Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
রোগীর দায়িত্বে কারা, উঠছে প্রশ্ন

অক্সিজেন থেকে স্যালাইন সর্বেসর্বা ওয়ার্ড বয়, আয়া

চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরাই যেন ভরসা জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ির একাধিক হাসপাতালে। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে আবার ‘ওয়ার্ড বয়’দের উপরেই অনেক গুরুদায়িত্ব রয়েছে। তেমনি শিলিগুড়ি হাসপাতালে সেলাই করছে সাফাইকর্মীরা।

বালুরঘাট থেকে শিশুকন্যাকে নিয়ে কলকাতা রওনা হচ্ছেন তার পরিজনেরা। মঙ্গলবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

বালুরঘাট থেকে শিশুকন্যাকে নিয়ে কলকাতা রওনা হচ্ছেন তার পরিজনেরা। মঙ্গলবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সংগ্রাম সিংহ রায়
জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০২:২৬
Share: Save:

চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরাই যেন ভরসা জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ির একাধিক হাসপাতালে। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে আবার ‘ওয়ার্ড বয়’দের উপরেই অনেক গুরুদায়িত্ব রয়েছে। তেমনি শিলিগুড়ি হাসপাতালে সেলাই করছে সাফাইকর্মীরা।

যেমন, রোগীর আত্মীস্বজনেরা জানিয়েছেন যে কোন বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে রোগী ভর্তি হলে পাকস্থলি পরিস্কার করার কথা ডাক্তারের। এখন পরিস্কার করেন ওয়ার্ড বয়। তিনি না থাকলে পুরুষ এবং মহিলা আয়াদের কেউ এই কাজ করেন। রোগীর অক্সিজেনের দরকার হলে নার্স অথবা ওয়ার্ড বয়রা অক্সিজেন লাগানোর কাজ করেন। এই কাজও ডাক্তারদেরই করার কথা থাকলেও এটাই এখন জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ির হাসপাতালের রেওয়াজে পরিনত হয়েছে। এমনকি স্যালাইন দেওয়ার কাজও তারাই করে। প্রসুতি বিভাগে আয়ারাই সর্বেসর্বা। তারা রোগীর দেখভাল করা থেকে প্রসবের কাজ পর্যন্ত করে থাকে।

গত মাসের ২৪ তারিখ থেকে এমাসের ১লা তারিখ পর্য্যন্ত জলপাইগুড়ি হাসপাতালে প্রসবের জন্য ভর্তি ছিলেন হলদিবাড়ির বাসিন্দা মামনি মৈত্র। তিনি বলেন, “লেবার ওয়ার্ডে আয়ারাই শেষ কথা। ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে তারাই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। স্বাভাবিক প্রসবের কাজ তারাই করে। স্যালাইন লাগানো, অক্সিজেন চালানো এরকম বিভিন্ন ধরনের কাজ তারা করে থাকে। আমি যে কদিন হাসপাতালে ছিলাম, এই ব্যবস্থাই দেখে এসেছি।”

জলপাইগুড়ি হাসপাতালের এই অব্যবস্থা নিয়ে সোচ্চার হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সংঘমিত্রা ক্লাব ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন। এই সংগঠনের সম্পাদক অনীক মুন্সি বলেন, “হাসপাতালের সুপারকে ইতিমধ্যে এই সমস্ত অব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছে। তিনি কোন পদক্ষেপ করেনি। আমরা আবারও সুপারকে হাসপাতালে অনিয়মের বিষয়টি জানাব। না হলে আমাদের অন্য রাস্তা দেখতে হবে।” জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, “হাসপাতালের অনিয়ম নিয়ে যেসমস্ত অভিযোগ তোলা হয়েছে তা দূর করতে চেষ্টা করব। হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের অবস্থা আরও খারাপ। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দাপট চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদেরই। অস্ত্রোপচার ছাড়া অন্য বিভিন্ন কাজে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন ওই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী সাফাইকর্মীদের দিয়েও সেলাইয়ের কাজ করানোর মত গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন সমাজকর্মীরা। রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনও কাজেই তাঁদের দেখা যায়। রয়েছেন আয়ারাও। রাতে নার্সদের ডিউটি করার কথা থাকলেও তাঁরা অনেক সময় ঘুমিয়ে কাটান বলে অভিযোগ রয়েছে। আলাদা করে পয়সা খরচ করে আয়া নিতে হয়। এমনকী ছোটখাট কাঁটা ছেঁড়ার সেলাই করতেও দেখা যায় ওই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের বলে হাসপাতালের কর্মী বা নিয়মিত হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত বহিরাগতদের একাংশ জানিয়েছেন।

শিলিগুড়ি ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সদস্য সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় অভিয়োগ করেন, ‘কয়েকমাস আগে তাঁর এক পরিচিত রোগীকে হাতের শিরা কাটা অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে, তিনি দেখেন এক সাফাইকর্মীকে দিয়ে সেলাই করানো হচ্ছে। তিনি প্রতিবাদ করলে পরে শল্যরোগ বিশেষজ্ঞ গিয়ে নিজে সেলাইয়ের কাজ দেখেন।’’

হাসপাতালেই এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী জানান, টেকনিশিয়ান হিসেবে যাঁরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাজে নিযুক্ত তাঁরা সংখ্যায় কম। তাই আমাদেরই হাত লাগাতে হয়। তাঁদের প্রশিক্ষণ নেই তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই স্বীকার করেছেন। তবে কাজ করতে গিয়েই তাঁরা শেখেন বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাঁরাই এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে বালুরঘাট হাসপাতালের মত ঘটনা যে কোনও দিন ঘটতে পারে বলে অভিযোগ করেন মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে চিকিৎসা করাতে আসা এক রোগীর আত্মীয় নিমাই বৈরাগী। তিনি বলেন, ‘‘টিভিতে ওই শিশুর আঙুল কাটা যাওয়ার ঘটনা শুনেছি। আমরা তো সমস্ত রোগে সরকারি হাসপাতালের উপরেই নির্ভর করি। যা দেখছি তাতে যে কোনওদিন এমন ঘটনা ঘটতে পারে।’’

শিলিগুড়ি হাসাপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল অবশ্য কোনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী টেকনিশিয়ানদের কাজ করেন না বলে দাবি করেন। উপরোক্ত ঘটনাও তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে কেউ কোনদিন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। তবে এমন ঘটনা শিলিগুড়ি হাসাপাতালে হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE