Advertisement
১৬ মে ২০২৪
WB Panchayat Election 2023

কম কেন্দ্রীয় বাহিনী চলবে না, ২০১৩-র ভোট মনে করিয়ে কমপক্ষে ৮২ হাজার জওয়ান রাখতে বলল কোর্ট

বিজেপি আদালতকে জানিয়েছিল, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ৮২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটেও কমপক্ষে ওই সংখ্যক বাহিনী রাখতে হবে।

২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল  রাজ্যে।

২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল রাজ্যে। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৩ ১৬:৪৮
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে কত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে, তা নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বুধবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিল, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে যে সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তার থেকে কম কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা চলবে না। শুধু তা-ই নয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই বাহিনীর জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করতে হবে বলেও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে বুধবার বিরোধীদের মামলার শুনানি ছিল হাই কোর্টে। পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে হাই কোর্টের নির্দেশ পালন করা হয়নি এই অভিযোগে কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন বিরোধীরা। বিজেপির তরফে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরি ওরফে ডালু ওই মামলা করেন। যার শুনানির জন্য মামলা ওঠে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতি মামলার শুনানির শুরুতেই কমিশনকে বলেন, ‘‘বলতে বাধ্য হচ্ছি এত কিছুর পরে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, কমিশনারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করতে হচ্ছে। আপনারা দয়া করে হাই কোর্টের নির্দেশ পালন করুন।’’

গত ১৫ জুন কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, গোটা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতেই পঞ্চায়েত ভোট করাতে হবে। শুধু তা-ই নয়, ওই নির্দেশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চাইতেও হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, হাই কোর্টের ওই নির্দেশ সত্ত্বেও বাহিনী আনার জন্য অনুরোধ করে কমিশনের তরফে যোগাযোগ করা হয়নি কেন্দ্রকে। পরে অবশ্য মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন জানায় গোটা রাজ্যের ২২ টি জেলায় ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছে তারা। কমিশনের সেই বক্তব্য ঘিরে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। কারণ গোটা রাজ্যে ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর অর্থ মেরেকেটে ২০০০ জওয়ানের উপস্থিতি। বিরোধীদের কথায় যা থাকা আর না-থাকায় কোনও তফাৎ নেই।

বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বিজেপি জানিয়েছিল, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ৮২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল রাজ্যে। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেন, “এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তার জন্যও অন্তত ওই সংখ্যক বা তার বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’’ কমিশন ২২টি জেলার জন্য যে ২২ কোম্পানি অর্থাৎ ২০০০-এর কিছু কম আধা সেনা মোতায়েনের কথা বলেছে, তা করলে চলবে না। আর এই বাহিনীর জন্য কমিশনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জানাতে হবে কেন্দ্রকে।

কেন্দ্রীয় বাহিনী সংক্রান্ত হাই কোর্টের নির্দেশ মঙ্গলবার বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানায়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভারতে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেন্দ্র বাহিনীর দাবি অমূলক নয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিতে নির্বাচন হওয়া উচিত। অন্য দিকে, হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগের মামলাটি বুধবার ওঠে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ নিজেদের পর্যবেক্ষণে জানিয়ে দেয়, যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কমিশন যে তা পালন করেনি, তা আদালতের কাছে স্পষ্ট। বেঞ্চ এ-ও বলে যে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

পাল্টা জবাবে অবশ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী দাবি করেন, আদালতের নির্দেশ মানা হয়েছে। প্রথমে স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। পরে রাজ্যের সব জেলায় বাহিনী মোতায়েন করতে বলা হয়েছিল। সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতেই রাজ্যের প্রতি জেলার জন্য এক কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হয়েছে। বিজেপির তরফে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী সৌম্য মজুমদার এবং শ্রীজীব চক্রবর্তী। কমিশনের এই বক্তব্য প্রসঙ্গে আদালতকে মামলাকারীর আইনজীবীরা জানান, একটি কোম্পানিতে ৮০ জন সেনাজওয়ান সাধারণত সরাসরি কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। ফলে ভোটের জন্য মাত্র ১৭০০ বাহিনী কাজ করবে। যা অপর্যাপ্ত।

এ ব্যাপারে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের উদাহরণ টেনে এনে মামলাকারীরা বলেন, সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল কমিশন। সুপ্রিম কোর্ট বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল। ২০১৩ সালে ৫ দফায় রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল। মোতায়েন করা হয়েছিল ৮০০ কোম্পানি (৮২০০০) বাহিনী। আর রাজ্যের পুলিশ ছিল ১ লাখ ৫ হাজার। মামলাকারীদের এই বক্তব্য শোনার পর আদালত জানিয়েছে, তারা বিস্মিত যে সেই সময় রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। আদালত বলে, তারা এখনও একই রকম নিরপেক্ষতা আশা করে কমিশনের কাছে। যে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে তারা ২০১৩ সালে রাজ্যের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল, সে ভাবেই এখনও কমিশনের স্বাধীন এবং সক্রিয় ভূমিকা আশা করে আদালত।

আদালতের পর্যবেক্ষণ, তখন ১৭টি জেলা ছিল। এখন জেলার সংখ্যা ২২। তাই ২০১৩ সালের মতো বা তার থেকে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী এ বারেও মোতায়েন করতে হবে। কমিশনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সংখ্যক বাহিনী চাইতে হবে। এর পরেও আদালতের নির্দেশ না মানা হলে কমিশনের বিরুদ্ধে ফল খারাপ হতে পারে।

শুক্রবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

WB Panchayat Election 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE