Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Pratap Hazra

উস্তিতে ধৃত হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি প্রতাপ হাজরা কালবুর্গি-লঙ্কেশের ঘাতকদের অস্ত্র প্রশিক্ষক

ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুণে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগেও ২০১৫ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

বিজেপির দাবি প্রতাপ হাজরা কোনও দিন তাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ছবি: সংগৃহীত।

বিজেপির দাবি প্রতাপ হাজরা কোনও দিন তাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ছবি: সংগৃহীত।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ১৭:০৫
Share: Save:

এলাকায় হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে পরিচিত। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তিতে, নইনান হাজরা পাড়ার প্রতাপ হাজরা যে তলে তলে উগ্র হিন্দু জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি এলাকার মানুষ।

অথচ, কয়েক দিন আগে পুণে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর প্রকাশ্যে এসেছে, মুক্তমনা কন্নড় লেখক এম এম কালবুর্গি থেকে শুরু করে সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের খুনের পিছনে অন্যতম ‘মস্তিষ্ক’ ছিলেন ‘গুরুজি’ প্রতাপ হাজরা।

গৌরী লঙ্কেশের হত্যার তদন্তের পরে কর্নাটক পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) যে চার্জশিট পেশ করেছে তাতে নাম রয়েছে এ রাজ্যের এক প্রতাপ হাজরার।

কর্নাটক পুলিশের পেশ করা চার্জশিট অনুযায়ী, ২০১৫ সালের অগস্ট মাসে কালবুর্গি হত্যার কয়েক দিন আগেই ম্যাঙ্গালুরু শহরের উপকণ্ঠে একটি রবার বাগিচায় তিন দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল অভিযুক্তরা। গণেশ মিশকিন বা প্রবীণ প্রকাশ চতুরের মতো অভিযুক্তদের জবানবন্দি অনুসারে ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে অভিযুক্তদের আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার থেকে শুরু করে বিস্ফোরক বানানো শেখানো হয়েছিল। শিখিয়েছিলেন এক ‘বড় বাবাজি এবং চারজন গুরুজি’। সেই চার প্রশিক্ষকেরই একজন উস্তির এই প্রতাপ হাজরা বলে দাবি পুলিশের।

শুধু এই দু’জনের খুনের ক্ষেত্রেই নয়, ২০১৩ সালে মরাঠি লেখক এবং সমাজকর্মী চিকিৎসক নরেন্দ্র দাভোলকর খুনে প্রধান অভিযুক্ত শারদ কালসকরের বয়ানেও এসেছে প্রতাপের নাম।

আরও পড়ুন: মন্তব্যে উস্কানি, সারজিল ইমামের বিরুদ্ধে এফআইআর দিল্লি পুলিশের

২০ জানুয়ারি কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর সহায়তায় পুণে পুলিশ উস্তি থেকে প্রতাপকে গ্রেফতার করে। পুণে পুলিশের অভিযোগ, প্রতাপ হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর নাম উঠে এসেছে ২০১৭ সালে পুণের সানবার্ণ মিউজিক ফেস্টিভ্যালে বোমা হামলা এবং ২০১৮ সালে মহারাষ্ট্রের নালাসাপোরা অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায়।

আরও পড়ুন: কুশলী কেন্দ্র! বাংলার ট্যাবলো বাদ, রবীন্দ্রসঙ্গীতে বাউল নৃত্য কুচকাওয়াজে

৩৪ বছরের প্রতাপ হাজরাকে এলাকার মানুষ চেনেন বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সক্রিয় কর্মী হিসাবে। অনেকেই দাবি করেছেন, প্রতাপ ভারতীয় জনতা পার্টির সক্রিয় সদস্য। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বিজেপির নেতা অভিজিৎ দাস যদিও দাবি করেছেন যে, প্রতাপ কোনও দিন তাঁদের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুণে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগেও ২০১৫ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ানোর জন্য। তার আগে ২০১২, ২০১৩ সালেও একই ধরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ওই সময়ে বিভিন্ন পুলিশ রিপোর্টে তাঁকে তপন ঘোষের নেতৃত্বাধীন হিন্দু সংহতি সংগঠনের অন্যতম রাজ্য নেতা বলা হয়েছে। সংগঠনের বর্তমান সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রতাপ হাজরা আগে আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু অনেক দিন আগে থেকেই তিনি আর আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন।” ডায়মন্ড হারবার আদালতে প্রতাপের বিভিন্ন মামলায় আইনজীবী ছিলেন তপন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘এক সময়ে প্রতাপ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন তিনি কি রাজনীতি করতেন সে সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা নেই।”

হিন্দু সংহতিতে তাঁর পুরনো সহকর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, ২০১৩ সাল থেকেই তাঁর সঙ্গে সংগঠনের দূরত্ব তৈরি হয় এবং তিনি মহারাষ্ট্রের হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির সঙ্গে যুক্ত হন। এ রাজ্যেও তিনি ওই সংগঠনের শাখা তৈরি করেন এবং বিভিন্ন জায়গায় উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রচার করতে থাকেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন হিন্দু সংহতিরই আরও দুই সংগঠক উপানন্দ ব্রহ্মচারী এবং বিকর্ণ নস্কর।

পুণে পুলিশের দাবি, সানবার্ন মিউজিক ফেস্টিভ্যালে হামলা এবং নালাসাপোরা অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ধৃতদের সঙ্গেও হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি এবং সনাতন সংস্থা নামে দু’টি সংগঠনের নাম উঠে এসেছে। একই ভাবে গৌরী লঙ্কেশ থেকে শুরু করে কালবুর্গির হত্যার পেছনেও ছিল ওই সনাতন সংস্থা।

যদিও পুণে পুলিশের একাংশের দাবি, ভবানী সেনা নামে নতুন একটি হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন প্রতাপ। ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ম্যাঙ্গালুরুর মতো ১৮টি অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হয়। সেই শিবিরগুলিতে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক হিসাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বাংলার প্রতাপ। আর তাঁর সঙ্গেই উঠে আসছে আরও এক বাংলাভাষি প্রশিক্ষকের নাম। সেই প্রশিক্ষক কে তার হদিশ এখনও পাননি গোয়েন্দারা।

তবে এত কিছুর পরও, রাজ্যের গোয়েন্দারা প্রতাপের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কী ভাবে অন্ধকারে রয়ে গেলেন তা একটা বড় প্রশ্ন গোয়েন্দা কর্তাদের একাংশের মধ্যেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RSS Pratap Hazra BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE