Advertisement
E-Paper

বাংলায় ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণে এসআইআর সংক্রান্ত নির্দেশিকা, করতে হবে ‘ম্যাপ’, তৈরি আছে অ্যাপ, কোমর বাঁধছে কমিশন

আনুষ্ঠানিক ভাবে কমিশন জানায়নি যে, বাংলায় কবে থেকে এসআইআর শুরু হবে। তবে, বিএলও-দের প্রশিক্ষণে যে কায়দায় ওই প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিশদ নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, তা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন ভোটপ্রক্রিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত থাকা সরকারি কর্মচারীদের একাংশ।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৫ ০৮:৫৯
Guidelines regarding SIR are being given by the Election Commission in the training of BLOs in West Bengal

প্রস্তুতি শুরু কমিশনের। ছবি সহায়তা: এআই।

বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। রাজনৈতিক দলগুলি যখন ভোট-প্রস্তুতিতে গা ঘামানো শুরু করে দিয়েছে, তখন বসে নেই নির্বাচন কমিশনও। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ডিভিশনে নির্বাচন কমিশনের তরফে ‘বুথ লেভেল অফিসার’ (বিএলও)-দের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। যে প্রশিক্ষণে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে ভোটার তালিকায় ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ বা ‘স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর)-এর উপর। বিহারে যে প্রক্রিয়া কার্যকর করা নিয়ে আপাতত জাতীয় রাজনীতি আলোড়িত।

বিএলও-দের দেওয়া নির্দেশিকার ছত্রে ছত্রে কমিশন মনে করিয়ে দিয়েছে, বিএলও-দের কাজ করতে হবে কমিশনের অধীনে। কোনও রকম পক্ষপাত তাঁরা করতে পারবেন না। করলে কত দিন জেল বা কত টাকা জরিমানা হতে পারে, তা-ও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে নির্দেশিকায়। ঠিক তার পিঠোপিঠিই বার্তা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কমিশন যখন বিএলও-দের প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করেছে, তখন সোমবার বীরভূমের প্রশাসনিক সভা থেকে তাঁদের উদ্দেশে বলেছেন, “বিএলও-দের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, ভোটার তালিকা থেকে যাতে কারও নাম বাদ না-যায়, সেটা দেখার। ভোটের আগে-পরে রাজ্য সরকারের হাতেই প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকে। আপনারা রাজ্য সরকারের চাকরি করেন। কোনও মানুষকে অযথা হেনস্থা করবেন না।”

আনুষ্ঠানিক ভাবে কমিশন জানায়নি যে, পশ্চিমবঙ্গে কবে থেকে এসআইআর শুরু হবে। তবে, বিএলও-দের প্রশিক্ষণে যে কায়দায় ওই প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিশদ নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, তা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন ভোটপ্রক্রিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত থাকা সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। প্রসঙ্গত, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, বিএলও-দের যে ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তা অতীতে হয়নি। তাঁর এ-ও বক্তব্য, এসআইআর হলে এই প্রশিক্ষণ কাজে লাগবে বিএলও-দের।

গত শনিবার ছিল কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং নদিয়া (প্রেসিডেন্সি ডিভিশন) জেলার বিএলও-দের প্রশিক্ষণ। নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত সেই কর্মশালায় ছিলেন কমিশনের বড়কর্তারা। সূত্রের খবর, ভোটার তালিকায় নিবিড় সমীক্ষার প্রসঙ্গে এক পদস্থ আধিকারিক উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, এক জন আইএএস অফিসার গত ১০ বছরে চারটি জেলায় বদলি হয়েছেন। চারটি জেলাতেই তাঁর নাম ভোটার তালিকায় রয়ে গিয়েছে! ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ভোটার তালিকা পরিচ্ছন্ন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা

এসআইআর কার্যকর করতে বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে বিএলও-দের। কোন বাড়ির কত জন সদস্য, তাঁদের মধ্যে কে মৃত, কে অন্যত্র থাকেন— নথি সহকারে সেই তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। প্রত্যেক বাড়িতে দিতে হবে এসআইআর সংক্রান্ত ফর্ম। তার পর নির্দিষ্ট সময়ের পরে সেই ফর্ম সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে কমিশনকে।

বাড়ি তালাবন্ধ থাকলে?

