Advertisement
E-Paper

দক্ষতার পরীক্ষায় দুই সেনাপতিই ‘ফেল’

অধিকারী-গড়ের ‘সম্রাট’ শুভেন্দুকেও এ দিন তাঁর নিজের গড় কাঁথি বা তমলুকে কোথাওই দেখা যায়নি। ফোনও নিশ্চুপ।

দেবারতি সিংহ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৪:৩৬
অভিষেক ও শুভেন্দু। ফাইল চিত্র

অভিষেক ও শুভেন্দু। ফাইল চিত্র

তাঁর দুই তরুণ ‘সেনাপতি’ই এ বার সফল হলেন না! সফল হলেন না ঘাসফুলকে প্রত্যাশিত ‘উপহার’ দিতে।

এই দু’জনকেই তৃণমূলের আগামী দিনের ‘কাণ্ডারী’ মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দু’জনের এক জন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ‘ঘর’ দারুণভাবে বাঁচাতে পারলেও, পারলেন না তাঁর দায়িত্বে থাকা জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘাসফুল ফোটাতে।

অন্য জন শুভেন্দু অধিকারী নিজের ‘গড়ে’ বাবা-ভাইকেই সম্মানজনক ব্যবধান দিতে পারলেন না। পারলেন না ‘দুর্ভেদ্য’ বহরমপুরের মাটিতে ঘাসফুলের বিজয়উড়ান ওড়াতে। মালদহের দু’টি আসনের একটিও ছিনিয়ে আনতে পারলেন না তৃণমূলে।

তৃণমূল নেত্রীর ভাইপো অভিষেক তাঁর নিজের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে এ বার ৩ লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতেছেন। পাঁচ বছর আগে যেখানে যুব তৃণমূল সভাপতির ব্যবধান ছিল মাত্র ৭১ হাজার ২৯৮। এই ব্যবধান বৃদ্ধি নিয়ে দলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ভোটের আগেই বিরোধী শিবিরের লোকদের গ্রামছাড়া করার অভিযোগ যেমন উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে, তেমন ভোটের দিনেও বুথ ‘করার অভিযোগ উঠেছিল অভিষেক-বাহিনীর বিরুদ্ধে। ওই কেন্দ্রে দ্বিতীয় বিজেপির নীলাঞ্জন রায় বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেন, ‘‘ভোটের দু’দিন আগে থেকে বহিরাগত এনেছিল তৃণমূল। গণনায় তো অনেক বুথই বিজেপি-শূন্য। ভোট লুঠ করেছে, তারই প্রমাণ!’’ সিপিএম প্রার্থী ফুয়াদ হালিমও বললেন, ‘‘ফলতা, বজবজ, মহেশতলার মতো বিধানসভা এলাকায় বেশিরভাগ বুথেই এজেন্ট দিতে পারিনি। অবাধে ভোট লুঠ করেছিল তৃণমূল।’’ আর অভিষেকের দায়িত্বে থাকা জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার পাশাপাশি কোচবিহার আর পশ্চিম মেদিনীপুরে চূড়ান্ত বিপর্যয় এ বার ঘাসফুলে। বাঁকুড়ার দুই কেন্দ্র বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর ঘাসফুলের বদলে ফুটেছে পদ্ম। পুরুলিয়া, কোচবিহার, মেদিনীপুরও তৃণমূল-বিচ্ছিন্ন হয়ে ভরসা রাখল পদ্মেই।

পঞ্চায়েতে ভোট দিতে না পারার ‘ক্ষোভে’র জবাব দিতেই এ বার মানুষ এই জেলাগুলোয় তৃণমূলের থেকে মুখ ঘুরিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। তার উপর এই চার জেলায় দলের পর্যবেক্ষক অভিষেকের সঙ্গে দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীদের আপাত দূরত্বও কিছুটা হলেও চোরাস্রোতের ভূমিকা নিয়েছে বলে তৃণমূল শিবিরেই গুঞ্জন। যদিও বরাবরের মতোই অভিষেকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। ব্যক্তিগত সচিবকে ফোন করেও মেলেনি অভিষেকের বক্তব্য।

অধিকারী-গড়ের ‘সম্রাট’ শুভেন্দুকেও এ দিন তাঁর নিজের গড় কাঁথি বা তমলুকে কোথাওই দেখা যায়নি। ফোনও নিশ্চুপ। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি, তমলুকে শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী, ভাই দিব্যেন্দু এ বারও জিতেছেন ঠিকই। কিন্তু গত বার দু’জনেরই জয়ের ব্যবধান ২ লক্ষের বেশি ছিল। সেখানে দু’জনেরই ভোট কমেছে ১ লক্ষেরও বেশি। এই ‘ব্যর্থতা’ কার্যত শুভেন্দুরই বলে রাজনৈতিক শিবিরের ধারণা।

অন্যদিকে, ভোটের ঠিক মুখে মালদহ উত্তরের মৌসম বেনজির নূরকে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে এনে বড় ‘উপহার’-চমক দিয়েছিলেন শুভেন্দু। মৌসমকে সেই কেন্দ্রে জিতিয়ে আনাও ছিল শুভেন্দুর ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। আর চ্যালেঞ্জ ছিল বহরমপুরে অধীর চৌধুরীকে পরাস্ত করা। কিন্তু মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুরে ঘাসফুল ফোটালেও অধীরকে হারানোর চ্যালেঞ্জে হেরেই গিয়েছেন শুভেন্দু। সঙ্গে কান্দি বিধানসভাও ছিনিয়ে আনতে পারেননি কংগ্রেসের থেকে। ওই কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক অপূর্ব সরকারকে তৃণমূলে এনে বহরমপুরে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। বিরোধী গড়ের মালদহ, মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি রায়গঞ্জেরও দায়িত্ব ছিল অধিকারী-নবাবের উপরেই। সেখানেও গেরুয়া উড়ান। অনেকেরই মতে, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরে পুরবোর্ড, পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ যে ভাবে শুভেন্দু ‘দখল’ করেছিলেন, কংগ্রেস, বাম বিধায়কদের ভাঙিয়ে যে ভাবে তৃণমূলের ‘শক্তি’ বাড়িয়েছিলেন, অনেকের মতে, তার ‘জবাব’ই ভোটারেরা দিয়েছেন, শাসক দলকে ভোট না দিয়ে।

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Election Results 2019 Abhishek Banerjee Shuvendu Adhikari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy