Advertisement
E-Paper

দল বদলে গেরুয়া শিবিরে ৩ বঙ্গ বিধায়ক, রং বদলাল ৪ পুরসভা

মুকুলপুত্র শুভ্রাংশুর সঙ্গে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের ‘তৃণমূল’ বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য এবং উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের সিপিএম বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ও এ দিন দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০৩:৩৬
দলবদল:  কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়ের সঙ্গে তৃণমূল ও সিপিএমের দলত্যাগী বিধায়ক ও নতুন সাংসদেরা। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

দলবদল: কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়ের সঙ্গে তৃণমূল ও সিপিএমের দলত্যাগী বিধায়ক ও নতুন সাংসদেরা। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

লোকসভা ভোটের ফল বেরোনোর পরে তৃণমূল ছাড়ার সূচনা হয়েছিল ব্যারাকপুর মহকুমা থেকে। দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের ছেলে শুভ্রাংশু। দল তাঁকে তৎক্ষণাৎ সাসপেন্ড করে। মঙ্গলবার সেই ব্যারাকপুর এলাকাতেই তৃণমূলের ভাঙন আরও বাড়ল। দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন ওই এলাকায় তিনটি পুরসভার কাউন্সিলরদের গরিষ্ঠ অংশ। কলকাতায় গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন ওই এলাকারই আরও একটি পুরসভার বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর।

একই সঙ্গে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের ‘তৃণমূল’ বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য এবং উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের সিপিএম বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ও এ দিন দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তুষারবাবু বিধানসভার খাতায় এখনও কংগ্রেস বিধায়ক হলেও বেশ ক’বছর তৃণমূলেই রয়েছেন। তাঁর এই ‘দলত্যাগ’ নিয়ে বিধানসভায় স্পিকারের শুনানি চলছে। এই অবস্থায় এ বার তিনি বিজেপির পতাকা ধরলেন।

এ দিনের দলবদলের ফলে কাঁচরাপাড়া, হালিশহর ও নৈহাটি পুরসভা তৃণমূলের হাত থেকে বিজেপির দখলে গেল বলে দাবি মুকুলের। তিনি জানান খানাকুল পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি-সহ বেশ কিছু পঞ্চায়েত স্তরের নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

দলত্যাগের হিড়িক নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বিজেপি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘বিজেপি ২০২১ সালে বিধানসভায় জিতে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু তার আগেই যদি বিধায়কেরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছেড়ে বিজেপিতে চলে আসেন তাহলে আর কী করা যাবে!’’

তৃণমূল অবশ্য এই সব দলত্যাগে আমল দিতেই রাজি নয়। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘এ সব চাপের মুখে করানো হচ্ছে। আজ যাঁরা বিজেপিতে গিয়েছেন, কয়েক দিন পরেই দেখবেন তাঁরা তৃণমূলে ফিরে এসেছেন।’’

রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য, ‘‘ঝড়ের মুখে যখন জাহাজ টলমল করে, তখন জাহাজের ইঁদুরেরা প্রথমে সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়। বাঁচার জন্য কোথায় ঝাঁপাচ্ছে, বুঝতে পারে না! এখানেও একটা দল কয়েকটা আসন পেয়েছে বলে যারা চাপের মুখে বা ভয়ে মাথা নত করে পালাচ্ছে, তারা কেউ আদর্শের রাজনীতি করেন না। আদর্শের রাজনীতি করলে না পালিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতেন।’’ তৃণমূলের এই ভাঙনের নেপথ্যের

অন্যতম কারিগর মুকুলকেও চাপের মুখেই দল ছাড়তে হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন ফিরহাদ। বন্দুকের নল দেখিয়ে তৃণমূলের এই পদাধিকারীদের বিজেপিতে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

এর প্রেক্ষিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিংহর প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি(জ্যোতিপ্রিয়) তো নিজেই এতদিন লোককে হুমকি দিতেন, মারতেন। আজ সুর এত নরম কেন? হয়তো উনিই বিজেপিতে যোগদানের জন্য দরখাস্ত দেবেন। ইতিমধ্যেই হয়তো বিজেপির কোনও নেতার সঙ্গে উনি যোগাযোগ করে ফেলেছেন! আর কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘কাদের মানুষ করলাম, যারা কঠিন সময়ে পাশে থাকে না— এই কথা হয়তো দিদির মনে হচ্ছে। আমাদেরও এটা মনে হতো, যখন তৃণমূল দল ভাঙিয়েছে। তাই এই ঘটনাকে ‘পোয়েটিক জাস্টিস’ বলব কি না, ভাবছি!’’

এরই পাশাপাশি জেলাস্তরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও তীব্র হয়েছে। দলবিরোধী কাজের অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ নিয়ে এ দিন ধুন্ধুমার বাধে বর্ধমানের কাটোয়ার পুর-বৈঠকে। বৈঠকের মধ্যেই কাটোয়া পুরসভার চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের টেবিল চাপড়ে, ফোন উল্টে তাঁর দিকে জলের গ্লাস ছোড়ার অভিযোগও উঠল তৃণমূলেরই কয়েক জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া কোচবিহারে দফায় দফায় বিজেপির বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তৃণমূলকে। পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ হয় তুফানগঞ্জে। মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে ঘিরে কালো পতাকা দেখানো হয়। তাঁর রাস্তা আটকে অবরোধও হয়। বিজেপির বিজয়মিছিল থেকে তৃণমূলের অফিসে ইট-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ আসে দুর্গাপুর থেকে।

এই আবহেই দিল্লিতে বিজেপি দাবি করে, আগামী মাসের শুরুর দিকে তৃণমূলের আরও কয়েক জন বিধায়কের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সাত দফা লোকসভা নির্বাচনের ধাঁচেই তৃণমূল শিবিরকে সাত পর্বে ভাঙানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে কৈলাস হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বিধানসভায় দলত্যাগ-বিরোধী আইন আছে। তাই তৃণমূল ভাঙতে গেলে কমবেশি ৭০ জন বিধায়ককে একজোট করতে হবে। সে ক্ষমতা বিজেপির নেই। কোনও দিন হবেও না। সে জন্য তারা মিথ্যা গর্জন করে বাজার গরম করতে চাইছে।’’ ওই নেতার আরও দাবি, ‘‘তৃণমূলের যে বিধায়কদের এখন বিজেপি শিবিরে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের সম্পর্কে দলের আগেই এই মূল্যায়ন ছিল। তাই এটা কোনও চমক নয়।’’

TMC BJP Mukul Roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy