Advertisement
E-Paper

ইউনিয়নের কাছেই অটো-কুলুজি তলব

দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকায় অটোয় লাগাম পরাতে চাইছে রাজ্য সরকার। কিন্তু কাকে পরাবে, ক’জনকে পরাবে? অটো-সাম্রাজ্যের পরিসীমা বা অটোচালকের সংখ্যা— কোনওটাই যে জানা নেই তাদের!

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৫

দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকায় অটোয় লাগাম পরাতে চাইছে রাজ্য সরকার। কিন্তু কাকে পরাবে, ক’জনকে পরাবে? অটো-সাম্রাজ্যের পরিসীমা বা অটোচালকের সংখ্যা— কোনওটাই যে জানা নেই তাদের! এই অবস্থায় সেই হিসেব পেতে অটো ইউনিয়নেরই দ্বারস্থ হল সরকার।

অবৈধ অটোর দাপটই বেশি বলে অভিযোগ। কিন্তু বৈধ বা বেআইনি অটোর খতিয়ান চাইলে পুলিশ-প্রশাসন নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চায় না বা বলতে পারে না। স্থূল ভাবে তারা বলে, আইন মেনে চলা অটোর থেকে বেআইনি অটো কিছু কম নয়। কিন্তু কলকাতা, হাওড়া এবং শহরতলিতে কত অবৈধ অটো চলে, সেই সব অটোর জন্য কোথায় ক’জন চালক আছেন, সেই খতিয়ান বা ওই চালকদের নাম-পরিচয়ের সবিস্তার বিবরণ নেই সরকারের ঘরে। অটো-পিছু দু’তিন জন চালক নির্দিষ্ট করা থাকে বলে অটো-মহলের খবর। তাঁরা কারা, তাঁরা কাদের কোন অটো কোথায় চালান, অটো ইউনিয়নগুলির কাছে সবই জানতে চাইছে সরকার। শাসক দলের অটো ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছেন কলকাতার রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (আরটিএ) বা পিভিডি-র কর্তারা। বৈঠকে অটো ইউনিয়নগুলিকে এই তথ্য যত শীঘ্র সম্ভব জমা দিতে বলা হয়েছে।

কেন এই পদক্ষেপ?

পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা ও হুগলিতে হাজার হাজার বেআইনি অটো চলছে। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘আশিস ঠাকুরের নেতৃত্বে তৈরি কমিটি কলকাতায় কত অবৈধ অটো চলে, তার হিসেব দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মফস্সল এলাকায় কত বেআইনি অটো চলে, তার হিসেব দিতে পারেনি সেই কমিটিও।’’ কোন রুটে কত অটো চলে, তার মধ্যে কতগুলি বৈধ ও অবৈধ, সেগুলোর মালিক ও চালক কারা, তার সবিস্তার হিসেব থাকে শুধু রুটের ইউনিয়নের কাছেই। তাই ইউনিয়নগুলির কাছেই হিসেব চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

অটো কতটা বেপরোয়া, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় সেটা দেখেছে কলকাতা। গৌরীবাড়িতে সিগন্যাল অমান্য করে বাসে ধাক্কা মারায় পূজা পাল নামে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়। তার পরে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে অটোচালকের বচসা এবং তাঁর নিরাপত্তারক্ষীকে ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে মধ্য কলকাতায়। পরের দিন ঠিক একই জায়গায় এক পুলিশকর্মীকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়। তার পরেই অটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধার জন্য নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন।

৩ অক্টোবর অটো-নীতি ঘোষণা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সেই অটো-নীতি রূপায়ণের জন্য কোথায় কত অটো চলে এবং সেগুলো কারা চালান, তা জানা জরুরি। তাই একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে চাইছে সরকার। ইউনিয়নের কাছ থেকে তালিকা পাওয়ার পরে তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ শুরু করা হবে।

মন্ত্রীর অটো-নীতি ঘোষণার নির্ঘণ্ট এবং ইউনিয়নের ১১ দফা নির্দেশিকার তোয়াক্কা না-করে অটোর দৌরাত্ম্য অবশ্য বেড়েই চলেছে। মদন মিত্র যখন পরিবহণমন্ত্রী ছিলেন, অটোর বেয়াড়াপনা নিয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য একটি ফোন নম্বর চালু করা হয়েছিল। সেটি হল ১০৭৩। নালিশ জানাতে পিভিডি নতুন নম্বর চালু করছে: ১৮০০৩৪৫৫১৯২। এ-পর্যন্ত সরকারের অটো-শাসনের উদ্যোগ বলতে এটুকুই।

সাধারণ ভাবে পরিবহণ দফতরের নিয়ম অনুযায়ী অটো চালাতে গেলে প্রথমে প্রয়োজন নির্দিষ্ট রুটের পারমিট। সেটা দেয় বিভিন্ন আঞ্চলিক পরিবহণ অফিস। সেই পারমিটের ভিত্তিতেই অটো কিনে চালানোর অনুমতি মেলে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পারমিট পাওয়ার আগেই অটো কিনে তা নামিয়ে দেওয়া হয় রাস্তায়। এক পরিবহণ-কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতায় অটো রুট ১২৫টি। ওই সব রুটে সর্বাধিক কত অটো চলবে, তা-ও নির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু সংলগ্ন জেলাগুলিতে অনেক ক্ষেত্রেই তা নেই। সমস্যার শুরু মূলত সেখান থেকেই।’’

কর্তাদের দাবি, শাসক দলের চাপে অনেক সময়েই দেদার অটোর রেজিস্ট্রেশন এবং পারমিট দেওয়া হয়েছে জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ অফিস থেকে। পারমিট পেয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে অটো-সাম্রাজ্য। অনেক ক্ষেত্রে অটো কিনে কলকাতার কোনও পারমিট-প্রাপ্ত অটোর নম্বর লাগিয়ে ইউনিয়নের সহায়তায় তা চালানো হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিভিন্ন ঘটনার তদন্তে আমরা একই নম্বরে একাধিক অটোর খোঁজ পেয়েছি। কিন্তু যত বারই ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, প্রতি বারেই হামলে পড়ে বাধা দিয়েছে শাসক দলের ইউনিয়ন।’’

এ বার সেই ইউনিয়নের সাহায্যেই অবৈধ অটোর সবিস্তার হিসেব তৈরি করতে চাইছে পরিবহণ দফতর। সেই হিসেব কতটা প্রামাণ্য হবে, তা নিয়ে কিছু পরিবহণকর্তা বেশ সন্দিহান।

Auto unions control
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy