Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ধর্মঘটের পাল্টা ‘সিঙ্গুর দিবস’, সতর্ক প্রশাসন

বন্‌ধ মানেই নাকি পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা! আর তা যদি হয় শুক্রবারে? তবে তো সোনায় সোহাগা! টানা তিন দিন ছুটি। দিব্যি কাছেপিঠে ঘুরেও আসা যায়। তা কোথায় যাচ্ছেন এ বারে?

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০৩
Share: Save:

বন্‌ধ মানেই নাকি পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা!

আর তা যদি হয় শুক্রবারে? তবে তো সোনায় সোহাগা! টানা তিন দিন ছুটি। দিব্যি কাছেপিঠে ঘুরেও আসা যায়। তা কোথায় যাচ্ছেন এ বারে?

‘‘ইয়ার্কি হচ্ছে? অফিসে যেতে হবে। কড়া নির্দেশ।’’ বলছিলেন জেলা প্রশাসনের এক কর্মী।

আজ, শুক্রবারের বিভিন্ন ট্রেড উইনিয়নের ডাকা সাধারণ ধর্মঘট নিয়ে চাপানউতোর চলছে বেশ কয়েকদিন ধরেই। ধর্মঘটে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, রাজ্য সরকারকে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ধর্মঘট কেউ করতে চাইলে তাঁরও যে অধিকার আছে, এই সওয়ালে বুধবার হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি গিরীশ গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ সম্মতি জানিয়েছে বলে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের দাবি।

এন দিন পরিবহণ স্বাভাবিক রাখতে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখছে বলে জানা গিয়েছে। মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ দিনে রাজ্যে ১৮৫০টি সরকারি বাস চলে। ধর্মঘটের দিন নামানো হবে ২২৭০টি বাস। ট্রাম এবং ভেস্‌লের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘গাড়ি চালকেরা নির্ভয়ে গাড়ি বার করুন। দু’টি সরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগ জমা করে তিনটি কাজের দিনের মধ্যে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ মিলবে।’’

পাল্টা বামেদের তরফেও দাবি করা হয়েছে, শাস্তির হুঁশিয়ারি এবং সরকারের তরফে হোর্ডিং, সার্কুলার দিয়ে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। সেই চাপ উপেক্ষা করেই ধর্মঘট হবে। শান্তিপূর্ণ ভাবে ধর্মঘট করতে হবে। দেখতে হবে, কেউ যেন কোনও প্ররোচনায় পা না দেয়।

এ দিনই আবার রাজ্য জুড়ে সিঙ্গুর দিবস পালন করা হবে বলে ঘোষণা করেছে রাজ্য। ফলে কোথাও যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় তার জন্য সতর্ক থাকছে প্রশাসনও। সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই দিতে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের কর্তারা বাস-লরি-ট্রেকার মালিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন।

নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘বাস মালিকদের কাছে আবেদন করা হয়েছে যাতে বন্ধের দিন পথে বাস নামানো হয়। আশা করছি আমাদের আবেদনে তাঁরা সাড়া দেবেন।’’ কিন্তু নদিয়া বাস মালিক সমিতির পক্ষে অসীম দত্ত বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের আবেদন মেনে শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের ইচ্ছে হলে বাস চালাবেন, ইচ্ছে না হলে বাস চালাবেন না।’’

জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘বনধের দিন যাতে কোনও ভোগান্তি না হয় সে জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাস্তায় বাস-ট্রেকার-অটো চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। সরকারি বাসও পথে নামবে।’’ মুর্শিদাবাদ বাস মালিক সংগঠনের রথীন মণ্ডল বলেন, ‘‘শ্রমিকরা না চাইলে করণীয় কিছু নেই।’’

তবে বনধের দিন পথে নেমে সিঙ্গুর দিবস পালন করবে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘মানুষের যাতে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা যাতে ব্যাহত না হয় তার জন্য সর্বস্তরে আবেদন রাখছি।’’ সিদ্ধান্ত হয়েছে তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতে রবীন্দ্রভবন থেকে প্রশাসনিক ভবনে সকাল ১০টায় মিছিল করে সরকারি কর্মীদের ঢুকিয়ে দেওয়ার।

কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেউ যদি স্বেচ্ছায় ধর্মঘটে সামিল হতে চান, তা হলে কিছু বলার নেই। কিন্তু, কেউ জোর করে কিছু বন্ধ করতে চাইলে প্রশাসন নিশ্চই পদক্ষেপ করবে।''

সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি ও বিভিন্ন ফেডারেশন ধর্মঘট আহ্বায়ক। আমরা দলের পক্ষ থেকে তাদের দাবিগুলি সমর্থন জানিয়েছি। কিন্তু পথে নেমে পিকেটিং করছি না। মিছিল বের করার কথা বলা হয়েছে।’’

তৃণমূলের কান্দি মহকুমা সভাপতি গৌতম রায় বলেন, ‘‘আমরা সিঙ্গুর উৎসব পালন করব রাস্তায় নেমে। মিছিল কোথাও বাধা পেলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’’ তবে প্রশাসনের তরফে কুলি, ডাকবাংলা, খড়গ্রাম, কান্দি বাসস্ট্যান্ড উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই জায়গাগুলি পুলিশের বাড়তি নজর থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

singur day govt general strike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE