শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। বিজেপি ছেড়ে সেই শুভেন্দুর উদ্দেশেই ক্ষোভ উগরে দিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। সেই সঙ্গে এ-ও জানালেন, তাঁকে বিজেপিতে ‘কোণঠাসা’ করে দিয়েছিলেন তমলুকের বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
পাল্টা হলদিয়ার বিধায়ককে ‘জঞ্জাল’ বলে কটাক্ষ করেছেন অভিজিৎ। তাঁর কথায়, ‘‘একটা জঞ্জাল জঞ্জালের ভ্যাটে গিয়ে পড়ল। ওঁর সঙ্গে তর্কাতর্কি একটা হয়েছিল। আমি আমার চেম্বার থেকে বার করে দিয়েছি। কোনও দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের লেকচার শুনতে আমি রাজি নই।’’ আর তাপসীর তৃণমূলে যোগদান নিয়ে শুভেন্দু একটি ‘কারণ’ জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে বিজেপির জাতীয় নেতারা একটি সার্কুলার জারি করেছেন। তাতে আর কোনও বিজেপি বিধায়ক জেলা সভাপতি হতে পারবেন না। সেটা জেনেই তাপসী বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় পদ্ম পতাকা নিয়েছিলেন তাপসী। তখন তিনি সিপিএম বিধায়ক। ওই একই সভায় তৃণমূল ছেড়ে শুভেন্দুও বিজেপিতে যোগদান করেন। সূত্রের দাবি, তাপসীকে বিজেপিতে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দলনেতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু বিধানসভা ভোটের বছরখানেক আগে আবার দল বদলেছেন তাপসী। তার পর তোপ দেগেছেন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। তাপসীর সঙ্গে শাহের সভায় বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন সিপিএমের হলদিয়া দক্ষিণ জোনাল কমিটির সম্পাদক শ্যামল মাইতিও। সোমবার সেই শ্যামলকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে তাপসী ক্ষোভ জানিয়েছেন তমলুকের সাংসদের বিরুদ্ধে। আঙুল তুলেছেন শুভেন্দুর দিকেও।
তাপসী বলেন, ‘‘উনি বাইরে থেকে গিয়ে সকলের সঙ্গে (তমলুক লোকসভায়) বিরোধিতায় জড়াচ্ছেন। তাঁর মাধ্যমে আমাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা হয়েছে। আগে যখন শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে (বিজেপিতে) ছিলাম, তখনও কোনও কাজের সুযোগ পেতাম না। বিজেপিতে গিয়ে কোনও কাজের মধ্যে যুক্তই হতে পারিনি।’’ তাপসীর সংযোজন, ‘‘অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছিলেন শুভেন্দুবাবু। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে ওঁকে বাইরে থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার পরে এলাকার কর্মীদের সঙ্গে, বিধায়কের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন উনি। এটা স্বাভাবিক পরিবেশ নয়।’’ তমলুকের সাংসদ অভিজিতের পাল্টা দাবি, তাপসীর মতো অনেকের উপরে তাঁর ‘নজর’ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বহু দিন ধরে নজর রাখছিলাম। আমাদের দলের যাঁরা সৎ কর্মী, তাঁরাও নজর রাখছিলেন। শেষে আমাকেই ‘ভোকাল’ (সরব) হতে হয়। চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া, হলদিয়ায় তোলাবাজি, পয়সা নেওয়া— অনেক অভিযোগ এঁদের বিরুদ্ধে।’’
বস্তুত, তাপসী-অভিজিৎ সংঘাত আগেই প্রকাশ্যে এসেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হলদিয়ায় ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ বা বিএমএসের অনুষ্ঠানে গিয়ে অভিজিৎ অভিযোগ করেন আরএসএসের শ্রমিক সংগঠন বিএমএসের সমর্থকদের অন্য একটি ‘প্রতারণামূলক’ সংগঠনে নিয়ে যাচ্ছেন বিজেপির কিছু নেতা। তিনি আঙুল তোলেন বিজেএমসি নামে একটি সংগঠনের দিকে, যার সঙ্গে যুক্ত হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী। সাংসদের এ হেন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাপসী বলেছিলেন, ‘‘হলদিয়ার শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে সাংসদ কিছু জানেন না। উনি নতুন এসেছেন। হলদিয়ার সংস্কৃতিও জানেন না। ওঁকে হয়তো কেউ বোঝাচ্ছেন। উনি এখন সাংসদ। তাই ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত।’’ অনেকেরই বক্তব্য, তাপসীর বিজেপি ছাড়ার প্রস্তুতি তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।
শুভেন্দুর বক্তব্য, বিজেপি বিধায়ক জেলা সভাপতি হতে পারবেন না, এই মর্মে বার্তা পাওয়ার পরের দিনই তাপসী তাঁর বাড়ির দেওয়াল থেকে পদ্মফুল মুছে দিয়েছিলেন! বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘জেলা সভাপতির পদ থাকবে না। সেই কারণে সুব্রত বক্সীর মাধ্যমে কথা বলেছেন উনি। যেমন মুকুটমণি অধিকারী, বিশ্বজিৎ দাসদের মতো দলবদলুদের লোকসভা ভোটে হারিয়েছিলাম, তেমনই ওঁকে (তাপসীকে) যদি তৃণমূল হলদিয়ায় প্রার্থী করে... তা হলে আমাকে আর কিছু করতে হবে না। তৃণমূলই ওঁকে বিসর্জন দেবে।’’ তাপসীর অবশ্য দাবি, তিনি বিধায়কের টিকিটের জন্য ‘লালায়িত’ নন। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে লড়বেন কি না, লড়লেও জিতবেন কি না, সেটা সময় বলবে।