বিএলও যদি কোনও বাড়িতে গিয়ে দেখেন, সেই বাড়ি তালাবন্ধ, সে ক্ষেত্রেও নির্দেশিকায় স্পষ্ট বিধি উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এসআইআর সংক্রান্ত ফর্ম ওই নির্দিষ্ট বাড়িতে ফেলে আসতে হবে। তার পরে সেই বাড়ির কারও ফোন নম্বর সংগ্রহ করে জানাতে হবে বিষয়টি। পরিবারের সময় নিয়ে সেই বাড়িতে গিয়ে বোঝাতে হবে ফর্ম পূরণের বিষয়টি। কমিশনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সমীক্ষা করতে গিয়ে যদি দেখা যায়, কোনও বাড়ি তালাবন্ধ, তা হলে সেই বাড়িতে একাধিক বার যেতে হবে।

কী কী নথি প্রয়োজন?

বিহারে এসআইআর-এ ১১টি নথি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল কমিশন। যার মধ্যে আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো নথি ছিল না। আবার যে ১১টি নথির উল্লেখ ছিল, তার মধ্যে এমন কয়েকটি নথির উল্লেখ রয়েছে, যার অস্তিত্ব বিহারে নেই। যেমন জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি), পারিবারিক ‘রেজিস্টার’। এ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে বিহারে। তবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এখনও কোনও নথি নির্দিষ্ট করেনি কমিশন। বিএলও-দের দেওয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অনেকগুলি নথিই থাকবে। তার মধ্যে যে কোনও একটি থাকলেই ভোটার তালিকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম বৈধ বলে নথিভুক্ত হবে। ২০০৩ সালে বিহারে শেষ বার এসআইআর হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে হয়েছিল ২০০২ সালে। বিহারের ক্ষেত্রে কমিশন বলেছিল, যাঁদের নাম ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় ছিল, জীবিত থাকলে তাঁদের নাম থাকবে ভোটার তালিকায়। তাঁদের নতুন করে কোনও নথি দিতে হবে না। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, শেষ এসআইআর-এর সময়ে (২০০২ সাল) যাঁদের নাম তালিকায় ছিল, তাঁদের নাম নতুন তালিকায় থাকবে। তবে তার পরে যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় উঠেছে, তাঁদের প্রয়োজনীয় নথি দিতে হবে।

নজরি ম্যাপ

পুরনিগম বা পুরসভা এলাকায় বাড়ির হোল্ডিং নম্বর থাকলেও পঞ্চায়েত এলাকায় অনেক ক্ষেত্রেই বাড়ির নম্বর থাকে না। এসআইআর প্রক্রিয়ায় বিএলও-দের বাড়ির নম্বর দিয়ে মানচিত্র তৈরি করতে হবে। যাকে কমিশনের পরিভাষায় বলা হচ্ছে ‘নজরি ম্যাপ’। ধরা যাক দু’টি বুথ নিয়ে একটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন। সে ক্ষেত্রে দু’টি বুথকে পৃথক ভাবে ধরে বাড়ির নম্বর করতে হবে বিএলও-কে। সেই ভাবে তথ্য নথিভুক্ত করতে হবে। যাঁরা কারও বাড়িতে ভাড়া থাকেন, তাঁদের নাম নথিভুক্ত করতেও বিশদ তথ্য জমা দিতে হবে।

সাহায্য চাই

কমিশনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বুথ এলাকায় প্রবীণ, বিশিষ্ট মানুষদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি করতে হবে। যাঁদের নির্দিষ্ট এলাকা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রয়েছে। যাঁরা জানেন, কোন পরিবারের কে অন্যত্র চলে গিয়েছেন বা মৃত। তার ফলে সমীক্ষার কাজ অনেক মসৃণ হবে। তবে সমীক্ষার মূল কাজ করতে হবে বিএলও-দেরই।

বিএলও অ্যাপ

ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় প্রত্যেকের ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে বিএলওদের। ‘বিএলও অ্যাপ’ ডাউনলোড করে রাখতে হবে। তার মাধ্যমেই জমা দিতে হবে তথ্য। কমিশনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো দেখা যাবে, ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযুক্তিকরণ নেই। সে ক্ষেত্রেও বিএলও সংশ্লিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে সংযুক্তিকরণের ফর্মও পূরণ করতে পারবেন।

Voter List Controversy BLO SIR
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy