Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

আচার্যের উপাচার্য-বৈঠকে রাজ্যের ‘না’

আচার্য চেয়েছিলেন উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে, শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতেই। ভর্তির মরসুমের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পঠন-পাঠন নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলেন তিনি। তবে তা চাইছে না রাজ্য সরকার। তাই আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর ডাকা উপাচার্য সম্মেলনের প্রস্তুতি মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

কেশরীনাথ ত্রিপাঠী

কেশরীনাথ ত্রিপাঠী

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৩৭
Share: Save:

আচার্য চেয়েছিলেন উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে, শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতেই। ভর্তির মরসুমের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পঠন-পাঠন নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলেন তিনি। তবে তা চাইছে না রাজ্য সরকার। তাই আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর ডাকা উপাচার্য সম্মেলনের প্রস্তুতি মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

রাজভবন সূত্রের খবর, রাজ্য এই ধরনের আলোচনা কেন এখনই চাইছে না, রাজভবনে গিয়ে তা জানানোর কথা ছিল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু ‘ব্যস্ততা’র কারণে তিনি এখনও রাজ্যপালকে তা জানাতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। রাজভবন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের এই মনোভাবে, বিশেষত শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যপালকে এ নিয়ে বিস্তারিত জানানোর কথা বলেও তা এখনও না করায় ‘অসন্তুষ্ট’ কেশরীনাথ।

রাজভবনের বক্তব্য, আচার্য হিসেবে উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক করার পূর্ণ অধিকার রাজ্যপালের রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আইনে আচার্যের যে ভূমিকার কথা বলা হয়েছে, তাতেই সে কথা স্পষ্ট। অতীতে রাজ্যপাল তথা আচার্য হিসেবে গোপালকৃষ্ণ গাঁধী বা এম কে নারায়ণনও উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ব্রাত্য বসু শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন যখন বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বড়সড় পরিবর্তন এসেছিল, তখনও নারায়ণন উপাচার্যদের নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সমস্যার জেরে অচলাবস্থার সময়ে উপাচার্য আচার্যের কাছে এসেছিলেন।

আরও পড়ুন: বৈধতা পেলেই কি ন্যায্য, বলছে বিরোধীরা​

রাজভবনের এক মুখপাত্রের এ-ও বক্তব্য, আচার্য হিসেবে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে নতুনত্ব কিছু নেই। ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই এ রাজ্যে আসার পর কেশরীনাথ ত্রিপাঠী অবশ্য উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক ডাকেননি। সে কারণে এ বছর ভর্তি-পর্বের আগে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা চেয়েছিলেন। শিক্ষামন্ত্রীকেও সেখানে থাকতে অনুরোধ করেছিলেন কেশরীনাথ।

এ প্রসঙ্গে পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘উপাচার্যদের সঙ্গে আচার্যের আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু সময়, পরিস্থিতি এবং বিষয় উপযুক্ত হতে হবে। আমাদের মনে হয়নি, এখনই তেমন আলোচনার দরকার আছে।’’ আগেও তো এমন আলোচনা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও হবে। তবে তা রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে হতে পারে না।’’ কিন্তু তাঁর উপস্থিতিতেই তো বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষামন্ত্রীর জবাব, ‘‘ভর্তির মরসুমে এই বৈঠক হওয়ার প্রয়োজন ছিল বলেই রাজ্য সরকার মনে করে না।’’ পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, ‘‘অতীতে কোনও রাজ্যপালকে কোনও রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সম্মেলনে যেতে দেখা যায়নি। কখনও কোনও রাজনৈতিক দলের রাজ্য সভাপতির হাত থেকে অস্থিকলস নিতেও দেখা যায়নি। রাজভবনের পবিত্রতা রাখার দায় সেখানকার অভিভাবকের।’’ তিনি যে যেতে পারছেন না, রাজভবনে গিয়ে তা জানালেন না কেন? পার্থবাবু জানান, সময়-সুযোগ মতো তিনি তা জানিয়ে দেবেন।

পার্থবাবু যে সব প্রসঙ্গ তুলেছেন, সে বিষয়ে রাজভবনের এক মুখপাত্র জানান, রাজ্যপাল বৃহস্পতিবার হাওড়ায় শরৎ সদনে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের কৃতী ছাত্র সম্মাননা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেটি কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ছিল না। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অটলবিহারী বাজপেয়ীর যে অস্থিকলস পাঠিয়েছেন, তা কলকাতায় গ্রহণ করেছিলেন তিনি।

তবে নবান্নের খবর, রাজভবনের সঙ্গে সরকারের বিরোধের কারণ একাধিক। পঞ্চায়েত ভোট পর্ব থেকেই পর পর দিল্লিতে বিশেষ রিপোর্ট পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘বিরাগভাজন’ হয়েছেন কেশরীনাথ। এছাড়া, ঘনিষ্ঠমহলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE