Advertisement
E-Paper

খবর শুনেই হাসি ফুটল কুণালের মুখে

তাঁর মাধ্যমেই সৃঞ্জয় বসুর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সুদীপ্ত সেনের। আদালতে দাঁড়িয়ে সেই সৃঞ্জয়ের গ্রেফতারের খবর শুনে শুক্রবার হাসি ফুটল কুণাল ঘোষের মুখে। স্বপনসাধন (টুটু) বসুর পুত্র ৩৮ বছরের সৃঞ্জয় পড়েছেন ডন বসকো স্কুলে। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস কোর্সে বাণিজ্য শাখায় স্নাতক। এক সময়ে মোহনবাগান ক্লাবের সর্বময় কর্তা ছিলেন তাঁর বাবা। তা ছাড়াও জাহাজ থেকে মাল খালাস, সংবাদপত্র, কেটারিং-সহ বহু ব্যবসার মালিক টুটুবাবু। দুবাইয়ে মালয়ালি এবং হিন্দি ভাষায় রেডিও নেটওয়ার্ক, রেকর্ডিং স্টুডিও রয়েছে তাঁর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৬
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

তাঁর মাধ্যমেই সৃঞ্জয় বসুর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সুদীপ্ত সেনের। আদালতে দাঁড়িয়ে সেই সৃঞ্জয়ের গ্রেফতারের খবর শুনে শুক্রবার হাসি ফুটল কুণাল ঘোষের মুখে।

স্বপনসাধন (টুটু) বসুর পুত্র ৩৮ বছরের সৃঞ্জয় পড়েছেন ডন বসকো স্কুলে। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস কোর্সে বাণিজ্য শাখায় স্নাতক। এক সময়ে মোহনবাগান ক্লাবের সর্বময় কর্তা ছিলেন তাঁর বাবা। তা ছাড়াও জাহাজ থেকে মাল খালাস, সংবাদপত্র, কেটারিং-সহ বহু ব্যবসার মালিক টুটুবাবু। দুবাইয়ে মালয়ালি এবং হিন্দি ভাষায় রেডিও নেটওয়ার্ক, রেকর্ডিং স্টুডিও রয়েছে তাঁর। পারিবারিক সূত্রে ওই সব সংস্থার মালিকানার অংশীদার সৃঞ্জয়। ১৯৯২ সালে সংবাদপত্রের ব্যবসায় নামেন টুটুবাবু। বাংলা দৈনিক ছাড়াও পরে একটি ইংরেজি দৈনিকের আঞ্চলিক স্বত্বও ছিল তাঁর। কিছু দিন চালানোর পরে ওই ইংরেজি দৈনিকের স্বত্ব ছেড়ে দেন টুটুবাবু। তবে বাংলা দৈনিকের মালিকানা নিজের হাতেই রাখেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওই সংবাদপত্রের পূর্ণ দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন সৃঞ্জয়। এই দৈনিক সূত্রেই কুণালের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা। আর তার সুবাদেই যোগাযোগ সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে।

এক সময়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ঘনিষ্ঠ টুটুবাবুর সঙ্গে পরে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তিনি তৃণমূলের সমর্থনে রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন। টুটুবাবুর পরে ২০১১ সালের অগস্ট মাসে রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ হন পুত্র সৃঞ্জয়। তিনি এখন কয়লা ও ইস্পাত, জাহাজ এবং শিল্প মন্ত্রকের সংসদীয় পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য।

সাংসদ হিসেবে সৃঞ্জয়বাবু তাঁর আয়ের যে হিসেব নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছেন সেখানে দেখানো হয়েছে, তাঁর সম্পত্তির মোট পরিমাণ ২২ কোটি টাকার কিছু বেশি। যার অর্ধেকই নগদ টাকা। তা ছাড়াও

মালিক হিসেবে বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার হিসেবে রয়েছে আরও প্রায় ৫ কোটি টাকা। প্রায় ৯৯ লক্ষ টাকার বিমাও রয়েছে তাঁর। তবে এ সমস্তই তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর মিলিত হিসেব। এর বাইরে প্রায় ৩ কোটি টাকার জমি-বাড়ি এবং বহুমূল্য গয়না রয়েছে তাঁর দাখিল করা হিসেবে। জানা গিয়েছে, সৃঞ্জয়কে গ্রেফতারের পরে তাঁর নগদ টাকার হদিস পাওয়ার জন্য আয়কর দফতরের সাহায্য চেয়েছে সিবিআই।

২০০৯-১০ সালে কুণাল ছিলেন সৃঞ্জয়ের মালিকানাধীন বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক। সিবিআই অফিসারদের অভিযোগ, ওই সময়ে বাজার থেকে সারদা কোটি কোটি টাকা তুলছিল। বেআইনি ভাবে বাজার থেকে সুদীপ্ত সেন ওই টাকা তুলছেন বলে সৃঞ্জয়ের ওই সংবাদপত্রে নিয়মিত লিখতে শুরু করেছিলেন কুণাল। সূত্রের খবর, এতে চাপে পড়ে যান সুদীপ্ত। আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি হয়ে যান সারদা-কর্তা। তত দিনে সৃঞ্জয় ও কুণাল বুঝে গিয়েছিলেন, সুদীপ্তকে চাপ দিলে বড় রকমের আর্থিক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। মূলত সুদীপ্তকে ভয় দেখিয়ে আলোচনার টেবিলে আনার জন্যই পর পর ওই বাংলা দৈনিকে সুদীপ্ত-র বিরুদ্ধে লেখা হয়েছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। সিবিআইয়ের অভিযোগ, পরে চাপ ও হুমকি দিয়েই চুক্তির টাকা ও তার বাইরেও সুবিধা নিয়েছিলেন কুণাল ও সৃঞ্জয়বাবু। তদন্তকারীরা জেনেছেন, কুণাল, সৃঞ্জয়ের সঙ্গে সুদীপ্তর যে আলোচনা হয়, তাতে আরও বেশ কয়েক জন প্রভাবশালীও উপস্থিত ছিলেন।

২০১০ সালের শুরুতে মিডিয়া ব্যবসায় নামার সিদ্ধান্ত নেন সুদীপ্ত। তার পর থেকে একের পর এক সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যম কিনতে শুরু করেন তিনি। একটি বাংলা দৈনিক ও আর একটি ইংরেজি দৈনিক দিয়ে তাঁর যাত্রা শুরু। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শান্তনু ঘোষের কাছ থেকে ‘চ্যানেল টেন’ নামে একটি বাংলা চ্যানেলও কেনেন সুদীপ্ত। তার পরে একে একে আরও বেশ কয়েকটি পত্রিকা তাঁর ছাতার তলায় চলে আসে। এ ছাড়াও অসমে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিক শুরু করেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবি, “পরে সুদীপ্ত জেরার মুখে জানান, তাঁকে কার্যত জোর করেই ওই সব সংবাদপত্র ও চ্যানেল কেনানো হয়েছিল।”

সিবিআই সূত্রের খবর, জেরার মুখে সৃঞ্জয় জানান, সারদা ও তাঁর মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেই মোতাবেক তিনি সুদীপ্তর কাছ থেকে মাসে ৬০ লক্ষ করে টাকা নিতেন। তদন্তকারীদের অভিযোগ, এ ভাবে সৃঞ্জয়কে মোট ২০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন সুদীপ্ত। সিবিআইকে সুদীপ্ত বলেছেন, তাঁর চ্যানেলকে যে সংবাদ দেওয়া হত, তাতে মূলত তৃণমূলের গুণগানই থাকত। তাঁর অভিযোগ, এই চ্যানেলে যাতে শুধু তৃণমূলের গুণগানই দেখানো হয়, তা নিশ্চিত করার জন্যই কুণাল ঘোষকে চ্যানেল টেন-এর হর্তাকর্তা হিসেবে বসিয়ে দেন সৃঞ্জয়। তবে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের বক্তব্য, সৃঞ্জয় সামনে থাকলেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের কয়েক জন এর পরিকল্পনা করেছিলেন। সিবিআইয়ের অভিযোগ, বিনিময়ে তৃণমূল নেতৃত্ব এবং পরবর্তী কালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সারদার বেআইনি কাজকারবারে চোখ বুজে থাকবেএমন প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল সুদীপ্ত সেনকে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, ডেলো পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানেও তাঁকে একই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সুদীপ্ত সিবিআইকে জানিয়েছেন, তিনিও মমতাকে পাল্টা আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁর এতগুলি মিডিয়ার প্রচার দিয়ে তিনি মমতাকে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে দেবেন।

সারদা কেলেঙ্কারিতে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালত তাঁদের নির্দেশে বলেছিল, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালীদের ধরাই হবে সিবিআইয়ের কাজ। সৃঞ্জয়কে গ্রেফতার করে সেই কাজে আরও এক ধাপ এগোনো গেল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

সিল হল শুভার অ্যাকাউন্ট

তৃণমূল ঘনিষ্ঠ চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের বেশ কিছু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও মেয়াদি আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) সিল করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইডি সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে এর সংখ্যা ২৬। সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনকে বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি টাকায় একটি চালু না হওয়া চ্যানেল বিক্রির অভিযোগ রয়েছে শুভাপ্রসন্নর বিরুদ্ধে। এমনকী বিক্রির পরেও ওই চ্যানেলের শীর্ষ কর্তা হিসেবে রয়ে যায় শুভাপ্রসন্নর নাম। সিবিআই এবং ইডি-র অভিযোগ, চ্যানেল বিক্রির পরেও নানা সুযোগ নিয়েছেন শুভাপ্রসন্ন। দুই কেন্দ্রীয় সংস্থাই তাঁকে জেরা করে। সূত্রের খবর, এত দিন যা যা নথি শুভাপ্রসন্ন-র কাছে চাওয়া হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট নয় ইডি।

saradha scam srijoy bose mamata bandyopadhay CBI Good news hearing Kunal face came smile jail madan mitra state news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy