E-Paper

আমি ঠিক সময়ে সব কিছুর উত্তর দেব, অন্তরাল থেকেই প্রথম বার মুখ খুললেন হৈমন্তী

নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ আদালত থেকে জেলের পথে ছুড়ে দিয়েছিলেন তাঁর নাম— হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়। সেই হৈমন্তী মুখ খুললেন আনন্দবাজারের কাছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:১০
Picture of Haimanti Ganguly.

হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়। —ছবি সংগৃহীত।

অশেষ গুঞ্জন আর অপরিমেয় কৌতূহলের কেন্দ্রে এখন তিনি। মডেল-অভিনেত্রী বলে তাঁকে নিয়ে জনমানসে যে-স্বাভাবিক আগ্রহ আছে, তা ছাপিয়ে গিয়েছে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির সূত্রে উঠে আসা এক ‘রহস্যময়ী নারী’র বৃত্তান্ত। সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমে কয়েক দিন ধরে তাঁর ছবি। কারও কারও দাবি, তিনি এখন টিনসেল সিটি মুম্বইয়ে, স্থাননাম উল্লেখ না-করে অনেকের বক্তব্য, তিনি আপাতত অন্তরালবর্তিনী।

নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ আদালত থেকে জেলের পথে ছুড়ে দিয়েছিলেন তাঁর নাম— হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়। সেই হৈমন্তী মুখ খুললেন আনন্দবাজারের কাছে। সরাসরি নয়, ফেসবুকের মেসেঞ্জারে পাঠানো বার্তার জবাবে হৈমন্তী লিখে পাঠালেন, ‘আমি ঠিক সময়ে সব কিছুর উত্তর দেব।’

হৈমন্তী স্বয়ং সময় নিলেও মুখ খুলেছেন তাঁর মা বুলা গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার হাওড়ার বাকসাড়ায় নিজের বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ওই প্রৌঢ়া বললেন, ‘‘আমার মেয়ে নির্দোষ। ও দুর্নীতির বিষয়ে কিচ্ছু জানে না। ও সৎ বংশের মেয়ে। কোনও দু’নম্বরি করতে পারে না। এটা হতে পারে, আমার মেয়েকে কেউ ফাঁসাচ্ছে। সময়মতো আমার মেয়ে সকলের সামনে সব বলবে।’’

তবে মেয়ে নির্দোষ বলে দাবি করার সঙ্গে সঙ্গে জামাই গোপাল দলপতি, এমনকি হৈমন্তীও যদি নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্ত হন, তার দায় যে তাঁরা নেবেন না, সেটাও এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন বুলা। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি অসুস্থ। আমিও অসুস্থ। বয়স হয়েছে। আমরা এ-সব দায় নিতে পারব না।’’

শনিবার দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমের কাছে হৈমন্তীকে নির্দোষ বলে দাবি করেছিলেন তাঁর ‘প্রাক্তন স্বামী’ গোপাল দলপতি ওরফে আরমান গঙ্গোপাধ্যায়। ঠিক তার পরের দিনেই হাওড়ার বাড়িতে হৈমন্তীর মা একই দাবি করলেন। তাঁর অভিযোগ, ইদানীং গোপালের আদবকায়দা ভাল লাগছিল না বলেই হৈমন্তী আলাদা হয়ে সরে যেতে চাইছিলেন। মায়ের কথায়, “ও খুব ভাল মনের মেয়ে। কয়েক দিনের মধ্যে সকলেই সেটা বুঝতে পারবেন।’’ বুলা আরও বলেন, ‘‘সাত থেকে আট বছর আগে গোপালের সঙ্গে বিয়ে হয় হৈমন্তীর। তখন গোপাল আসা-যাওয়া করত। এখন ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ কাল আসেনি গোপাল।’’

কুন্তল বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, নিয়োগ দুর্নীতির যাবতীয় টাকা কোথায় আছে, তা জানেন গোপাল দলপতির স্ত্রী হৈমন্তী। পরের দিনেই হাওড়ার বাকসাড়া রোডে হৈমন্তীর তেতলা পিতৃগৃহের খোঁজ মেলে। তবে তার পর থেকে রবিবার সন্ধে পর্যন্ত সেখানে সন্ধান মেলেনি হৈমন্তীর।

হৈমন্তী কোথায় আছেন, জানতে চাওয়ায় তাঁর মা এ দিনেও বলেন, ‘‘দু’সপ্তাহ আগে মেয়ের সঙ্গে শেষ বার যোগাযোগ হয়েছিল। মেয়ে কোথায় আছে, কবে বাড়ি আসবে, কিছুই বলতে পারছি না।’’ হৈমন্তীর কলকাতার ফ্ল্যাটের পাশে আবর্জনায় শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র উদ্ধারের ব্যাপারে বুলা বলেন, ‘‘আমার বাড়ির সামনেও তো কেউ কিছু ফেলে দিয়ে যেতে পারে। তা হলে আমি কি সেটা নিয়ে নাচব? ওকে যে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে, তা আপনারা বুঝতে পারছেন না?’’

হৈমন্তীর মায়ের দাবি, তাঁর মেয়ে প্রচুর দান করেন। তিনি অনাথ ছেলেমেয়েদের জামাকাপড় দেন মাঝেমধ্যেই। বুলা জানান, আগে হৈমন্তী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার পরে ব্যবসায় নামেন। একটি বিউটি পার্লার খোলেন। পাশাপাশি মডেলিং, সিনেমা ও সিরিয়াল করে পেট চালান।

হৈমন্তীর মায়ের বক্তব্য, তদন্ত করে দেখুক, তাঁর মেয়ে নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত কি না। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখুক। এ-সব ব্যাপারে তাঁরা মাথা ঘামাতে চান না। কারণ তাঁরা জানেন, তাঁদের মেয়ে ‘নির্দোষ’।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Haimanti Ganguly Recruitment Scam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy