যাচ্ছে একটি পর্নোগ্রাফিক সাইটে। শুনে মাথায় বাজ পড়ার মতোই অবস্থা তখন তাঁর। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল, একটা নয়, একাধিক পর্নোগ্রাফিক সাইটে রয়েছে তাঁর ছবি।

কিন্তু একটা বিষয় কিছুতেই মাথায় আসছিল না তাঁর। ওই সমস্ত ছবি কী করে পৌঁছল ওই সব সাইটে?

অনেক ভাবনাচিন্তার পর হঠাৎ তাঁর মনে পড়ে, প্রায় এক বছর আগে তিনি একটি ফোন হারিয়েছিলেন। আর সেই ফোনেই ওই সমস্ত ছবি ছিল। অর্থাৎ, যার কাছে এই ফোন পৌঁছেছে সেই ব্যক্তির মাধ্যমেই ছবি গিয়েছে ওই সব সাইটে। বিধাননগর সিটি পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানাতে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তদন্তে দেখা যায়, ওই ফোন চুরি যাওয়ার পর আদৌ ব্যবহার করা হয়নি। তার মানে ফোনটিতে সিমকার্ড ভরে সেটিকে সচল করা হয়নি, কিন্তু সেটির গ্যালারি খোলা হয়েছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

খালি সংঘমিত্রা নন, এ রকম একাধিক অভিযোগ প্রতি দিন জমা পড়ছে রাজ্যের বিভিন্ন থানায়। তার মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরে।

এক গৃহবধূ, তিন সন্তানের মা, সংঘমিত্রার মতোই ফোন হারিয়েছিলেন। খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারেন, এক তরুণ সেই মোবাইল পেয়েছেন। সেই তরুণ মোবাইলটা ফেরতও দিয়ে যায়। কিন্তু তার ক’দিন পর থেকেই শুরু হয়ে যায় ব্ল্যাক মেলিং। ওই তরুণ সোজাসুজি ওই মহিলাকে প্রস্তাব দেন ‘ঘনিষ্ঠতা’র। না হলে ওই মহিলার ছবি বিভিন্ন পর্নোগ্রাফিক সাইটে তুলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। জানা যায়, ফেরত দেওয়ার আগে মহিলার ফোন থেকে কিছু গোপনীয় ছবি কপি করে নিয়েছিল ওই তরুণ। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে সেই চাপ সামলাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেন ওই মহিলা। রেখে গিয়েছিলেন সুইসাইড নোট, যেখানে গোটা ঘটনা তিনি লিখে যান। বর্তমানে ঘটনার তদন্ত করছে সিআইডি। চার জন তরুণ গ্রেফতারও হয়েছে।

আরও খবর: বিশ্বকাপের জন্য হাজার হাজার কুকুর নিধন রাশিয়ায়?

ভিডিয়োয় ভয়ঙ্কর মুহূর্ত, পাইথনের ফাঁসে বনকর্মী​

এই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনেই ফোন হারানোর ঝুঁকি এবং ভয়াবহতার কথা বলেন সাইবার আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ফোনে নিরাপত্তা বাড়াতে অনেকে অনেক অ্যাপ ব্যবহার করেন। যাতে অন্য কেউ ফোনের গ্যালারি বা তথ্যের হদিশ না পায়। কিন্তু সেই সমস্ত অ্যাপ পুরোপুরি নিরাপদ নয়। এখন সাধারণ মানুষ থেকে অপরাধী, সবাই উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার জানেন। তাই এই সমস্ত অ্যাপের লক ভাঙা অনেকের কাছেই জলভাত।”

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

সম্প্রতি এ রকম একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েই হাতেনাতে প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারীরা যে খুব সাধারণ মানুষও অনায়াসে এই অ্যাপ লক ভাঙতে পারে। সিআইডির এক আধিকারিকের দাবি, “আমরা একাধিক সময়ে দেখেছি, প্যাটার্ন বা পাসওয়ার্ড দিয়ে লক ফোনও চোর বা অপরাধী খুলে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, চোরাই ফোনে থাকা বিভিন্ন যোগাযোগ ও সোশ্যাল অ্যাপ ব্যবহার করছে।”

এটাও একটা বড় বিপদ। কারণ সাধারণ ভাবে অ্যানড্রয়েড ফোনে মানুষের ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো অ্যাপ খোলা থাকে। তাই শুধু গ্যালারি নয়, এই সব অ্যাপ থেকেও চুরি হয় ছবি। তাই পুলিশ থেকে সাইবার বিশেষজ্ঞ— সবারই সোজা দাওয়াই, নিরাপদ থাকতে হলে ফোনে গোপনীয় ও ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য রাখবেন না।

android phone porn site New Town Cyber Crime Black mail suicide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy