তিনি আর মন্ত্রী নন। এমনকী, বিধায়কও নন।
ফলে তাঁর গায়ে আর ‘প্রভাবশালী’ তকমা লাগানো যাবে না বলে মনে করেন মদনগোপাল মিত্র। এতে অবশ্য সিবিআই ভিজছে না। তারা এ বারও সারদা-মামলায় মদনের জামিন-আর্জির বিরোধিতা করার জন্য কোমর বাঁধছে।
কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর দাবি, গত ক’মাসে মদন মিত্রের বিরুদ্ধে বেশ কিছু নতুন তথ্য-প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে। সারদা তো বটেই, আরও কিছু অর্থলগ্নি সংস্থা সম্পর্কিত তদন্তেও ওঁর নাম উঠে এসেছে বলে গোয়েন্দাদের ইঙ্গিত। মদন-ঘনিষ্ঠেরা অবশ্য এতে আমল দিচ্ছেন না। সিবিআইয়ের দাবিকে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর কৌঁসুলি।
দেড় বছর আগে সারদা মামলায় মদন যখন গ্রেফতার হলেন, তখন তিনি রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী। বন্দি অবস্থাতেও বহু দিন তাঁর মন্ত্রিপদ অটুট ছিল। সেই সময়ে নিম্ন ও উচ্চ আদালতে যত বার তাঁর হয়ে জামিনের আবেদন পেশ হয়েছে, সিবিআই তত বার তুলে এনেছে ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্ব। ‘গ্রেফতার হয়েও যিনি দিব্যি মন্ত্রী থাকেন, শরীর খারাপের কথা বলে যখন-তখন হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়ে যান, সমাজে তাঁর প্রভাব অনস্বীকার্য। এমন এক প্রভাবশালী ব্যক্তি জামিন পেয়ে গেলে মামলার সাক্ষীরা প্রভাবিত হতে পারেন।’— এজলাসে যুক্তি সাজিয়েছিলেন সিবিআইয়ের কৌঁসুলিরা।
বেশ ক’বার আর্জি নামঞ্জুর হওয়ার পরে গত বছরের নভেম্বরে নিম্ন আদালতে জামিন পেয়ে যান মদন মিত্র। তখন তিনি হাসপাতালে ভর্তি। জামিন হতেই পত্রপাঠ বাড়ি চলে যান। নিম্ন আদালতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সিবিআই যায় কলকাতা হাইকোর্টে। হাইকোর্টে জামিন রদ হয়ে যায়। দিন ছয়েক বাড়িতে থেকে ফের মদনের ঠাঁই হয় জেলে। এর পরে পরেই রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীর পদ থেকে মদন মিত্রকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে তিনি তখনও বিধায়ক যে কারণে। পরবর্তী জামি-আর্জির শুনানিগুলিতে ‘বিধায়ক’ মদন মিত্রের বিরুদ্ধেই প্রভাবশালী তত্ত্ব খাড়া করে সিবিআই।
এখন পরিস্থিতি বদলেছে। গারদের ও-পার থেকে মদন মিত্র বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন। হেরে গিয়েছেন ৪২০০ ভোটে। তখনই ঘনিষ্ঠ মহলে প্রাক্তন মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ‘ভালই হয়েছে। এখন আর সিবিআই আমাকে প্রভাবশালী বলতে পারবে না।’ ঘনিষ্ঠরাও বলছেন, মদনবাবু বিধায়ক পদে না-থাকায় এ বার কোর্টে ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্ব খাটবে না। জামিন চাইলে মঞ্জুর হতে বাধা নেই।
ঘটনা হল, এটা সিবিআই-ও বিলক্ষণ জানে। তাই তারা অন্য ঘুঁটি সাজাচ্ছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের বক্তব্য: প্রাক্তন মন্ত্রীর জামিনের বিরোধিতা করার জন্য তাদের হাতে অন্যান্য তথ্য-প্রমাণ মজুত। কী রকম?
ব্যুরো-সূত্রের খবর: সারদা তদন্ত চলাকালীনই আর এক লগ্নিসংস্থা রোজ ভ্যালির সঙ্গে মদন মিত্রের ‘ঘনিষ্ঠতা’র খবর ফাঁস হয়েছিল। ওই সংস্থার খরচে পাঁচতারা হোটেলে সপার্ষদ মদনের থাকা-খাওয়া সংক্রান্ত নথি সিবিআই ইতিমধ্যে কোর্টে জমা করেছে। পাশাপাশি তদন্তকারীরা আরও কিছু অর্থলগ্নি সংস্থার প্রসঙ্গ তুলে আনছেন। তাঁদের অভিযোগ, মদনবাবু ক্ষমতায় থাকাকালীন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির থেকে নানা অনৈতিক সুযোগ-সুবিধে নিয়েছেন।
এবং মদনের জামিন আটকাতে সেই সব তথ্যই আদালতে পেশ করতে চাইছে সিবিআই। যদিও প্রাক্তন মন্ত্রীর আইনজীবীরা তাতে গুরুত্ব দিতে নারাজ। ‘‘সিবিআইয়ের দাবির কোনও ভিত্তি নেই।’’— মন্তব্য করেছেন মদনবাবুর কৌঁসুলি নীলাদ্রি ভট্টাচার্য। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সিবিআই তা হলে এত দিন এ সব বলেনি কেন?’’
আসলে সিবিআই এখন যেন-তেন প্রকারে মদন মিত্রের জামিন রুখতে ভিত্তিহীন নালিশ তুলছে বলে পাল্টা তোপ দেগেছেন মদনের কৌঁসুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy