কেবল শাসক নয়, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের রেশ এ বার বিজেপি শিবিরেও।
কোচবিহারের তুফানগঞ্জে দলের ‘মহাসম্পর্ক অভিযান’-এর সভার আগে নিজেদের মধ্যেই তুমুল সংঘর্ষে জড়ালেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। যার জেরে শনিবার দুপুরে কার্যত ফাঁকা ঘরে বক্তৃতা করতে হল রাজ্যে দলের এক মাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যকে। জখম হলেন দুই গোষ্ঠীর অন্তত পাঁচ জন।
তুফানগঞ্জের কমিউনিটি হলে ওই সভার প্রস্তুতি চলার সময়েই দুই গোষ্ঠীর সমর্থকেরা মারপিটে জড়িয়ে পড়েন। ভয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কর্মী-সমর্থকদের অনেকে শমীকবাবু আসার আগেই বাড়িমুখো হন। সভায় এসে আসন ভর্তি না দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শমীকবাবু।
পরে এই গোলমালের জেরে বিজেপির দুই ‘সাসপেন্ড’ থাকা জেলা নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানান বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মন। তিনি বলেন, “দলবিরোধী কাজের জন্য বিমল সরকার ও উজ্জ্বল বসাককে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তাঁদের মদতেই কিছু দুষ্কৃতী সভা বানচাল করতে চড়াও হয়। রাজ্য নেতৃত্ব দু’জনকেই বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন। খুব শিগগির তাঁরা চিঠিও পেয়ে যাবেন।”
দলবিরোধী কাজের জন্যই সম্প্রতি জেলা সহ-সভাপতি বিমল সরকার ও অন্যতম সম্পাদক উজ্জ্বল বসাককে সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু বরাবর তুফানগঞ্জে দলের রাশ তাঁদের হাতেই ছিল। তাঁরা সাসপেন্ড হওয়ায় সভা আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তুফানগঞ্জ ১ ব্লক সভাপতি পুষ্পেন সরকারকে। তা নিয়ে দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে চাপানউতোর চলছিল। সভার প্রস্তুতির সময়েই বচসা বেধে যায়। পুষ্পেনবাবুর অভিযোগ, “সাসপেন্ড হওয়া নেতাদের মদতেই ওই ঘটনা। আমাদের এক মহিলা-সহ তিন জন জখম হয়েছেন।”
অভিযুক্ত দুই নেতা অবশ্য ঘটনার দায় নিতে চাননি। বিমলবাবুর দাবি, “আমি সাসপেন্ডের চিঠি পাইনি। কোচবিহারে দলের বৈঠকে গোলমালের জন্য আমায় সন্দেহ করে শো-কজ করার কথা শুনেছিলাম।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘হেমচন্দ্রবাবুর সভাপতিত্বের মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে। উনি আমায় প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে রাজ্য নেতৃত্বকে ভুল বুঝিয়ে কোণঠাসা করতে চাইছেন।” উজ্জ্বলবাবু অবশ্য স্বীকার করেছেন যে তিনি চিঠি পেয়েছেন। তবে তাঁর দাবি, ‘‘এ দিন যে গোলমাল হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানা নেই। আমি ওখানে ছিলামও না।”
উজ্জ্বলবাবু কোনও কথা বলতে না চাইলেও বিমলবাবু অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘‘সমর্থকরা সভাতে ঢোকার সময়ে ব্লক সভাপতি পুষ্পেন সরকারের লোকেরা লোহার রড, লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে। অন্দরান ফুলবাড়ি অঞ্চল সভাপতি আনন্দ পাল, খোকন দাস জখম হয়েছেন।’’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পুষ্পেনবাবু বলেন, ‘‘আমরা সভার আয়োজন করছিলাম। বিমলের লোকেরাই আমাদের উপরে হামলা করে।’’
এ দিনের ঘটনায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়ে যান শমীকবাবু। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও হলঘরের আসন ভর্তি থাকা উচিত ছিল বলে জানান তিনি। সেই সঙ্গে তৃণমূলকেও আক্রমণ করেন। তাঁর কথায়, “এরা লোক দেখাতে ক্লাবে ক্লাবে ২ লক্ষ টাকা দিচ্ছে। অথচ রাজ্যে ঋণের বোঝা বেড়ে তিন লক্ষ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। পুলিশকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। শিক্ষায় দলতন্ত্র চলছে।”