‘ড্রাগন বোট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ পদক জয়ের পর অপূর্ব সামন্ত। ছবি: সংগৃহীত।
তাইল্যান্ডে পদক জয়ের পরেই তিনি ফোন করলেন আনন্দবাজার অনলাইনকে। ঘাটালের ছেলে অপূর্ব সামন্তের গলায় বাঁধভাঙা উচ্ছাস। একনিঃশ্বাসে বলে গেলেন ‘‘জিতে গিয়েছি! আমাদের মোট তিনটে ইভেন্ট ছিল। একটায় সোনা, একটায় রুপো আর একটায় ব্রোঞ্জ।’’
দুর্ঘটনায় হাঁটার ক্ষমতা নেই। তবে হুইলচেয়ারে বসেই অনেক কিছু করে তাক লাগিয়েছেন ঘাটালের ছেলে অপূর্ব। এখন তাইল্যান্ডে গিয়েছেন ‘ড্রাগন বোট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ ভারতীয় প্যারাদলের প্রতিনিধি হয়ে। রবিবার ছিল ফাইনাল। পর পর তিনটি ইভেন্টেই ভারতীয় প্যারাদল প্রথম তিনে থেকেছে। তাইল্যান্ড রওনা হওয়ার আগে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে তাঁর জীবনসফর নিয়ে কথা হয়েছিল অপূর্বর। তখনই বলেছিলেন, ‘‘অনেক লড়াই করেছি, সাফল্যও পেয়েছি কিছু কিছু। এ বার আমার একটাই স্বপ্ন। দেশের হয়ে পদক জয়।’’
সেই স্বপ্ন পূর্ণ হওয়ার উচ্ছাস নিয়েই তাইল্যান্ড থেকে বললেন, ‘‘বেঙ্গল ওয়াটার স্পোর্টসের কোচ শাকিল আহমেদ স্যারের জন্যই আমরা এত দূর আসতে পেরেছি। দেশের হয়ে পদক জিততে পেরেছি। সেই সঙ্গে বেঙ্গল ড্রাগন বোট অ্যান্ড ট্র্যাডিশনাল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনকেও ধন্যবাদ জানাতে হবে।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল শহর থেকে অনেকটা দূরে দাসপুরের দুবরাজপুর গ্রামে বাড়ি অপূর্বের। ২০১৭ সালে দুর্ঘটনা তাঁকে প্রায় মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছিল। এর পরে অনেক লড়াই করে বাঁচলেও হাঁটার ক্ষমতা আর ফেরেনি অপূর্বর। কিন্তু হুইলচেয়ারে বসেই তিনি এগিয়ে যেতে চান। সেই লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন খেলায় অংশ নেন। ম্যারাথন, ভলিবলের পরে ড্রাগনবোট। ঘাটালের ছেলে হলেও এখন কাজের সূত্রে থাকেন শিলিগুড়িতে। কাজ ‘হুইলচেয়ার ট্রেনার’-এর। অন্যদের হুইলচেয়ার ব্যাবহার করে স্বনির্ভর হওয়া শেখান। তাইল্যান্ড রওনা হওয়ার আগে প্রশিক্ষণ হয়েছিল নিউ টাউনের ইকো পার্কে।
কাজ, খেলার অনুশীলন, প্রতিযোগিতা এ সবের মধ্যেও ‘মাই লাইফ অপূর্ব’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান অপূর্ব। সেটিরও লক্ষ্য ‘লড়াই’ শেখানো। অপূর্ব বলেছিলেন, ‘‘আমি সব কিছু দিয়েই আসলে বোঝাতে চাই একটা কথা— সম্ভব! আমার মতো এমন অনেকে অন্ধকার ঘরে বসে রয়েছেন। তাঁদের সবাইকে বোঝাতে চাই, হুইলচেয়ারে বসেও স্বপ্ন সফল হয়। স্বপ্নটা শুধু দেখতে হবে। আমাকে অন্যেরা স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আমিও সবাইকে সেই স্বপ্ন দেখাতে চাই।’’ তাইল্যান্ডে পদক জয়ের পরে তিনি বললেন, ‘‘স্বাধীনতা দিবসের দিনই কলকাতায় পা রাখার কথা। এ বার গিয়ে এই প্রতিযোগিতার কথা সবাইকে বলব। আমার চ্যানেলে ছবি, ভিডিয়ো দেব। বলব হুইলচেয়ারে বসেও স্বাধীন হওয়া, স্বাধীন থাকার কাহিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy