Advertisement
E-Paper

LGBTQ: খারাপ অভিজ্ঞতা ভুলে একত্রবাসের ইচ্ছে দুই নারীর

এক নিঃসন্তান দম্পতির দত্তক-সন্তান তিনি। ২০১৯ সালে মাধ্যমিক দেন। পাশ করতে পারেননি। বিয়ে দিয়ে দেন অভিভাবকেরা। ছেলে হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রকাশ পাল , সুশান্ত সরকার 

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২ ০৬:২২
Share
Save

মনের কোণে পুরুষের প্রতি বিরূপ দু’জনেই। তাই ওঁরা একসঙ্গে থাকতে চান। ভুলতে চান সংসারের ‘খারাপ’ অভিজ্ঞতা। তবে, দুই যুবতীর একসঙ্গে থাকার ক্ষেত্রে বাধাও কম নয়। সেই বাধাই তাঁরা অতিক্রম করতে চান। দ্বারস্থ হয়েছেন পুলিশের। সমকামীদের নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মীরা তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

দুই যুবতীরই বাড়ি হুগলিতে। এক জনের বলাগড়ে। অন্য জনের পোলবা-দাদপুর ব্লকে। বলাগড়ের যুবতীর পড়াশোনা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তার পরে বিয়ে হয়ে যায়। সংসার টেকেনি। তার পরে ফের বিয়ে। সেই সংসারও স্থায়ী হয়নি। যুবতীর অভিযোগ, দু’বারেই স্বামীর অত্যাচার তাঁকে সংসারে থিতু হতে দেয়নি। তখন থেকেই তাঁর ‘পুরুষ-বিদ্বেষ’।

অন্য জন জানান, এক নিঃসন্তান দম্পতির দত্তক-সন্তান তিনি। ২০১৯ সালে মাধ্যমিক দেন। পাশ করতে পারেননি। বিয়ে দিয়ে দেন অভিভাবকেরা। ছেলে হয়। মেয়েটির অভিযোগ, পেশায় মৎস্যজীবী স্বামী মারধর করতেন। অকারণে ঘর থেকে বার করে দিতেন। বছর দুয়েক পরে সংসার ছেড়ে তিনি বেরিয়ে আসেন। সন্তানকেও হাতে পাননি। অত্যাচারিত হলেও অভিভাবকদের কথায় থানা-পুলিশ করেননি।

দুই যুবতী জানান, বছর খানেক আগে ফেসবুকে তাঁদের আলাপ হয়। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। যন্ত্রণার কাহিনি পরস্পরকে খুলে বলেন। পরস্পরের বাড়িতে এসে থাকা শুরু করেন তাঁরা। সিদ্ধান্ত নেন, আর পুরুষের সঙ্গ নয়, দুই নারী মিলেই সংসারকরবেন। মাস দেড়েক আগে তাঁরা মন্দিরে বিয়ে করেন।

বিপত্তি এখানেও। দুই পরিবারই এ বিয়ে মানতে নারাজ। দু’জনের কারও বাড়িতেই একসঙ্গে থাকা হয়নি। আপত্তি করেন পাড়া-পড়শিরাও। সোমবার গুপ্তিপাড়া ফাঁড়িতে গিয়ে ওই দুই যুবতী তাঁদের সমস্যার কথা জানান। পরে তাঁরা জানান,দু’জনেই স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার ব্যাপারে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আপাতত নিজেদেরবাড়িতে নয়, অন্যত্র ঘর ভাড়া নিয়ে থাকবেন। তাঁরা ছোটখাটো কাজ করেন। সেই রোজগারেই পেট চালানোর চেষ্টা করবেন।

সমকামিতা এখন অপরাধ নয়। কিন্তু, সমলিঙ্গে বিয়ে এখনও এ দেশে আইনসম্মত নয়। হুগলির এক ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বলেন, ‘‘ওই দু’জন পরিস্থিতির শিকার হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু, তাঁদের বিয়ের আইনি ভিত্তি নেই।’’ এক আইনজীবীর কথায়, ‘‘সমকামিতা অপরাধ না হলেও ওঁরা আইনত পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন না। এ দেশের আইন বা সংবিধানে সেই সংস্থান নেই।’’ বর্তমান সমাজে অনেকেই সমলিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বসবাস করেন। সম্প্রতি দুই পুরুষের বিয়ের সাক্ষী হয়েছে কলকাতা।

দুই যুবতীই জানান, দু’টি মেয়ে যে বিয়ে করতে পারে না, বিষয়টি তাঁদের জানা ছিল না। না জেনে তাঁরা ওই ‘ভুল’ করেছিলেন। তবে, তাঁরা একসঙ্গেই থাকতে চান। সমাজের তথাকথিত নিয়মে আর বাঁধা পড়তে চান না।

রূপান্তরকামী ও সমকামীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘কলকাতা আনন্দম ফর ইকোয়ালিটি অ্যান্ড জাস্টিস’ এবং ‘স্যাফো ফর ইক্যুয়ালিটি’র সদস্যেরা ওই দুই যুবতীর সমস্যার কথা শুনেছেন। আনন্দমের সম্পাদিকা সিন্টু বাগুই বলেন, ‘‘আমরা ওঁদের সঙ্গে কথা বলব। কী ভাবে ওঁদের পাশে থাকা যায়, দেখব।’’ ‘স্যাফো ফর ইক্যুয়ালিটি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা মীনাক্ষী সান্যাল বলেন, ‘‘ওই দু’জনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা বোঝার চেষ্টা করব। পুলিশের সঙ্গেও কথা বলব। যদি সম্ভব হয়, ওঁদের পরিবার বা পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করব।’’ মীনাক্ষী জানান, ওই দুই যুবতীর যদি রোজগার বা থাকা-খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও দরকার হয়, সে ব্যাপারেও তাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।

LGBTQ Lesbian love
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy