Advertisement
E-Paper

যাদবপুরে সমাবর্তন ক্যাম্পাসেই: রাজ্যপাল

কোথায় সমাবর্তন হবে, সেই বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিলেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। কিন্তু অনুষ্ঠানের নির্ধারিত দিন এগিয়ে আসা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়-প্রধান হিসেবে উপাচার্য সেই ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত আচার্যকেই জানাতে হল, যাদবপুরের সমাবর্তন হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই। উপাচার্যকেও তা জানিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৫
স্কটিশ চার্চ কলেজের এক অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সঙ্গে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

স্কটিশ চার্চ কলেজের এক অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সঙ্গে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

কোথায় সমাবর্তন হবে, সেই বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিলেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। কিন্তু অনুষ্ঠানের নির্ধারিত দিন এগিয়ে আসা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়-প্রধান হিসেবে উপাচার্য সেই ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত আচার্যকেই জানাতে হল, যাদবপুরের সমাবর্তন হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই। উপাচার্যকেও তা জানিয়েছেন তিনি।

এই ঘটনায় আবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর প্রশাসনিক দক্ষতা। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন কোথায় হবে, সেই বিষয়েও রাজ্যপালকে হস্তক্ষেপ করতে হল কেন? উপাচার্য কেন সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না? প্রতিষ্ঠান-প্রধান হিসেবে তাঁর দক্ষতা তা হলে কতটুকু? ঘেরাও তুলতে ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ক্যাম্পাসে পুলিশি পীড়নের পর থেকে উপাচার্য হিসেবে অভিজিৎবাবুর যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার। সমাবর্তনের ঠাঁই বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের জন্যও আচার্যের মুখাপেক্ষী হতে হল কেন, উপাচার্যের ইস্তফার দাবিতে মুখর পড়ুয়া ও শিক্ষকদের প্রশ্ন সেটাই। উপাচার্য কিন্তু কিছুই বলছেন না।

আচার্য শুক্রবার সকালে সমাবর্তন নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর পরে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ অবশ্য বলেন, “সমাবর্তন তো প্রতি বছরই হয়। এ বারেও হবে। ক্যাম্পাসের ভিতরেই হবে। আমরা তো স্থির করেই রেখেছি।” যদিও সমাবর্তন কোথায় হবে, আচার্য-রাজ্যপাল মুখ খোলার আগে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় সেটা জানাতেই পারেনি।

ছাত্রছাত্রী তো বটেই, শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও বড় একটি অংশের বিরূপতার আবহে নিজেরই ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন অভিজিৎবাবু। এবং সেই আশঙ্কা থেকেই তিনি ক্যাম্পাসের বাইরের কোনও প্রেক্ষাগৃহে সমাবর্তনের অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলেন। ঘনিষ্ঠ মহলে সে-কথা জানিয়েছিলেন নিজেই। যদিও ক্যাম্পাসের বাইরে সমাবর্তন করার নজির যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নেই। তাই সেখানকার এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এর অধিকাংশ সদস্যই চান, বরাবরের মতো এ বারেও সমাবর্তন হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে।

শুক্রবার সকালে স্কটিশ চার্চ কলেজের এক অনুষ্ঠান শেষে আচার্য-রাজ্যপালের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ক্যাম্পাসের বাইরে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা তিনি সমর্থন করেন কি না? রাজ্যপাল বলেন, “আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বলেছি, ক্যাম্পাসেই যেন সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়।”

যাদবপুরের পড়ুয়ারা ইতিমধ্যেই সমাবর্তন বয়কটের ডাক দিয়েছেন। উপাচার্যের হাত থেকে কেউ যাতে শংসাপত্র না-নেন, জনে জনে সেই আবেদন জানাচ্ছেন তাঁরা। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, সমাবর্তনের দিন ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভের কর্মসূচিও নিতে পারেন।

এই প্রসঙ্গে রাজ্যপাল এ দিন বলেন, “কেউ অনুষ্ঠান বয়কট করতে চাইলে সেটা সম্পূর্ণ তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে কেউ যদি কোনও রকম বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করেন, তা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ছাত্রছাত্রীরা জানান, সমাবর্তনের সময়ে তাঁদের তরফে কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত হবে ১৭ ডিসেম্বর সেমেস্টার পরীক্ষার পরে। আর শিক্ষক সংগঠন জুটা জানিয়েছে, সমাবর্তনের দিন তাদের কর্মসূচি কী হবে, সেটা স্থির হবে ১১ ডিসেম্বরের বৈঠকে। সমাবর্তন যাঁদের জন্য, সেই ছাত্রছাত্রীরাই বয়কট করলে অনুষ্ঠান অনেকটাই বর্ণহীন হয়ে যাবে বলে মানছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান-প্রাক্তন কর্তাদের অনেকে।

ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক, দু’পক্ষেরই বিরুদ্ধতার মুখে বুধবার আচার্যের কাছে দরবার করেছিলেন উপাচার্য। বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের কাছে যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। শুক্রবার দুপুরে ফের রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন অভিজিৎবাবু। পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে রাজভবন থেকে বেরোনোর সময় অবশ্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি তিনি। পরে বারবার ফোন করা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে উপাচার্য জানান, রাজ্যপাল তাঁকে ক্যাম্পাসের ভিতরে সমাবর্তন আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রতি বছরের মতো এ বারেও ২৪ ডিসেম্বর, প্রতিষ্ঠা দিবসে যাদবপুরের সমাবর্তন হওয়ার কথা। কিন্তু সেই অনুষ্ঠান কোথায় হবে, তা স্থির করতে গিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার উপাচার্যের কাছে এই বিষয়ে ইসি-র মতামত জানতে চেয়েছিলেন আচার্য। ইসি-র অধিকাংশ সদস্য ক্যাম্পাসে সমাবর্তন আয়োজনের পক্ষে মত দিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত উপাচার্যই নেবেন বলে স্থির হয়। সে-দিন সন্ধ্যায় একটি অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আচার্য-রাজ্যপাল বলেন, “সমাবর্তন নিয়ে আগে উপাচার্যকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন।” কিন্তু অভিজিৎবাবু সমাবর্তনের স্থান নির্বাচন করে উঠতে পারেননি।

বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন শিক্ষামন্ত্রী। রাজভবন থেকে বেরিয়ে পার্থবাবু জানান, সমাবর্তন কোথায় হবে, সেই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়েরই নেওয়া উচিত। শুক্রবার রাজ্যপাল যা বলেছেন, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসি-র অধিকাংশ সদস্যের মতই প্রতিফলিত হয়েছে। আর শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, “এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যাপার। এখানে আমাদের ভূমিকা বা বক্তব্য নেই।”

scottish church college jadavpur university Governor JU convocation campus VC abhijit student state news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy