রভূমের পাইকর এলাকার বাসিন্দা অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুনকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্কের পর এবার সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কার মুখে পড়ল কেন্দ্র সরকার। কোনও শারীরিক যাচাইকরণ ছাড়াই সোনালি এবং আরও পাঁচ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো নিয়ে আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে কেন্দ্র। মঙ্গলবার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট কার্যত তাঁদের ভারতে ফিরিয়ে আনার কথা বলেছে।
মঙ্গলবারের শুনানিপর্বে প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ সোনালির ভারতীয় নাগরিকত্বকে কার্যত স্বীকৃতি দিয়ে কেন্দ্রকে বলেছে, ‘‘অনেক তথ্য রেকর্ডে রয়েছে। জন্মের শংসাপত্র, আত্মীয়দের সঙ্গে থাকতেন এটাও এক ধরনের প্রমাণ। অভিযোগ, আপনারা বক্তব্য না শুনেই পাঠিয়ে দিয়েছেন।’’ এর পরেই বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে কেউ প্রবেশের কারণে আপনারা পুশব্যাক করতেই পারেন। তা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এটা নিশ্চিত করতে হবে তিনি যেন দেশের নাগরিক না হন। কেউ যদি বলেন ভারতে জন্ম নিয়েছেন, এখানে ছোট থেকে বড় হয়েছেন তবে তাঁর অধিকার রয়েছে। তাঁর কথা শোনা উচিত।’’
আগামী সোমবার (১ ডিসেম্বর) মামলার পরবর্তী শুনানি। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, এই সময়সীমার মধ্যে সব কিছু নথি যাচাই করতে হবে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘নিরপেক্ষ ভাবে আপনারা আপনাদের কাজ করুন। পরিবারকে বক্তব্য জানানোর সুযোগ দিতে হবে।’’ প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে দিল্লিতে কর্মরত বীরভূমের বাসিন্দা সোনালি ও সুইটি বিবি-সহ ছ’জনকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয় বলে অভিযোগ। ২০ অগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ তাঁদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরে। তখন থেকেই তাঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংশোধনাগারে বন্দি। সোনালিদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বাংলাদেশ পুলিশ মামলাও রুজু করেছে।
পরিবার এবং আইনজীবীদের দাবি— সোনালিরা ভারতের নাগরিক, তাঁদের বৈধ নথিও রয়েছে। পুশব্যাকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সোনালির বাবা ভদু শেখ। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম আইনি লড়াইয়ে সহায়তা করেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, সোনালি-সহ ছ’জনকেই চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফেরাতে হবে। সে সময়সীমা শেষ হয় ২৪ অক্টোবর। কিন্তু তার আগেই, ২২ অক্টোবর ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় কেন্দ্রীয় সরকার। মঙ্গলবারের শুনানিতে কেন্দ্র আদালতের কাছে সময় চাইলে, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করে জানায়— মানবাধিকার, বিশেষ করে একজন গর্ভবতী মহিলার জীবন ও মর্যাদা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।