Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
VC Recruitment

নিয়োগ বিতর্কে ব্রাত্যকে পাল্টা দিলেন বোস, শিক্ষামন্ত্রীর হয়ে আচার্যের নিন্দায় উপাচার্যদের একাংশ

শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল। অভিযোগ করেছিলেন ব্রাত্য। এ বার তারই জবাব দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

image of bratya basu and CV Ananda Bose

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (বাঁ দিকে) আঙুল তুলেছেন রাজ্যপাল বোস (ডান দিকে)-এর দিকে। — ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৩ ১৭:২৮
Share: Save:

আলোচনা মানেই ঐকমত্য হওয়া নয়। উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে রাজ্য শিক্ষা দফতরের সঙ্গে সংঘাতের আবহে এমনটাই জানালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সম্প্রতি তিনি রাজ্যে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ করেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর দফতরের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। এ বার তা নিয়েই শিক্ষামন্ত্রীকে পাল্টা দিলেন রাজ্যপাল। অন্য দিকে, রাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষামন্ত্রীর হয়ে কটাক্ষও করেছেন রাজ্যপালকে। তাঁদের মতে, রাজ্যপাল নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করছেন। ওই উপাচার্যেরা নিয়ম মেনে চলতে চান বলেই জানিয়েছেন।

বোস রাজ্যপাল পদে বসার পর থেকেই রাজভবনের সঙ্গে আলোচনা করে কাজের কথা বলেছিলেন ব্রাত্য। একমত হয়েছিলেন রাজ্যপালও। ক্রমে রাজভবনের সঙ্গে বিকাশ ভবনের দূরত্ব বেড়েছে। সম্প্রতি রাজ্যের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের পর আবারও সংঘাত পরিস্থিতি তৈরি হয়। ব্রাত্য টুইটারে অভিযোগ করেন, যে ভাবে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে, তা ‘নিয়মের পরিপন্থী এবং বেআইনি’। তা নিয়েই সরব হয়েছেন রাজ্যপালও। রাজভবনে ‘তেলঙ্গানা স্টেটহুড উদ্‌যাপন দিবস’-এ তিনি বলেন, ‘‘আলোচনা করা মানেই ঐকমত্য হওয়া নয়।’’ রাজনীতির বৃত্তে ঘোরাফেরা করেন যাঁরা, তাঁদের একাংশ মনে করছেন, শিক্ষা দফতরের মতে নয়, রাজ্যপাল যে নিজের মত মতো চলবেন, এই মন্তব্যেই তিনি তা বোঝাতে চেয়েছেন।

রাজ্যপালের সাম্প্রতিক এই অবস্থান নিয়ে সরব হয়েছেন ‘সরকারপন্থী’ হিসাবে পরিচিত শিক্ষাবিদ এবং প্রাক্তন উপাচার্যদের একাংশ। তাঁদের অনেকেই ওই ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন, যেখানে নতুন অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে রাজ্যপালের সমালোচনায় সরব হয়েছেন তাঁরা। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেব নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যপাল নিয়ম ভাঙছেন। আমরা নিয়ম মেনে চলতে চাই। আমরা অপমানিত। উচ্চ শিক্ষা দফতরের মাধ্যমে নিয়োগ হবে, সেটাই নিয়ম। তিনি সরাসরি নিয়োগের চিঠি পাঠাচ্ছেন। যাঁরা নিয়ম ভাঙতে চান না, তাঁদের তিনি সরিয়ে দিলেন। যাঁরা ভাঙতে চান, তাঁদের মেয়াদ বাড়ালেন। আমি অবাক। বিক্ষুব্ধ।’’

প্রাক্তন উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ মনে করিয়ে দিয়েছেন আচার্য-উপাচার্য সম্পর্ক নিয়ে নিয়মের কথা। তাঁর দাবি, আচার্যের সঙ্গে সরাসরি উপাচার্যেরা যোগাযোগ করবেন না, এটাই নিয়ম। সকলকে আইন মানতে হবে। তাঁরা যে সেই নিয়ম মেনেই পদ হারিয়েছেন, সে দাবিও করেছেন আশুতোষ। পাশাপাশি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সরাসরি রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। এ প্রসঙ্গে আশুতোষ জানিয়েছেন, রাজ্যপালের তলব করা রিপোর্ট তিনি উচ্চশিক্ষা দফতরকে দিয়েছেন বলেই ‘শাস্তি’ পাচ্ছেন। তিন জন নিয়ম মানেননি। ২৪ জন মেনেছেন।

উত্তরবঙ্গের প্রাক্তন উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। উচ্চশিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে উষ্মাও প্রকাশ করেছেন তিনি। ওমপ্রকাশ জানিয়েছেন, বিকাশ ভবনের আগেই সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। উপাচার্যদের মানরক্ষা দফতরের কাজ। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী কাল টুইট করেছেন। এই টুইট আগেই করা উচিত ছিল।’’

কয়েক জন উপাচার্য মনে করেন, এখন বিভিন্ন কলেজে নতুন পড়ুয়াদের ভর্তির মরসুম। সেই সময়ে রাজ্যপালের এই পদক্ষেপ অস্থিরতা তৈরি করবে। এমনিতেই স্নাতক পাঠক্রম তিন বছরের বদলে চার বছরের করা হয়েছে। তার মধ্যে এই পরিস্থিতি জটিলতা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

প্রসঙ্গত, এত দিন উপাচার্য নিয়োগের নিয়ম ছিল, বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়া সন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি) নামের তালিকা দেবে। আচার্যের (পদাধিকারবলে রাজ্যপাল) অনুমোদনের পর সেই তালিকা থেকে উপাচার্যকে বেছে নেওয়া হবে। কিন্তু বর্তমান রাজ্যপালের আমলে প্রচলিত সেই পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষা দফতরের। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে ব্রাত্য শুক্রবার দাবি করেছেন, রাজ্যের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ করেছেন আচার্য। পরিস্থিতিকে ‘অভূতপূর্ব’ বলে ব্যাখ্যা করে আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এর পরেই শিক্ষামন্ত্রী লিখেছিলেনন, ‘‘বেআইনি ভাবে নবনিযুক্ত মাননীয় উপাচার্যদের সকলকে উচ্চশিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে সসম্মান অনুরোধ থাকবে যে, তাঁরা যেন এই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন।’’ ব্রাত্য জানিয়েছেন, এই খবর তিনি পেয়েছেন সংবাদমাধ্যম মারফত।

রাজ্যপাল ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে, কল্যাণী, বর্ধমান, সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, সিদো কানহু বিরসা, কাজী নজরুল, দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, যাদবপুর, বাঁকুড়া, বাবা সাহেব অম্বেডকর এডুকেশন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার ব্রাত্য টুইটে সেই অন্তর্বর্তী উপাচার্যদেরই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। শুক্রবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যদের অনেকেই সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যপালের নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CV Ananda Bose Bratya Basu Governor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE