২০২৫ সালের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) যে বিধি তৈরি করেছে, তাতে বৈষম্য রয়েছে! এসএসসি মামলার শুনানিতে শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে এমনই দাবি করলেন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় বঞ্চিত প্রার্থীদের একাংশ। কী কারণে তাঁরা বৈষম্যের কথা বলছেন, তা-ও আদালতে ব্যাখ্যা করেছেন মামলাকারীরা। নয়া নিয়োগপ্রক্রিয়ায় এসএসসি যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাই কোর্ট। রাজ্যের কাছে বিচারপতি অমৃতা সিংহ জানতে চান, কী ভাবে যোগ্যদের চিহ্নিত করা হল?
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই এসএসসি সংক্রান্ত সব মামলা শুনছে হাই কোর্ট। ২০২৫ সালের নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ার বিধি এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১০ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি ছিল শুক্রবার। সেই শুনানিতে মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিম দাবি করেন, ‘‘অনেক যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’’ ২০২৫ সালের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে থাকা নিয়মগুলি এসএসসি ‘নিজেদের খেয়ালখুশি মতো করেছে’ বলে দাবি মামলাকারীদের। তাঁদের আইনজীবীদের বক্তব্য, ‘‘২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়া দুর্নীতিগ্রস্ত। তার সমাধান না করে আবার ভুল পথে নিয়োগ করছে এসএসসি।’’
২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়া চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ আদালতে মামলা করেন। তাঁদের দাবি, ‘‘এসএসএসির নয়া নিয়মের কারণে আমরা বঞ্চিত। যদিও আমাদের কারও বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই।’’ মামলাকারীদের বক্তব্য, ‘‘২০২৫ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় এমন কিছু নিয়ম আনা হয়েছে, আগে যা ছিল না। নয়া নিয়মে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নম্বর দেওয়ার কথা রয়েছে। বলা হয়েছে, আগে যাঁরা স্কুলে বা বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকতা করেছেন তাঁদের অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হবে। এই নিয়ম কেন? এর ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ২০১৬ সালের দুর্নীতির কারণে বঞ্চিতদের তো অভিজ্ঞতা নেই। তাঁরা সেই সুযোগ পাননি। উল্টো দিকে, অনিয়মে চাকরি পেয়েছেন তাঁরা পাবেন অতিরিক্ত নম্বর। এই নিয়ম বৈষম্য তৈরি করেছে।’’
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্তের উদ্দেশে বিচারপতি সিংহের বক্তব্য, ‘‘২০২৫ সালের নিয়ম বহু প্রার্থীকে এই নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করেছে।’’ তার পরেই বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘কারা যোগ্য আপনারা কী ভাবে তাঁদের চিহ্নিত করলেন? নতুন নিয়মে বয়সের যে ছাড়ের কথা বলা হয়েছে তার সুবিধা কারা পাবেন?’’
আরও পড়ুন:
আদালতে এজি দাবি করেন, ‘‘মামলাকারীরা নিজেদের মতো করে ২০২৫ সালের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির ব্যাখ্যা করছেন। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টের নির্দেশ রয়েছে। পুরো বিষয়টি আদালতের নজরে এনেই করা হয়েছে।’’ নয়া নিয়মবিধি নিয়ে রাজ্যের বক্তব্য, ‘‘এটাকে যদি ত্রুটি হিসাবে ধরাও হয় তবুও ২০১৬ এবং ২০১৯ সালের নিয়ম পুনরায় কার্যকর হতে পারে না।’’ এজি জানান, ২০১৬ সালের জায়গায় ২০১৯ সালের নিয়ম আনা হয়েছে। আর ২০১৯ সালের জায়গায় আনা হয়েছে ২০২৫ সালের নিয়ম। ফলে আদালত যদি ২০২৫ সালের বিজ্ঞপ্তি বাতিলও করে, তবুও পুরানো দুই নিয়ম আনা যায় না।
মামলাকারীদের অভিযোগ, ‘‘যোগ্য এবং অযোগ্যদের কোনও তালিকা এসএসসি প্রকাশ করেনি। ফলে প্রকৃত যোগ্য এবং অযোগ্য কারা তা এখনও স্পষ্ট নয়। এর ফলে দাগি অযোগ্যেরা নতুন নিয়োগের পরীক্ষা দিয়েছেন। তবে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে বলেছে, কোনও ভাবেই দাগি অযোগ্য প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এমনকি প্রার্থী প্রতিবন্ধী হলেও না। পরীক্ষার ওএমআর শিটের মূল্যায়ন বাইরের কোনও সংস্থা দিয়ে করানোর যে নির্দেশ হাই কোর্ট দিয়েছিল, তা মানেনি এসএসসি।’’ মামলাকারীদের আবেদন, ‘’২৯ এবং ৩০ মে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল তা খারিজ করা হোক। নতুন ভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিক আদালত। প্রকাশ করা হোক যোগ্য এবং দাগি অযোগ্যদের তালিকা।’’ তবে আদালত শুক্রবার এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেয়নি। আগামী সোমবার রাজ্য এবং এসএসসি এই মামলায় নিজেদের বক্তব্য জানাবে।