—ফাইল চিত্র
সঙ্কটজনক করোনা রোগীকে ঠিক কখন টোসিলিজ়ুম্যাব ইঞ্জেকশন দিতে হবে, তার নির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। ওই ইঞ্জেকশন পেতে বিভিন্ন ধাপ পেরোতে হয় হাসপাতালকে। এই অবস্থায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ জন রোগীর জন্য ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট থেকে যে-ভাবে ২৬টি টোসিলিজ়ুম্যাব ইঞ্জেকশন নেওয়া হয়েছে, সেই পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক বাড়ছে। ইঞ্জেকশনগুলি কোথায় গেল, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার নবান্নে বলেন, ‘‘কে একটা গিয়ে অভিযোগ করল, তিনি নিজে ঠিক আছেন তো! সব অভিযোগেরই তদন্ত ছাড়া তো কিছু হয় না। স্বাস্থ্য দফতর আছে, তারা বিষয়টি দেখবে। মেডিক্যাল কলেজ নিজের বিষয়টি ভাল বোঝে, তারা নিজেরাও দেখবে। আর, একটা কথা শুনে এখনই কোনও রাজনৈতিক অবস্থান নেব না আমি। স্বাস্থ্য দফতর, মেডিক্যাল কলেজের হাতে আইনত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে, তারা বিষয়টি দেখবে।’’
‘‘স্পেসিমেন এগ্জ়ামিনেশন ফর্ম’’-এ লিখে গত ২৪ এপ্রিলের ওই দামি ইঞ্জেকশন নেওয়ার ঘটনা সমাজমাধ্যমে আসে গত মঙ্গলবার। মেডিক্যাল-কর্তৃপক্ষ জানান, ঘটনার কয়েক দিন পরেই তদন্ত শুরু হয়। অধ্যক্ষ মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ গুরুতর। তাই যে-দিন অভিযোগ এসেছে, সে-দিনই তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাব।" ফার্মাকোলজি, ফরেন্সিক-সহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, নার্সিং বিভাগের আধিকারিক-সহ মোট সাত জন সদস্য রয়েছেন কমিটিতে। এ দিন ছিল সেই কমিটির তৃতীয় শুনানি।
ওই দামি ওষুধের বিষয়ে একটি অডিয়ো ক্লিপিং (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছিল মঙ্গলবারেই। এ দিন সেই বিষয়ে আরও একটি অডিয়ো ক্লিপিং (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে, সিসিইউ-এর নার্সকে ফোন করে অভিযুক্ত চিকিৎসক বলছেন, ‘‘আমি দেবাশিস স্যরকে ফোন করেছিলাম। নির্মল মাঝি স্যর আমার থেকে চেয়েছিলেন বলে ও ভাবে নিয়েছিলাম। উনি আমাকে বললেন দেবাশিস স্যরকে ফোন করে নাও এক বার। বলে দাও, আমি বলেছি, বোঝাপড়া আমার সঙ্গে করে নিতে। দেবাশিস স্যর বললেন, মায়ের নামে তো এগুলো তোলা যায় না। এটা নিয়ে ভাবতে হবে না। স্যরকে বলো, কোনও চিন্তা নেই। চাপ নেই। আমার যা দেখার, আমি দেখে নিয়েছি। কালকে নয়, তুই সোমবার আয়। দরকার পড়লে একটা রিসিভ কপি দিবি, না-হলে এটা ছিঁড়ে ফেলে দেব। এমন একটা করে নেব। এখন উপর মহলে কথা হয়ে গিয়েছে। স্যর সোমবার দিনই যেতে বলেছেন।’’ এই কথোপকথনের পরে অনেকটাই আশ্বস্ত শোনাচ্ছে সংশ্লিষ্ট নার্সকে। অভিযুক্ত মেডিক্যাল অফিসার (সিসিইউ) চিকিৎসক দেবাংশী সাহা অবশ্য সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে চার মাস আগেই তিনি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান-পদে ইস্তফা দিয়েছেন বলে দাবি করে চিকিৎসক-বিধায়ক নির্মল মাজি এ দিন বলেন, "ওই অডিয়োয় কার গলা, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এপ্রিলে আমি নির্বাচনে ব্যস্ত ছিলাম। আমার নাম জড়িয়ে জালিয়াতি করা হচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা বরদাস্ত করি না। আমিও চাই, দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।"
মেডিক্যালে ইঞ্জেকশন দুর্নীতির যথাযথ তদন্তের দ্রুত নিষ্পত্তি দাবি করেছেন অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা, ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক কৌশিক চাকী, সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সজল বিশ্বাস, মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্র। এ দিন হাসপাতালে গিয়ে এই বিষয়ে স্মারকলিপি দেন আইএনটিইউসি সেবাদলের রাজ্য শাখার সদস্যেরা। ওই সংগঠনের সভাপতি প্রমোদ পাণ্ডে বলেন, "বৌবাজার থানাতেও ই-মেল করে অভিযোগ পাঠিয়ে দিয়েছি।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy