Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
নলহাটিতে কিশোরীকে নির্যাতন

চাপ বাড়তেই জুড়ল গণধর্ষণের ধারা

এফআইআর হয়েছিল তিন দিন আগে। ঘটনা তার-ও এক দিন আগের। কিন্তু, বিতর্ক শুরু হতে চাপের মুখে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গেল বীরভূম পুলিশ! নলহাটি থানা এলাকার ওই ঘটনায় বুধবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬গ (গণধর্ষণ) এবং ‘প্রটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সচুয়াল অফেন্সেস’-এর (পস্কো) ৪ ও ৬— এই দু’টি অতিরিক্ত ধারা যুক্ত করল পুলিশ। এ দিনই সিউড়িতে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের কাছে ওই নতুন দু’টি ধারা যুক্ত করার আবেদন জানিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসার।

এসডিও-র প্রতীক্ষায় বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

এসডিও-র প্রতীক্ষায় বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

নিজস্ব সংবাদদাতা
নলহাটি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০২:২০
Share: Save:

এফআইআর হয়েছিল তিন দিন আগে। ঘটনা তার-ও এক দিন আগের। কিন্তু, বিতর্ক শুরু হতে চাপের মুখে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গেল বীরভূম পুলিশ!
নলহাটি থানা এলাকার ওই ঘটনায় বুধবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬গ (গণধর্ষণ) এবং ‘প্রটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সচুয়াল অফেন্সেস’-এর (পস্কো) ৪ ও ৬— এই দু’টি অতিরিক্ত ধারা যুক্ত করল পুলিশ। এ দিনই সিউড়িতে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের কাছে ওই নতুন দু’টি ধারা যুক্ত করার আবেদন জানিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসার। পাশাপাশি পুলিশ ধৃত ছ’জনের শারীরিক পরীক্ষা করানোর আবেদনও করেছিল। দু’টি আবেদনই মঞ্জুর করেন বিচারক ঋষি কুশারী। এসডিপিও (রামপুরহাট) জোবি থমাস কে বলেন, ‘‘মঙ্গলবার ওই কিশোরীটির কাছ থেকে নতুন করে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেই মামলায় ওই দু’টি ধারা যুক্ত করার জন্য আবেদন করা হয়েছিল।’’
এ দিনই আবার বিজেপি রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের মাধ্যমে নির্যাতিতা কিশোরী মহকুমাশাসকের (রামপুরহাট) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছে। তাতে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দেওয়ার পাশাপাশি নলহাটি থানার পুলিশের বিরুদ্ধে সাদা কাগজে সই করে নিয়ে এফআইআর দায়ের করার অভিযোগও কিশোরী জানিয়েছে। তার এই আবেদনপত্রটিকেই নির্যাতিতা এফআইআর হিসেবে গণ্য করার দাবিও তুলেছে। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘যে পুলিশ চাপ দিয়ে সঠিক অভিযোগ না নিয়ে অসম্পূর্ণ এফআইআর করায়, তাদের উপর নির্যাতিতার পরিবারের ভরসা নেই। তাই আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে এসডিও-র কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসডিও চিঠিটিকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করার জন্য পুলিশকে পাঠাবেন।’’ এসডিপিও (রামপুরহাট) উমাশঙ্কর এস অবশ্য দাবি করেছেন, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি এ রকম কোনও অভিযোগ পাননি।

ঠিক কী ঘটেছিল?

খেলার মাঠে ন’বছরের ভাইকে এলাকার কিছু কিশোর মারধর করছে দেখে বাধা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয় ওই একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। শনিবার বিকেলে নলহাটি থানা এলাকার ওই ঘটনায় জখম মেয়েটিকে সে দিনই ভর্তি করানো হয় রামপুরহাট হাসপাতালে। রবিবার ছাত্রীর বাবা নলহাটি থানায় তিন স্কুলপড়ুয়া-সহ এলাকার ছয় কিশোরের বিরুদ্ধে তাঁর মেয়েকে খুনের চেষ্টা এবং তার শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন। সোমবার পুলিশ ওই ছ’জনকে ধরে। মঙ্গলবার সিউড়ির জুভেনাইল আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন হোমে রাখার নির্দেশ দেন।

রামপুরহাটে কংগ্রেসের বিক্ষোভ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

যদিও মঙ্গলবার সকালে সংবাদমাধ্যমের কাছে আক্রান্ত কিশোরীর বাবা দাবি করেন, ‘‘রবিবার পুলিশ আমাকে বলেছিল, ‘ধর্ষণের কথা জানাজানি হলে মেয়ের বিয়ে দিতে পারবে না’। তাই শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছিলাম।’’ এক ধাপ এগিয়ে মেয়েটির মা-র দাবি, ‘‘সোমবার গভীর রাতে রামপুরহাট হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে মেয়ে বারবার ধর্ষণের কথা বললেও পুলিশ বলল, ‘ধর্ষণ বললে মামলা টিকবে না। খুনের চেষ্টা, শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বললে মামলা জোরালো হবে’। পেটে লাথি মারা হয়েছে বলার জন্য মেয়েকে চাপাচাপি করল। তার পরে মেয়েকে আর আমাকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিল।’’ ঘটনার কথা জানাজানি হতেই সরব হয় বিজেপি জেলা নেতৃত্ব। চাপে পড়ে ওই দিন বিকেলে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। ধর্ষণের মামলা রুজু করা হবে বলে জানিয়ে দেন এসডিপিও জোবি থমাস কে-ও। তবে, মেয়েটির যৌনাঙ্গে চোট থাকার কথা জানালেও ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে কি না, তা ভাঙেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বুধবার মহকুমাশাসককে লেখা নির্যাতিতা কিশোরীর অভিযোগপত্র। —নিজস্ব চিত্র

এ দিকে, এ দিনই সুভাষবাবুর নেতৃত্বে বিজেপি-র একটি প্রতিনিধি দল রামপুরহাট হাসপাতালে কিশোরীর সঙ্গে দেখা করে। নির্যাতিতার পরিবারকে তাঁরা পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এর পরেই সুভাষবাবুরা যান রামপুরহাট মহকুমাশাসকের কাছে। তাঁর কাছে কেন্দ্র সরকারের অধীনে থাকা কোনও হাসপাতালে নির্যাতিতার শারীরিক পরাক্ষা করানোর আবেদন জানান। পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিজেপি রাজ্য সহ-সভাপতি বলেন, ‘‘ম্যাজিস্ট্রেটের নজরদারিতে ইএসআই বা রেলের কোনও হাসপাতালে কিশোরীর শারীরিক পরাক্ষা করানো দরকার। একমাত্র ওই দুই হাসপাতালেই পুলিশের মামলা প্রভাবিত করার সুযোগ কম।’’ তিনি আরও জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনে পুলিশ অভিযোগ নিতে বাধ্য। ওই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত হওয়ার দরকার। দোষী পুলিশ কর্মীদের শাস্তির দাবিও তুলেছেন তিনি।

একই দাবিতে এ দিনই রামপুরহাটের এসডিও এবং এসডিপিও দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেস এবং এসইউসি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE