গত দু’দিনে রাজভবনে ‘আটক’ একগুচ্ছ বিলের মধ্যে পাঁচটিতে সম্মতি দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ওই পাঁচটি বিল সম্মতি দেওয়ার পরেই রাজ্য শাসকদল তৃণমূলের তরফে দাবি উঠেছে, যত দ্রুত সম্ভব অপরাজিতা বিলটিকেও অনুমোদন দিন রাজ্যপাল।
গত বছরের অগস্টে আরজি কর হাসপাতালে যুবতী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পরে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছিলেন, বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা রুখতে কড়া আইন আনা হবে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিশেষ অধিবেশন বসে বিধানসভায়। সেই অধিবেশনেই পাশ হয়ে যায় ‘অপরাজিতা বিল ২০২৪’। তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল রাজভবনে। আট মাস কেটে গেলেও এখনও রাজভবন থেকে ওই বিল অনুমোদিত হয়ে আসেনি।
সম্প্রতি তামিলনাড়ু বিধানসভায় পাশ হওয়া ১০টি বিলে সেই রাজ্যের রাজ্যপাল সম্মতি না-দেওয়ায় সেগুলি আইনে পরিণত করতে পারছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন। রাজ্যপালের ওই ভূমিকার বিরোধিতা করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার। গত ৮ এপ্রিল বিচারপতি জেবি পরদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চে প্রশ্নের মুখে পড়েন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবি। শীর্ষ আদালত জানায়, অনন্তকাল ধরে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল ঝুলিয়ে রাখতে পারেন না রাজ্যপাল। ওই মামলায় সময়সীমা বেঁধে দিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজ্যপালকে। একই ভাবে রাষ্ট্রপতিও অনির্দিষ্ট কাল ধরে বিল আটকে রাখতে পারেন না বলে জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত। এর পরেই রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনে ‘আটক’ বিলগুলি দ্রুত অনুমোদনের দাবি তুলেছিলেন। ঘটনাচক্রে, গত দু’দিনে পাঁচটি বিল-সহ রাজ্যের তথ্য কমিশনের দুই সদস্যের নামেও অনুমোদন দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস।
আরও পড়ুন:
-
পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের স্ত্রীকে তথ্য কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের অনুমতি দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস
-
জম্মু-কাশ্মীরে ঢুকতে চাইছে চিন, ইতিহাস বলছে বাড়াতে চাইছে সীমানাও, শিমলা চুক্তি অগ্রাহ্য করার পাক হুমকি সেই লক্ষ্যেই
-
রাজভবনে আটকে থাকা হাওড়া পুরসভা-সহ দুই বিলে সই রাজ্যপালের! তামিলনাড়ু মামলার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার
অতঃপর অপরাজিতা বিলে রাজ্যপালের অনুমোদন দেওয়ার দাবি তুলে সরব হয়েছেন শাসকদলের নেতারা। পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় যেমন বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায চান অপরাজিতা আইন দ্রুত কার্যকর হোক। কিন্তু রাজ্যপাল এখনও সেই বিলে ছাড়পত্র দেননি। ওই আইন কার্যকর হলে অপরাধীদের মধ্যে এই ধরনের অপরাধ করার বিষয়ে ভয়ভীতি থাকবে। এমন কড়া আইন সমাজে নারীদের ওপর অত্যাচার কমাতে সহায়ক হবে। তাই আমাদের সরকারের দাবি, রাজ্যপাল যে ভাবে পাঁচটি বিলে অনুমোদন দিয়েছেন, সে ভাবেই তিনি দ্রুত অপরাজিতা বিলটিতেও অনুমোদন দিন।’’ স্পিকার বিমান বলছেন, ‘‘দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতে রাজভবনে বিল আটকে থাকার দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি কমে যাবে বলেই মনে করছি। ইতিমধ্যে রাজ্যপাল বেশ কয়েকটি বিলে অনুমোদন দিয়েছেন। আরও অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিল রাজভবনে তাঁর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে এই অপরাজিতা বিলটিও। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে রাজভবনে বিলটি পাঠিয়েছিলাম। এ বার রাজ্যপাল তাঁর দায়িত্ব পালন করে অপরাজিতা বিলে অনুমোদন দিলেই সমাজের মঙ্গল।’’
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছিল, রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যপালের ঝুলিয়ে রাখা ‘বৈধ’ নয়। সুপ্রিম কোর্টের ওই পর্যবেক্ষণের এক মাস পূরণের আগেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া পাঁচটি বিলে অনুমোদন দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস। মঙ্গলবার রাজ্যপাল ‘পশ্চিমবঙ্গ শহর ও দেশ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) (সংশোধনী) বিল ২০২৩’, ‘পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার ও প্রজাস্বত্ব ট্রাইব্যুনাল (সংশোধন) বিল ২০২২’, ‘পশ্চিমবঙ্গ কর ট্রাইব্যুনাল (সংশোধনী) বিল ২০২২’ অনুমোদন করেছিলেন। বুধবার হাওড়া পুরসভা (সংশোধনী) বিল ২০২১ এবং পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণী কমিশন সংশোধনী বিল ২০১৮-তেও অনুমোদন দিয়েছে রাজভবন।