সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের দায়িত্বে আসার তিন বছর পূর্ণ করেছেন সিভি আনন্দ বোস। গত রবিবার ২৩ নভেম্বর রাজভবনে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই দিনটিকে উদ্যাপনও করেছেন তিনি। পাশাপাশি নিজের কার্যকালের চতুর্থ বর্ষ শুরুর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ রাজ্যের সব মন্ত্রী ও বিধায়ককে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের শুভেচ্ছাবার্তা তাঁদের দফতরের পৌঁছে গেলেও বিরোধী দলনেতা-সহ বাকি বিধায়কদের চিঠি পাঠানো হয়েছে বিধানসভায়। এই পর্যায়ে রাজভবন থেকে প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহারও সুস্থতা কামনা করে চিঠি লিখেছেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি চিঠি লিখে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আদালতের নির্দেশে সদ্য বিধায়ক পদ হারানো মুকুল রায়কেও। দু’টি চিঠি বিধানসভায় পৌঁছোনোর পরেই বিষয়টি জানাজানি হয়।
বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে জলঘোলা। এ বছর ১৫ মে প্রয়াত হয়েছেন তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস। তাঁর মৃত্যুর প্রায় ছয় মাস কেটে গিয়েছে। রাজ্যপালের দফতর কেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্যদের প্রসঙ্গে খোঁজখবর রাখবেন না? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি, চলতি মাসের ১৩ তারিখেই কলকাতা হাই কোর্টের দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুলের বিধায়কপদ খারিজ করে দিয়েছে। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের কারণে তাঁর বিধায়কপদ খারিজ হয়েছে। আর মুকুলকে বিধায়ক উল্লেখ করে ১৯ নভেম্বর শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। পদচ্যুত প্রাক্তন বিধায়ককে রাজভবন কী ভাবে চিঠি পাঠাল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে আইনমহল। যেহেতু রাজ্যপাল পশ্চিমবঙ্গের সাংবিধানিক প্রধান, তাই তাঁর দফতর থেকে এমন ত্রুটি অনভিপ্রেত বলেই মনে করছেন বিধানসভার সচিবালয়ের আধিকারিকদের একাংশ। এ ছাড়াও বিধানসভার সঙ্গে রাজভবনের সাংবিধানিক যোগাযোগ রয়েছে। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই বিধায়কদের অবস্থান প্রসঙ্গে জানা রাজ্যপালের আশু কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে বলে মনে করছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:
বিধায়কপদ খারিজ হওয়ার পাশাপাশি, মুকুল দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি দেশের রেলমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন। তাই তাঁর মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রসঙ্গে রাজভবনের অবগত থাকা উচিত ছিল বলেই মত তৃণমূল পরিষদীয় দলের। বিষয়টি জানাজানি হতে স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে রাজভবন। এমন ত্রুটি সংক্রান্ত বিষয়ে আনন্দবাজার ডট কমের প্রশ্নের জবাবে রাজ্যপালের ‘অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি’ (ওএসডি) সন্দীপ রাজপুত বলেন, ‘‘কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে হয়তো এমন ভুল করে রাজ্যপালের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। এর আগেও আমরা এই ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। তাই রাজ্যপালের নির্দেশে রাজভবনের চিফ অফ স্টাফ এস কে পট্টনায়েকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এমন ত্রুটির জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের কাছে এই বিষয়ে জবাবদিহি চাওয়া হবে।’’
প্রয়াত ও পদ খারিজ হয়ে যাওয়া বিধায়ককে রাজ্যপালের সুস্থতা কামনা করে চিঠি পাঠানোর ঘটনা বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্রে নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। এ ক্ষেত্রে তাঁদের মত, যাঁরা রাজ্যপালের এই সব কাজ দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের কোনও কাজ করার আগে রাজভবনের গরিমার কথা মাথায় রাখা উচিত ছিল। রাজভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বুধবার সকালেই মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় ফিরেছেন বোস। তাঁর দফতরের এমন ত্রুটির কথা জানতে পেরে বেজায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা গেলে, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি এ বার থেকে রাজ্যপালের স্বাক্ষরযুক্ত সকল চিঠি কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কমিটি অনুমোদন করার পরেই পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।