Advertisement
E-Paper

বিভ্রান্তির প্যাঁচে আয়ুষ চিকিৎসকেরা

স্বাস্থ্য দফতরই গোটা ডিসেম্বর মাস জুড়ে ১০টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে আয়ুষ চিকিৎসকদের তিন দিনের অ্যালোপ্যাথি মেডিসিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে! এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েই ধন্দ দেখা দিয়েছে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৪

মহা প্যাঁচে পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। কেন্দ্রের প্রস্তাবিত ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বিল’ (এনএমসি)-এ আয়ুষ চিকিৎসকদের ব্রিজ কোর্স করানোর বিরোধিতা করে সরব হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের দুই কর্তা নির্মল মাজি এবং শান্তনু সেনও এর বিরোধী। অথচ, এই স্বাস্থ্য দফতরই গোটা ডিসেম্বর মাস জুড়ে ১০টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে আয়ুষ চিকিৎসকদের তিন দিনের অ্যালোপ্যাথি মেডিসিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে! এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েই ধন্দ দেখা দিয়েছে।

অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারদের অভাব কিছুটা হলেও পূরণ করতে আয়ুষ চিকিৎসকদের ব্রিজ কোর্স করানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্যভবন মনে করে, এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে ‘ক্রসপ্যাথি’-র ফলে চিকিৎসার মান নষ্ট হবে। বিপন্ন হবেন ডাক্তাররা। বিপদে পড়তে পারেন রোগীরাও। তিন দিন আগে সাংবাদিক বৈঠক করে একই অভিযোগ করেছিলেন শাসক দলের বিধায়ক তথা চিকিৎসক-নেতা নির্মলবাবু ও তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনুবাবু।

তা হলে রাজ্য কী করে প্রায় একই উদ্দেশ্যে আয়ুষ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিল? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ‘ট্রেনিং অব আয়ুষ ডক্টর্স টু প্র্যাকটিস মডার্ন মেডিসিন’ শীর্ষক এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল, আয়ুষ চিকিৎসকেরা যাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০ ধরনের অ্যালোপ্যাথি ওষুধ তাঁদের প্রেসক্রিপশনে লিখতে পারেন। ইতিমধ্যে রাজ্যের ১২০০-র বেশি আয়ুর্বেদ চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেওয়াও হয়েছে। অর্থাৎ, কেন্দ্রের প্রস্তাবিত বিলে যে সংস্থানের কথা বলা হয়েছে, রাজ্য ইতিমধ্যে তা হাতে-কলমে শুরু করে দিয়েছে।

সরকারের এই দু’মুখো নীতি নিয়েই গোল বেধেছে। যেমন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কেন্দ্রের নির্দেশে এই প্রশিক্ষণ করিয়েছিলাম। তবে এটা কার্যকর হবে কিনা, এখনও ঠিক নেই।’’ নির্মল মাজির ব্যাখ্যা, ‘‘ওই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আয়ুর্বেদ ডাক্তারেরা শুধু অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারদের সহায়তা করবেন আর অল্পস্বল্প ‘ড্রেসিং’ করবেন। একে ‘ক্রসপ্যাথি’ বলা যায় না।’’ আবার, খোদ আয়ুষ বিভাগের শীর্ষকর্তা বলছেন, ‘‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আয়ুর্বেদ ডাক্তারেরা কিছু-কিছু অ্যালোপ্যাথি ওষুধ লিখতে পারবেন। তবে শর্ত হল, একই প্রেসক্রিপশনে অ্যালোপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ ওষুধ মিশিয়ে লিখতে পারবেন না।’’

সরকারের নিজেদের মধ্যে এই টানাটানির জেরে এখনও আয়ুষ ডাক্তাররা কাজই শুরু করতে পারেননি। তেমনই এক প্রশিক্ষিত আয়ুষ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতে পারব বলেই রাজ্য সরকারের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এখন কেন এত কথা হচ্ছে!’’ এদের নিয়ে ফাঁপরে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতর। আবার, শান্তনু সেনরা বেঁকে বসায় বেকায়দায় পড়েছে মেডিক্যাল কাউন্সিল। এর জেরে আয়ুষদের প্রশিক্ষণ শেষের শংসাপত্র দেওয়া হলেও রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এখনও তাঁদের অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করার অনুমতি দেয়নি।

শেষ পর্যন্ত কী হবে— জানেন না কেউ।

Ayurveda Medical Bill NMC আয়ুষ চিকিৎসক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy