ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরেও খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ের বেআইনি বাজি কারখানায় বিয়েবাড়ির জন্য বাজি তৈরি হচ্ছিল।
অথচ মমতারই সরকারের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ বা আইবি-র গোয়েন্দারা রিপোর্টে জানাচ্ছেন, পটকা-বাজি তো বটেই। মানুষ খুন করার দেশি বোমাও তৈরি হত ওই বেআইনি বাজি কারখানায়। এনআইএ কিংবা সিবিআইয়ের মতো কোনও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এ কথা বলছে না। রাজ্যেরই গোয়েন্দারা এই রিপোর্ট দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের একাংশের দাবিও। মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই পুলিশকর্তাদের ওই অংশের দাবি ছিল, ওই অবৈধ কারখানায় তৈরি হচ্ছিল বিয়েবাড়ির বাজি!
আইবি-র বক্তব্য, ৬ মে রাতে ওই বাজি কারখানায় যে-বিস্ফোরণ ঘটে, তারা ব্যাপকতা এবং বিধ্বংসী চেহারা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, সেখানে দেশি বোমাও তৈরি করা হত এবং তার প্রচুর মালমশলাও সেখানে মজুত ছিল। আইবি-র গোয়েন্দারা তাঁদের রিপোর্টে জানাচ্ছেন, বিস্ফোরণে নিহতদের দেহ যে-ভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং ঘটনাস্থল থেকে ১৫ ফুট দূরে আর গাছের ১২ ফুট উঁচু ডালে যে-ভাবে নিহতদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঝুলছিল, তাতে ওই কারখানায় দেশি বোমা তৈরির সন্দেহটাই প্রতিষ্ঠা পায়।
অর্থাৎ বিস্ফোরণের প্রচণ্ড অভিঘাতই বোমা তৈরির দিকে আঙুল দেখাচ্ছে। রাজ্যের গোয়েন্দাদের ওই রিপোর্ট সম্প্রতি নবান্নে জমা পড়েছে। আইবি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘শুধু পটকা-বাজি বা তার মালমশলা থেকে বিস্ফোরণ ঘটে থাকলে এতটা প্রভাব সম্ভবত হত না।’’ শুধু বোমা তৈরি নয়, তার সম্ভাব্য ব্যবহারের কথাও উল্লেখ করেছে আইবি। তাদের রিপোর্ট বলছে, ‘দুরভিসন্ধিমূলক কাজেই ওই বোমা ব্যবহার করা হত।’
আইবি অবশ্য একই সঙ্গে তাদের রিপোর্টে লিখেছে, জঙ্গি সংগঠনগুলি নাশকতা ঘটানোর জন্য সাধারণত যা ব্যবহার করে, সেই ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা আইইডি তৈরির প্রমাণ পিংলার কারখানায় পাওয়া যায়নি। এই বক্তব্যের সমর্থনে এক গোয়েন্দা-কর্তার যুক্তি, প্রথমত, বিস্ফোরণে কোনও গর্ত তৈরি হয়নি। দ্বিতীয়ত, কারখানাকে ঘিরে থাকা আকাশমণি গাছগুলির একটা পাতাও পোড়েনি। তৃতীয়ত, কারখানার গা ঘেঁষে থাকা বাড়িগুলোর একটা টালিও ভাঙেনি। আইবি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, আরডিএক্স বা ওই ধরনের শক্তিশালী অন্য কোনও বিস্ফোরক মজুত রাখারও প্রমাণ মেলেনি ওই বাজি কারখানায়।
জেহাদি জঙ্গি গোষ্ঠী বা অন্য কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে ওই বাজি কারখানার সম্ভাব্য সংস্রবের কথাও উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আইবি-র রিপোর্টে। তবে গোয়েন্দাদের দাবি, ওই কারখানায় তৈরি পটকা-বাজি শিবকাশীতে তৈরি বলে জালিয়াতি করে বাজারে চালানো হত। ‘শিবকাশী ফায়ারওয়ার্কস লিমিটেড’ লেখা প্রচুর মোড়কও উদ্ধার করা হয়েছে কারখানা-চত্বর থেকে।
এমনিতে সিআইডি পিংলার ওই বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের তদন্ত করছে। তবে বিরোধীদের একাংশ পুরো বিষয়টির সঙ্গে জঙ্গি-যোগের অভিযোগ তোলায় নবান্ন থেকে আইবি-কেও খোঁজখবর নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। সেই অনুযায়ী ৮ মে এক স্পেশ্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট (এসএস)-এর নেতৃত্বে আইবি-র ছ’জনের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে অবশ্য আইবি-র কাছ থেকে কোনও রিপোর্ট চাওয়া হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy