Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal News

ট্রেনের জানালা দিয়ে উড়ে এল কাচের বোতল! হাতে-মুখে ক্ষত নিয়ে তীব্র আতঙ্কে তরুণী

দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করেন মৌসুমি। থাকেন গড়িয়ার একটি মেসবাড়িতে। ছুটিতে ক্যানিংয়ের তাঁতকল পাড়ায় নিজের বাড়িতে বাবা-মাকে দেখতে গিয়েছিলেন।

ট্রেনের মধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তরুণী। —নিজস্ব চিত্র

ট্রেনের মধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তরুণী। —নিজস্ব চিত্র

বিদীপ্তা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ২২:১৯
Share: Save:

ট্রেনের হাওয়ায় বেশ শীত শীত করছিল। কিন্তু শরীরটাও ভাল ছিল না। তাই ঠান্ডা উপেক্ষা করেই শিয়ালদহগামী ক্যানিং লোকালের মহিলা কামরায় জানলার ধারে বসেছিলেন মৌসুমি। চোখে-মুখে ঠান্ডা হাওয়াটা বেশ আরাম দিচ্ছিল। কিছুক্ষণের জন্য একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ঠিক তখনই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা ঘটল তাঁর সঙ্গে।

ঘুটিয়ারি শরিফ স্টেশন ছাড়ার পরই জানলা দিয়ে আচমকা উড়ে এল একটা কাচের বোতল। বোতলের ভাঙা কাচে হাতে, মুখে ক্ষত নিয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন ক্যানিংয়ের ওই তরুণী রেলযাত্রী। সোনারপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও এখনও আতঙ্কের ঘোর কাটেনি মৌসুমি মাইতি নামে ওই তরুণীর। সোনারপুর জিআরপি-তে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনও কেঁপে কেঁপে উঠছেন।

ক্যানিং থেকে ট্রেন ছেড়েছিল সন্ধ্যা সাতটা কুড়ি মিনিটে। তালদি, বেতবেড়িয়া ছাড়িয়ে ঘুটিয়ারি শরিফে ট্রেন পৌঁছয় সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার কিছু পরে। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে একটু গতি বাড়াতেই আচমকা ছুটে আসে ওই কাচের বোতল। জানলার লোহার রডে লেগে ভেঙে গিয়ে কাচের টুকরোগুলো ঢুকে যায় তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে। হাতের কনুইয়ের অনেকটা অংশ কেটে যায়। কাচের টুকরো বিঁধে যায় গলা ও মুখের বিভিন্ন অংশেও।

দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করেন মৌসুমি। থাকেন গড়িয়ার একটি মেসবাড়িতে। ছুটিতে ক্যানিংয়ের তাঁতকল পাড়ায় নিজের বাড়িতে বাবা-মাকে দেখতে গিয়েছিলেন। কলকাতায় ফিরে মঙ্গলবারই কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। তার আগেই এই ঘটনা।

সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন মহিলা সহযাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: বিমানে বসে বন্ধুর সঙ্গে মস্করাই বিপদ ডেকে আনল বেলেঘাটার ছাত্রের

তাঁর চিৎকার শুনে যখন সহযাত্রীরা এগিয়ে গিয়েছেন, মৌসুমির মুখ-গলা-হাত থেকে তখন গলগল করে রক্ত ঝরছে। আর আতঙ্কে, যন্ত্রণায় তীব্র চিৎকার করছেন মৌসুমি। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়েও শিউরে উঠছিলেন মৌসুমি। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে বুঝতে পারিনি কী হয়েছে। কিছু একটা যেন তীব্র বেগে এসে লাগল আমার গায়ে। তারপর কয়েক মুহূর্তের জন্য অচৈতন্য হয়ে পড়ি। সংজ্ঞা যখন ফিরল প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল হাতে, মুখে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল। শুধু একটাই কথা মনে হচ্ছে, আমি তো কোনও ক্ষতি করিনি, ওরা আমার সঙ্গে এ রকম কেন করল!’’

আরও পড়ুন: বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’! দূষণে দিল্লির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে কলকাতা

এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘যে দিকে ঘটেছে ঘটনাটি আমি তার থেকে কিছুটা দূরে ছিলাম। এই সময়ে শিয়ালদহগামী ট্রেন বেশ ফাঁকা থাকে। মোবাইলে একটা সিনেমা দেখছিলাম। হঠাৎ খুব জোর একটা ঝনঝন শব্দ। চমকে উঠি। ঠিক যেন একসঙ্গে অনেকগুলো কাচ ভাঙল। আমার মতো কামরায় উপস্থিত আরও অনেকে তখন শব্দটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কী হয়েছে বোঝার জন্য আমরা প্রত্যেকেই একে অপরের মুখের দিকে চাইছিলাম। কিছু পরেই ওঁর চিৎকার শুনে ছুটে যাই আমরা। দেখি, মুখে দু’হাত চাপা দিয়ে আমাকে বাঁচাও বলে কাঁদছে। আর সিটের উপরে- নীচে কাচের টুকরোগুলো গড়াগড়ি খাচ্ছে।’’

চোখে-মুখে জল দিয়ে সহযাত্রীরা তাঁর ক্ষতে মলম লাগিয়ে দেন। সহযাত্রীদের সাহায্যে সোনারপুর স্টেশনে নেমে জিআরপি-তে অভিযোগ দায়ের করেন মৌসুমি। তারপর রেল পুলিশের সাহায্যে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সোনারপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডান হাতের কনুইয়ের কাছে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। হাতের অন্যান্য জায়গায়, গলায়, মুখে ভাঙা কাচের টুকরো ঢুকে ক্ষত হয়েছে।

সোনারপুর জিআরপি-র কর্তব্যরত অফিসার দিলীপকুমার ঘোষ জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়ার পর রাতেই ওই এলাকায় একটি দল পাঠানো হয়েছে। অভিযান শুরু হয়েছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় সন্ধের পরের ট্রেনগুলিতে এই ধরনের ঘটনা হামেশাই ঘটে। ছোটখাটো চুরি-ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ইট-পাটকেল, বোতল ছোড়ার মতো ঘটনার বিরাম নেই। কিন্তু রেল পুলিশের সে দিকে তেমন নজর নেই। যদিও দিলীপবাবুর দাবি, নিয়মিত অভিযান চালানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Canning Train Bottle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE