Advertisement
E-Paper

এত ওজন কমছে কেন, খুঁজতে বোর্ড

একই সঙ্গে দু’জনে ধরা পড়েছিলেন কাশ্মীরের সোনমার্গ থেকে। পুলিশি হেফাজতে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল দু’জনেরই। ইদানীং এক জনের স্বাস্থ্যের হাল কিছুটা ফিরেছে। জেল থেকে আদালতে যাতায়াতের পথে দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের চেহারায় দেখা যাচ্ছে পরিপাটি প্রসাধনের চিহ্ন। আর অন্য জনের চেহারা চোখে পড়ার মতো শুকিয়ে গিয়েছে গত দেড় বছরে। ওজন কমে গিয়েছে ১৮ কেজি। সুদীপ্ত সেনের ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন সিবিআই, যে তাদের অনুরোধেই সারদা কর্তার জন্য এসএসকেএমের বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড গড়তে রাজি হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৪

একই সঙ্গে দু’জনে ধরা পড়েছিলেন কাশ্মীরের সোনমার্গ থেকে। পুলিশি হেফাজতে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল দু’জনেরই। ইদানীং এক জনের স্বাস্থ্যের হাল কিছুটা ফিরেছে। জেল থেকে আদালতে যাতায়াতের পথে দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের চেহারায় দেখা যাচ্ছে পরিপাটি প্রসাধনের চিহ্ন। আর অন্য জনের চেহারা চোখে পড়ার মতো শুকিয়ে গিয়েছে গত দেড় বছরে। ওজন কমে গিয়েছে ১৮ কেজি। সুদীপ্ত সেনের ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন সিবিআই, যে তাদের অনুরোধেই সারদা কর্তার জন্য এসএসকেএমের বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড গড়তে রাজি হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

কাল, সোমবার বেলা ১১টায় পাঁচ চিকিৎসকের ওই বোর্ডের সামনে হাজির করা হবে সুদীপ্তকে। এসএসকেএম সূত্রের খবর, সারদা-প্রধানের স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য গড়া ওই মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে মেডিসিনের চিকিৎসক নির্মল সরকারকে। থাকছেন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট গোপালকৃষ্ণ ঢালি এবং এন্ডোক্রিনোলজিস্ট শুভঙ্কর চৌধুরী। এ ছাড়া থাকছেন নিউরোলজি এবং ফিজিক্যাল মেডিসিনের দুই চিকিৎসক। এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র এ দিন বলেন, “দিন কয়েক আগেই সিবিআইয়ের কর্তারা আমাদের জানান, সুদীপ্তর ওজন খুব কমে যাচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে তাঁর স্বাস্থ্য ঠিক রাখা প্রয়োজন। ওঁদের অনুরোধেই মেডিক্যাল বোর্ড গড়েছি।”

‘সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন’ বলে গুগ্ল সার্চ দিলে দামি স্যুট আর রে ব্যান সানগ্লাস পরা চকচকে চেহারার যে মানুষটির বেশ কিছু ছবি এখনও পাওয়া যায়, তার সঙ্গে ইদানীং নিয়মিত প্রিজন ভ্যান থেকে নামা কঙ্কালসার চেহারাটাকে মেলানো নিতান্তই কঠিন। গালে না কামানো কাঁচাপাকা দাড়ি, অনেক সময়েই অবিন্যস্ত চুল। সুদীপ্তের স্ত্রী পিয়ালি সেন জানান, ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারের আগে তাঁর স্বামীর ওজন ছিল প্রায় ৭৬ কেজি। আর এখন? আলিপুর জেলের এক কর্তা জানান, দিন পনেরো আগে দেখা গিয়েছিল সুদীপ্তর ওজন নেমে এসেছে ৫৮ কেজিতে!

ওজন এত কমছে কেন? জেলের ওই কর্তা জানান, জেলে যাওয়ার পর থেকেই খাওয়াদাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন সুদীপ্ত। শুধু মুড়ি আর জল খেয়েই কাটান। আর কোনও খাবার খেতে চান না। অন্য একটি সূত্রের বক্তব্য, জেলের সুপার এক বার সুদীপ্তকে ভাল করে খাওয়াদাওয়া করতে বলেছিলেন। সুদীপ্ত মুচকি হেসে বলেছিলেন, “কম খাওয়া ভাল। তাতে শরীর ভাল থাকে।”

গ্রেফতার হওয়ার আগেও অবশ্য রকমারি মশলাদার খাবার সহ্য হতো না সুদীপ্তর। পিয়ালিদেবী জানিয়েছেন, বিয়ের বছর দুই পরেই সুদীপ্তর উচ্চ রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার ধরা পড়ে। ২০০৩ নাগাদ সুগার ৪০০-র কাছাকাছি পৌঁছয়। সঙ্গে পেটের রোগ। তাই ভাত আর পেঁপে সেদ্ধ খেতেন। অফিসে খাবার আসত বাড়ি থেকে। কলকাতার বাইরে গেলে পাঁচতারা হোটেলেও ওঁর জন্য খিচুড়ি বানানো হত। পিয়ালিদেবী জানান, ব্লাড প্রেসার ও সুগারের পর সুদীপ্তর গ্যাসট্রিকের সমস্যাও বাড়তে থাকে। সল্টলেকের এক হাসপাতালে হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়মিত চিকিৎসা করাতেন তিনি। মেডিসিনের এক বিশেষজ্ঞ প্রতি মাসে তাঁকে দেখতেন।

সারদা কর্তার ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, এই ধরনের নানা শারীরিক সমস্যার সঙ্গেই যোগ হয়েছে মানসিক চাপ। এমনকী রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের হাতে সারদা তদন্ত থাকাকালীন কিছু কর্তা সুদীপ্তর উপরে মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ তাঁর আইনজীবীর। এ ছাড়া রয়েছে ঘোরাঘুরির ধকল। আজ শিলিগুড়ি, কাল বাঁকুড়া তো পরশু ওড়িশা। একই বক্তব্য দেবযানীর আইনজীবীর। বস্তুত, সেই কারণেই আইনজীবীরা দু’জনের বিরুদ্ধে সমস্ত মামলা একত্র করে একটি আদালতেই শুনানির আর্জি জানিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও লাগাতার চলেছে ঘোরাঘুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাজতবাস শুরু হলে প্রাথমিক চাপটা পড়ে মনের উপর। অনেকেই প্রথম দিকে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেন। এর জেরে শরীর ভেঙে পড়ে। পুরনো সমস্যা থাকলে তা-ও জটিল হয়ে ওঠে। দেবযানীরও কিছু শারীরিক সমস্যা আগে থেকেই ছিল বলে জানিয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল। গ্রেফতার হওয়ার পরেই তাঁর পেটের গোলমাল দেখা দিয়েছিল। মাস কয়েক আগে স্পন্ডিলোসিসের সমস্যাও ধরা পড়ে। তার চিকিৎসা চলেছিল কিছুদিন। তবে ইদানীং কোর্টে যাতায়াতের পথে তাঁকে দেখে কিছুটা তরতাজাই মনে হচ্ছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেউ কেউ দেবযানীর ‘প্লাক করা’ ভুরু, নেলপালিশ, পরনের দামি সালোয়ার-কামিজের কথা বলেছেন। জেল সূত্রের খবর, দেবযানী সেখানেও থাকেন যথেষ্ট পরিপাটি। নিজের থালায় খান, দামি সাবান ব্যবহার করেন। ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, সারদার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পর মানসিক ভাবে কিছুটা চাপমুক্ত হন দেবযানী। উপরন্তু এই দেড় বছরে পরিস্থিতির সঙ্গে তিনি মানিয়ে নিতে পেরেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সেই ‘মানিয়ে নেওয়ার’ চিহ্নটাই সুদীপ্তর চেহারায় নেই। কী ভাবে তাঁর ভগ্ন স্বাস্থ্য ফেরানো সম্ভব, তা দেখতেই কাল বসছে মেডিক্যাল বোর্ড। তার সদস্য শুভঙ্করবাবু বলেন, “সুদীপ্ত সেনের কোন শারীরিক সমস্যার জন্য বোর্ড গড়া হয়েছে, এখনও জানি না। সোমবার বোঝা যাবে।” আর এক সদস্য গোপালকৃষ্ণবাবুর মতে, “স্বাস্থ্য ভেঙে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। ক্রনিক ডায়ারিয়া থাকলে, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা ক্রনিক লিভারের সমস্যা থাকলেও ওজন কমে। অনেক সময় মানসিক দুশ্চিন্তার সঙ্গে তার যোগ থাকে। দুশ্চিন্তা থাকলে মানুষের খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায়। এ ক্ষেত্রে কী হচ্ছে, পরীক্ষা না করে বোঝা যাবে না।”

সারদা কমিশনে হাজিরা দেওয়ার সময়েও কর্তাদের সুদীপ্ত জানিয়েছিলেন, তাঁর শরীর ভাল নেই। কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলকুমার সেন একাধিক বার বলেছেন, সুদীপ্তর ভাল ভাবে চিকিৎসা করানো দরকার। এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “কমিশনে হজিরা থাকলে সুদীপ্তকে জেল থেকে নিয়ে আসা হয় বেলা ১১টার মধ্যে। সেখান থেকে বেরিয়ে প্রায়ই তিনি কিছু খেতে চান না। হয়তো দু’পিস সেঁকা পাউরুটি, একটা কলা দেওয়া হল। তা-ও খেতে চান না। বলেন, খিদে নেই। পেটে ব্যথা।”

তবে কি তদন্ত রাজ্যের হাতে থাকার সময়ে সুদীপ্তর ভগ্ন স্বাস্থ্যের দিকে নজর পড়েনি পুলিশের? সিবিআইয়ের চিঠি না এলে কি আদৌ বসত মেডিক্যাল বোর্ড? প্রশ্নগুলো কিন্তু উঠছে।

shardha scam sudipta sen weight loss
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy