Advertisement
E-Paper

বাবার কাছে হেরে গেলাম, মন্তব্যের পরেই তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড শুভ্রাংশু

ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীকে জেতানোর জন্য তিনি সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবেন বলে জানিয়েছিলেন শুভ্রাংশু। তাঁর বাবা মুকুল রায় যখন অর্জুন সিংহের জন্য ঘুঁটি সাজাতে ব্যস্ত, তখন শুভ্রাংশু জানিয়েছিলেন, দীনেশ ত্রিবেদীকে তিনি সবচেয়ে বেশি লিড পাইয়ে দেবেন নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র বীজপুর থেকেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ১৭:৫১
জল্পনার আগুনে শুভ্রাংশু নিজেই অক্সিজেন জোগালেন।

জল্পনার আগুনে শুভ্রাংশু নিজেই অক্সিজেন জোগালেন।

অত্যন্ত ইঙ্গিতবহ সাংবাদিক সম্মেলন করলেন তৃণমূল বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে ভোটের ফল। তার ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে সর্বাগ্রে নিজের ‘হার’ স্বীকার করলেন মুকুল-পুত্র। তার পরে জানালেন, ভবিষ্যতে যা করবেন, বাবার সঙ্গে কথা বলেই করবেন। আর শেষে বললেন, ‘‘আমার বাবাকে নিয়ে আমি গর্বিত।’’ মুকুল রায় একাই তৃণমূলকে তছনছ করে দিয়েছেন বলেও এ দিন মন্তব্য করেছেন বীজপুরের বিধায়ক। যদিও এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন শুভ্রাংশুকে দলের শৃঙ্খলা ভাঙার কারণে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হল।

ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীকে জেতানোর জন্য তিনি সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবেন বলে জানিয়েছিলেন শুভ্রাংশু। তাঁর বাবা মুকুল রায় যখন অর্জুন সিংহের জন্য ঘুঁটি সাজাতে ব্যস্ত, তখন শুভ্রাংশু জানিয়েছিলেন, দীনেশ ত্রিবেদীকে তিনি সবচেয়ে বেশি লিড পাইয়ে দেবেন নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র বীজপুর থেকেই। ফলাফল যে প্রায় উল্টো হয়েছে, তা অর্জুনের কাছে দীনেশের পরাজয়েই স্পষ্ট হয়ে গেল এবং তার পরেই মিডিয়ার সামনে মুখ খুললেন মুকুল-পুত্র।

‘‘আমি বলেছিলাম, বীজপুর থেকে দীনেশদাকে সবচেয়ে বেশি লিড দেব। কিন্তু আমি পারিনি। আমি বীজপুরের ভূমিপুত্র। কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে, আমি একাই এখানকার ভূমিপুত্র নই, আমার বাবা মুকুল রায়ও বীজপুরের ভূমিপুত্র।’’ সাংবাদিক সম্মেলনে এ দিন এই মন্তব্যই করেছেন তৃণমূল বিধায়ক। তিনি বলেছেন, ‘‘কাউকে দোষারোপের ব্যাপার নেই, অভিমান নেই, রাগ নেই। আমার বাবার কাছে আমি হেরে গিয়েছি। ভবিষ্যতে কী করব, সে বিষয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেব।’’

তিনি বীজপুরে দীনেশ ত্রিবেদীকে লিড পাইয়ে দিতে পারেননি এবং তিনি বাবার কাছে হেরে গিয়েছেন— এই পর্যন্ত বলে থেমে গেলেও শুভ্রাংশুকে নিয়ে খুব বেশি জল্পনা হয়তো তৈরি হত না। কিন্তু শুভ্রাংশু থামেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার বাবাকে নিয়ে আমি গর্ব বোধ করি। আমার বাবা মুকুল রায় দল ছাড়ার পরে অনেকে বলেছিলেন, লক্ষ লক্ষ মুকুল রায় তৈরি করবেন। কিন্তু দেখা গেল, যে মুকুল রায় নিজের হাতে তৃণমূলকে তৈরি করেছিলেন, তিনিই আজ তৃণমূলকে ভেঙে তছনছ করে দিলেন।’’ নাম না করে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এ দিন জোরদার খোঁচা দিয়েছেন শুভ্রাংশু। তিনি বলেন, ‘‘যাঁকে কাঁচরাপাড়ার কাঁচা ছেলে বলা হয়েছিল, তিনিই নিজের ‘কাঁচা’ মাথাটা দিয়ে গোটা পশ্চিমবঙ্গটাকে চাণক্যের মতো চষে দিলেন।’’

আরও পড়ুন, এটা যে অশনি সঙ্কেত, মমতা কি মানবেন?

মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়ার পর থেকেই তাঁর ছেলে তথা বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়ের অবস্থান নিয়ে জোরদার জল্পনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শুভ্রাংশু বার বারই জানিয়েছিলেন, তিনি তৃণমূলেই থাকছেন। দলের বিভিন্ন কর্মসূচির মঞ্চ থেকে মুকুল রায়ের প্রকাশ্য সমালোচনাও করছিলেন শুভ্রাংশু। কিন্তু এ দিন শুভ্রাংশু বলেন, ‘‘যাঁকে আমি মমতাময়ী মা ভাবি, নেত্রী ভাবি, তিনিও আমাকে বললেন গদ্দারের ছেলে। আমি জানি না বাংলা সংস্কৃতিতে এই গদ্দারের ছেলে কতটা মানানসই! আমার কাছে সব কিছুই একটা প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’

আরও পড়ুন, ‘কেবল বিজেপি কেন? তৃণমূল থেকেও তো প্রস্তাব আসতে পারে’, বললেন অধীর

লোকসভা নির্বাচন ঘোষিত হওয়ার পরেও তিনি দলীয় প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীর হয়ে কাজ করার কথা জোর দিয়ে বলেছিলেন। কিন্তু প্রচার চলাকালীনই তাঁর অবস্থান নিয়ে জল্পনা তৈরি হতে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর একটি পোস্ট নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হয়ে। তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁকে বিশ্বাস করছেন না এবং এই ভাবে দলে থাকা কঠিন— মূলত এই রকমই বার্তা ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভ্রাংশুর করা পোস্টটির। ফলে তাঁকে নিয়ে জল্পনা বাড়তে শুরু করেছিল ব্যারাকপুরে ভোট হওয়ার আগেই।

এ বার সেই জল্পনার আগুনে শুভ্রাংশু নিজেই অক্সিজেন জোগালেন। বাবা মুকুল রায়ের ভূয়সী প্রশংসা তো করলেনই। তার পাশাপাশি বললেন, ‘‘আমি দল এখন ছাড়ছি না। কিন্তু দল কি আমাকে বিশ্বাস করে? আমি জানি না।’’

যদিও এ দিন বিকেলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে শুভ্রাংশুকে দল থেকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘‘জনসমক্ষে দলকে হেয় করেছে। তৃণমূলে থেকে অন্য দলের প্রশংসা করছেন দীর্ঘ দিন ধরে। আমরা সবটাই লক্ষ রাখছিলাম। দলের শৃঙ্খলা ভাঙার কারণে শুভ্রাংশু রায়কে ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হল।’’

তবে কি বিজেপিতেই যাচ্ছেন শুভ্রাংশু? এ দিন বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুকুল বলেন, ‘‘এটা আমার ব্যাপার নয়। শুভ্রাংশুর ব্যাপার। সিদ্ধান্ত নেবে শুভ্রাংশু আর ভারতীয় জনতা পার্টি।’’

Lok Sabha Election 2019 BJP TMC Mukul Roy Subhranshu Roy শুভ্রাংশু রায় তৃণমূল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy