সিন্টু বাগুই। নিজস্ব চিত্র
একে যৌনকর্মীর সন্তান। তায় ‘মেয়েলি পুরুষ’!
ছোট থেকে বাঁকা চাহনি কম দেখতে হয়নি শেওড়াফুলি স্টেশন লাগোয়া গড়বাগানের বাসিন্দা, বছর সাতাশের সিন্টু বাগুইকে। বিস্তর টিপ্পনীও হজম করতে হয়েছে। কিন্তু হাল ছাড়েননি। রূপান্তরকামীদের আন্দোলনে জড়িয়ে গিয়েছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের পরের দিন রূপান্তরকামী এই সিন্টুই শ্রীরামপুরে লোক আদালতের বিচারকের আসনে বসলেন। বিচারকাজ সামলে তিনি বলেন, ‘‘যৌনকর্মীর সন্তান এবং রূপান্তরকামী হিসেবে সম্ভবত আমিই প্রথম এই দায়িত্ব পালন করলাম। আত্মবিশ্বাস বাড়ল।’’
আদালতে জমে থাকা কিছু মামলা বা লঘু অপরাধ এবং মামলার পূর্বাবস্থায় থাকা বিষয়ের নিষ্পত্তি হয় লোক আদালতে। প্রাক্তন বা বর্তমান বিচারক, আইনজীবী এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি বিচারক হন। শনিবার ছিল জাতীয় লোক আদালত।
হুগলি জেলার চার মহকুমায় লোক আদালত বসেছিল। সম্প্রতি হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের (ডালসা) তরফে সমাজকর্মী হিসেবে সিন্টুকে বিচারকের আসনে বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
শ্রীরামপুরে লোক আদালতের পাঁচটি বেঞ্চ বসেছিল। তাঁর একটিতেই অন্যতম বিচারক ছিলেন সিন্টু। দেড় বছর আগে এখানেই লোক আদালতের বিচারক ছিলেন রূপান্তরকামী শ্যাম ঘোষও। শনিবার সিন্টুর সঙ্গে ছিলেন ‘ডালসা’র সচিব অনির্বাণ রায় ও আইনজীবী অংশুমান চক্রবর্তী। অনির্বাণ জানান, ওই বেঞ্চে বিএসএনএল সংক্রান্ত প্রায় আড়াইশো বিষয়ের বেশির ভাগই নিষ্পত্তি হয়েছে। সিন্টু অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিন্টুর কথায়, ‘‘স্যার (অনির্বাণবাবু) নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দিয়েছিলেন। ভরসা রেখেছেন। কোনও অসুবিধা হয়নি।’’
আরও পড়ুন: বিয়ে করতে এসে পাত্র গেলেন সটান জেলে!
সিন্টু জানান, দশ বছর বয়স থেকে তাঁর মধ্যে ‘মেয়েলি’ ভাব প্রকট হতে থাকে। এ নিয়ে বাড়িতে বকুনি শুনতে হয়েছে, মারও খেতে হয়েছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পরে ক্রমশ জড়িয়েছেন রূপান্তরকামীদের আন্দোলনে। তাঁর কথায়, ‘‘আন্দোলনের সূত্রে অনেক জায়গায় যেতে হয়। নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরি। এক সময় টিপ্পনী করতেন, এমন অনেকেই আজ উৎসাহ দেন। বাড়ির পরিবেশও সহজ হয়ে গিয়েছে। আমার সাফল্যে বাড়ির সবাই খুশি। দিদি নিজে আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।’’ সাত বছর আগে মা মারা গিয়েছেন। সিন্টুর আক্ষেপ, ‘‘মা বেঁচে থাকলে খুশি হতেন। যৌনকর্মীর সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা হয় না।। দুর্বার সমন্বয় কমিটিতে যৌনকর্মীদের ভালমন্দ নিয়ে কাজ করি। এই পেশাকে সম্মান, শ্রদ্ধা করি।’’
আইনজীবী অংশুমান চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ দিন সিন্টুর মধ্যে কোনও আড়ষ্টতা ছিল না। সুযোগ পেলে যে কোনও পেশাতেই মানিয়ে নিতে পারবেন।’’ অনির্বাণ জানান, এক জন যৌনকর্মীর সন্তান এবং রূপান্তরকামী যে সমাজের মূলস্রোতে হাত ধরাধরি করে চলতে পারে, সেটা দেখা গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy