জলমগ্ন।—ফাইল চিত্র।
টানা তিন দিন ধরে বৃষ্টি চলছে। তার জেরে পাহাড়ে ধস নামছে, সমতলে তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। ইতিমধ্যে ধসের জেরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২ শিশু-সহ জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। সকালে জলে তলিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধের খোঁজ মেলেনি শনিবার রাত পর্যন্ত।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মৌসুমী অক্ষরেখা অবস্থান বদলে হিমালয়ের পাদদেশে উত্তরবঙ্গের উপরে চলে এসেছে। তার জেরেই টানা বৃষ্টি চলছে। বাড়ছে দুর্ভোগও। সেচ দফতর জানিয়েছে, একসঙ্গে ফুঁসছে ২০টি নদী। তার মধ্যে চারটি নদীর জল বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। নদীর জল কোথাও জাতীয় সড়কের গতি আটকেছে কোথাও বা ট্রেন থমকে দিয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি চলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রবিবার উত্তরবঙ্গের পাহাড়-সমতলের দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘সব জেলাতেই প্রশাসন অতি তৎপর। দুর্যোগ সামাল দিতে সকলে মিলে চেষ্টা করছি।’’
শনিবার বেলা বাড়তে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কোচবিহারে তোর্সা এবং জলপাইগুড়ির করলা নদীর বাঁধে ফাটল হয়েছে। ফালাকাটার কাছে রেল লাইনের নীচে মাটি ধসে যেতে থাকায় চার জোড়া ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এক দিকে ডুয়ার্স অন্য দিকে, ইসলামপুর, মুকুরিয়া, কিষানগঞ্জ এলাকায় ভারী বৃষ্টিতে লাইনের নীচে মাটি নরম হয়ে গিয়েছে, কোথাও বা রেল লাইনের উপর দিয়ে জল বইছে। তার জেরে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সব লাইনে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত। কালীঝোরার কাছে ধস নেমে সিকিমের সঙ্গে যোগাযোগকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কার্শিয়াঙের কাছে ধসের জেরে বন্ধ হিলকার্ট রোডও।
দার্জিলিং শহরে বেশ কয়েকটি বাড়ি ধসে পড়েছে এ দিন সকালে। কংক্রিটের ভেঙে পড়া স্তূপ থেকে ৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। সুখিয়াপোখরিতে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পাথর-মাটি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার। শুক্রবার রাত থেকে পাহাড়ের অন্তত ১২টি ধস নেমেছে। হিলকার্ট রোডের অন্তত ৭ জায়গায় ধস নেমেছে। দার্জিলিঙের জেলাশাসক জয়সি দাস বলেন, ‘‘দুপুরের পরে নতুন করে ধসের কোনও খবর নেই। ধস সরানোর কাজ চলছে।’’ তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের দাবি, টানা বৃষ্টির সঙ্গে ভুটান থেকে জল ছাড়াও বন্যা পরিস্থিতি তীব্র করেছে। প্রশাসনের হিসেবে এখনও পর্যন্ত বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ।
এ দিন কালজানির জলে প্লাবিত এলাকার ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে কলার ভেলা উল্টে জলে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শনিবার সকালে তুফানগঞ্জ মহকুমা বলরামপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকার ঘটনা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম প্রসেনজিৎ রায় (১৯)। সকালে কোচবিহার পুরসভা এলাকার চার নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক প্রৌঢ় পা পিছলে হাই ড্রেনে পড়ে নিঁখোজ হয়েছেন বলে দাবি। জলপাইগুড়ির নগর বেরুবাড়ির মালকানি পাড়ায় খেলতে গিয়ে জমা জলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে দুই শিশুর। পুলিশ জানিয়েছে, কমলেন্দু দে (১২) এবং হরকুমার রায় (৫) দু’জনে বাড়ির সামনে জমে থাকা জলে নামে। তার পরেই মৃত্যু হয় তাদের।
আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি শহরেও এ দিন নৌকা চলেছে। জলপাইগুড়ির নিউটাউন পাড়ায় একটি লাল রঙের ছোট গাড়ি অর্ধেক জলে ডুবে রয়েছে এই ছবি সোশাল নেটওয়ার্কে ভাইরাল হয়ে পড়ে। শুক্রবার রাতে শহরের অরবন্দনগর, শিরিষতলা, মাসকলাই বাড়ি, পান্ডাপাড়া সহ ১৫টি ওয়ার্ডে জল ঢুকে যায়। হাসপাতাল পাড়ায় কয়েকটি পরিবারকে উদ্ধার করতে দমকল বাহিনী পাঠানো হয়। শনিবার সকালে শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডই জলবন্দি হয়ে পড়ে। ১৯৯৩ সালের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি উস্কে শুক্রবার রাত জেগেছিল আলিপুরদুয়ার শহরও। রাত থেকেই জল বাড়তে থাকে কালজানি, সংকোশ, রায়ডাক, তোর্সা, ডিমা, বাসরা সহ ছোট বড় সমস্ত নদীর। শনিবার দুপুরের পরে মোবাইল এবং নেট সংযোগও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে শহরে।
আত্রেয়ীর জলে বালুরঘাট পুরসভার তিনটি ওয়ার্ড জলের নীচে চলে যায়। জলবন্দি হয়ে পড়ে হাজার পাঁচেক পরিবার। কোচবিহারে তোর্সা নদী ঢুকে পড়ে শহরে। শহরের ব্যস্ততম কেশব রোড থেকে স্টেশন রোড নদীর চেহারা নিয়ে রয়েছে। সুনীতি রোড বাইলেন থেকে নতুন বাজার, কলাবাগান থেকে গাঁধীনগর শুধু জল আর জল। স্ট্যান্ডপোস্টের মুখ, কল ডুবে যাওয়ায় শুরু হয়েছে পানীয় জলের সংকটও। জেলায় ৫১৭টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। অসম যাওয়ার ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের চিলাখানার কাছে নতুন বাজার এলাকায় রাস্তার উপর দিয়ে রায়ডাক নদীর জল বইতে শুরু করে। তার ফলে অসমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ দিকে, কোচবিহারের হলদিবাড়ির ১২ জন কর্মীকে শোকজ করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। নির্দেশ দেওয়ার পরেও বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে না জানিয়ে অফিসে গরহাজির থাকায় ১২ জন কর্মীকে হলদিবাড়ির বিডিও শোকজ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। ওই ব্লকের ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ জলবন্দি। চলছে ত্রাণ শিবিরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy