Advertisement
E-Paper

টাকা দিলেই আধিপত্য নয়, প্রেসিডেন্সিতে বার্তা অমর্ত্যর

আধিপত্য নয়, সহায়তা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, তার লক্ষ্মণরেখা এই ভাবেই টেনে দিতে চাইলেন অমর্ত্য সেন। বিশেষত সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি হয় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উৎকর্ষ-কেন্দ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩২
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে অমর্ত্য সেন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে অমর্ত্য সেন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

আধিপত্য নয়, সহায়তা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, তার লক্ষ্মণরেখা এই ভাবেই টেনে দিতে চাইলেন অমর্ত্য সেন। বিশেষত সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি হয় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উৎকর্ষ-কেন্দ্র।

প্রেসিডেন্সির দ্বিশতবর্ষ উদ্‌যাপনের সূচনায় বুধবার এক বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নোবেলজয়ী প্রাক্তনীকে সাম্মানিক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করল বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেই অমর্ত্যবাবু বলেন, ‘‘এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হওয়ার পিছনে তৎকালীন কলকাতার নাগরিক সমাজের বড় ভূমিকা ছিল। এখনও এই প্রতিষ্ঠানকে নাগরিক সমাজের অঙ্গ হিসেবেই দেখা প্রয়োজন, কোনও সরকারি কলেজ হিসেবে নয়।’’ এই প্রসঙ্গেই অমর্ত্য খুব স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি সাহায্য প্রয়োজন, কিন্তু আধিপত্য নয়।’’

অমর্ত্যবাবুর এই কথায় স্বাভাবিক ভাবেই আলোড়ন তৈরি হয়েছে রাজ্যের শিক্ষা জগতে। কারণ, ‘মাইনে দিই, তাই নাক গলাব’— শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কে এটাই বর্তমান সরকারের ঘোষিত নীতি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজে এ কথা একাধিক বার বলেছেন। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্য সরকারেরই প্রতিষ্ঠান। ফলে তার বেলায় সরকারের অবস্থান আলাদা হবে, এমনটা স্বাভাবিক ভাবেই আশা করেন না শিক্ষাবিদরাও। বস্তুত, গত কয়েক বছরে প্রেসিডেন্সিতে নানা ঘটনায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার চেষ্টা হয়েছে বলেও অভিযোগ। সেই প্রেক্ষাপটে অমর্ত্যবাবুর মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে শিক্ষাজগতে।

রাজ্যে পালাবদলের পরে বাম জমানার অনিলায়নের ধারা ছিন্ন করে, রাজনীতির কবল থেকে শিক্ষাকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠা, উৎকর্ষের জন্য রাজনীতির ছোঁয়াচমুক্ত মেন্টর গ্রুপ তৈরি করা— এ সবই ছিল সেই লক্ষ্যের দিকে কয়েক কদম। অমর্ত্য সেনকেই ডেকে আনা হয়েছিল মেন্টর গ্রুপের উপদেষ্টার দায়িত্ব দিয়ে। এ দিন সেই অমর্ত্যই যখন অবাঞ্ছিত আধিপত্যের সতর্কবাণী উচ্চারণ করছেন, তখন মঞ্চে উপস্থিত প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়াও।

গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্সির জন্য অনুদান ঘোষণা করতে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে অনুরাধা যে ভঙ্গিতে মাথা নুইয়ে অনুদান গ্রহণ করেছিলেন তার বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের একাংশ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সফরে অনুরাধার সঙ্গী হওয়াকে কেন্দ্র করেও বিতর্ক হয়েছে। অমর্ত্য সেনের মন্তব্যের পরে সেই সব পুরনো বিতর্কও মাথা চাড়া দিয়েছে। সুগতবাবু পরে বলেন, ‘‘অমর্ত্যবাবু যেটা বলেছেন, তার সঙ্গে আমি একেবারে একমত। সত্যিই তো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার রক্ষা প্রয়োজন।’’ আর অনুরাধাদেবীর দাবি, ‘‘সরকারের কাছ থেকে টাকা নিলেও প্রেসিডেন্সি তার স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে।’’

যদিও শিক্ষাবিদদের অনেকেরই অভিযোগ, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তনটা এমন ভাবে হয়েছে যাতে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থেকে যায়। শুধু আর্থিক দিক দিয়ে নয়, শিক্ষক নিয়োগেও তাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি। সাবেক প্রেসিডেন্সি কলেজের বেশ কিছু শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ করা হলেও, তাঁদের বেতন এবং বদলির নিয়ন্ত্রণ সরকার নিজের হাতেই রেখে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে আর্থিক নিয়ন্ত্রণ না-থাকায় বিদেশ থেকে শিক্ষক নিয়ে এলেও তাঁদের ধরে রাখা যায়নি।

প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় এবং বিদ্যাসাগর বি‌শ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার সমস্ত ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার হস্তক্ষেপ করছেন। অমর্ত্যবাবু সেটা জেনেই এই কথা বলেছেন।’’ শিক্ষাবিদদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার হরণ এই আমলে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারি রাশ আরও চেপে বসেছে। গৌড়বঙ্গ বা রায়গঞ্জ থেকে কল্যাণী, কলকাতা থেকে যাদবপুর— বারবারই সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কাজকর্মে। গত বছর জানুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছিলেন। গত বছরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিগ্রহের ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী বিকাশ ভবনে তলব করেছিলেন তৎকালীন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে।

শিক্ষামন্ত্রী এ দিন গ্যাংটকে। তিনি ফোন ধরেননি, এসএমএস-এরও জবাব দেননি। শিক্ষা দফতরের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, সরকার কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করেনি। যা করেছে ইউজিসি-র নির্দেশিকা মেনেই করেছে।

amartya sen presidency university
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy