Advertisement
E-Paper

পড়ুয়া পিছু মনোযোগে সফল বাঁকুড়া

ফি বছরই বাঁকুড়ার ছাত্রছাত্রীদের তাক লাগানো ফল আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। সেই ফলে একটা বড় ভূমিকা থাকে বাঁকুড়া জেলা স্কুলের।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ০৪:০২

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে প্রথম দশের তালিকায় বাঁকুড়া জেলার পড়ুয়াদের উপস্থিতি যেন অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া—ছাত্র ও ছাত্রীদের ফলের শতকরা হিসেবে জঙ্গলমহলের এই তিন জেলার মধ্যে বাঁকুড়া দ্বিতীয় (আগে মেদিনীপুর, পরে পুরুলিয়া)। কিন্তু ফি বছরই বাঁকুড়ার ছাত্রছাত্রীদের তাক লাগানো ফল আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। সেই ফলে একটা বড় ভূমিকা থাকে বাঁকুড়া জেলা স্কুলের। এ বার জেলা স্কুলের সঙ্গে টক্কর দেওয়া তো বটেই মেধা তালিকায় প্রথম জায়গাটিও দখল করেছে বাঁকুড়া শহর লাগোয়া পোয়াবাগান বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতন হাইস্কুল।

২০১৩ থেকে পর-পর তিন বছর বেসরকারি স্কুল বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতন থেকে এক জন করে প্রথম দশে এসেছিল। এ বার তাদের অন্বেষা পাইন মেধা তালিকার শীর্ষে। স্কুলের পাঁচ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে প্রথম দশে। ২০১৫ সালে জেলা স্কুলের ১০ জন প্রথম দশে ছিল। এ বার অন্বেষার থেকে এক নম্বর কম পেয়ে দ্বিতীয় তাদের মোজাম্মেল হক। সেরা দশের তালিকায় রয়েছে ছ’জন। প্রথম দশটি স্থানে যে ৬৮ জন রয়েছে, তাদের মধ্যে বাঁকুড়ার পরীক্ষার্থী ১৭। বাঁকুড়া গার্লস হাইস্কুল, জয়পুর হাইস্কুল, বড়জোড়া হাইস্কুল, সোনামুখীর বিন্দুবাসিনী জুবিলি হাইস্কুল, মড়ার সম্মিলনী হাইস্কুলের পড়ুয়ারাও জায়গা করে নিয়েছে মেধা তালিকায়।

এমন ফলের রসায়নটা কী?

শিক্ষকদের দাবি, দু’টি স্কুলেই (‌জেলা স্কুল এবং বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতন) ছোট থেকে প্রত্যেক পড়ুয়াকে প্রশ্ন করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। ‘‘অমুক দাদা বা দিদি এমন রেজাল্ট করতে পারলে, তোরা পারবি না কেন?’’—এমন আকাঙ্ক্ষার বীজ বোনা হয় বছর বছর। আর সফলেরা কোন পথে হেঁটে চড়াই পেরিয়েছে, শোনানো হয় সে কাহিনী। তবে বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতনের প্রধানশিক্ষক তপনকুমার পতির দাবি, ‘‘বাচ্চাদের শুধু তাতালেই হবে না। কোন বাচ্চার কোন জিনিসটা সংশোধন করা দরকার— আমরা নজর দিই সে দিকে।’’

বাঁকুড়া জেলা স্কুলের প্রধানশিক্ষক বারিদবরণ মিশ্র প্রায় সহমত। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষকেরা যদি ছাত্রদের জানার ইচ্ছেয় মদত দেন, একের সঙ্গে এক ভিত্তিতে সমস্যার সুরাহা করেন, তা হলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। গ্রুপ-স্টাডিতে জোর দেওয়াতেও বাড়তি সুফল মিলেছে।’’

অভিভাবকদের একটা বড় অংশের ধারণা, দু’টি স্কুলেই পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাতেরও অবদান রয়েছে এই ফলের পিছনে। বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতনে ৩৫ জন পড়ুয়ার জন্য এক জন করে শিক্ষক রয়েছেন। জেলা স্কুলে ৪০ জন ছাত্র পিছু শিক্ষক রয়েছেন এক জন। বারিদবাবু বলছেন, ‘‘পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষকদের সরাসরি যোগাযোগ না হলে, ধারাবাহিক ভাবে ভাল ফলের আশা করা যায় না।’’

জেলার বাসিন্দা রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ দে-র ধারণা, ‘‘অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এ জেলার পড়ুয়াদের পরিশ্রমে আপত্তি নেই। হয়তো সেটাই কাজে আসছে।’’ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি গৌতম দাসের সংযোজন, “পড়ানোর পদ্ধতিতে আধুনিকতা আনছে বহু স্কুল। সাফল্যের সেটাও কারণ।’’

বাঁকুড়া তো আছেই, সামগ্রিক ভাবেই ধারাবাহিক ভাল ফল করে আসছে জেলার ছাত্রছাত্রীরা। সেখানে কলকাতা পিছিয়ে পড়ল কেন? শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘কলকাতার বেশ কয়েকজন কিন্তু মেধা তালিকায় রয়েছেন। তবে জেলার ছেলেরা পড়াশোনায় অনেক মনোযোগী। কলকাতার ছেলেরা সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে।’’

Madhyamik Result 2017 Madhyamik WBBSE মাধ্যমিক Bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy