Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Higher Secondary Exam 2020

৪৯৯ পেয়ে শীর্ষে চার, জেলার পাশে স্বমহিমায় কলকাতাও

করোনা আবহে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রথম চার: উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারী স্রোতশ্রী রায়, গৌরব মণ্ডল, ঐক্য বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অর্পণ মণ্ডল (ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী)। শুক্রবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক এবং নিজস্ব চিত্র

প্রথম চার: উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারী স্রোতশ্রী রায়, গৌরব মণ্ডল, ঐক্য বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অর্পণ মণ্ডল (ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী)। শুক্রবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক এবং নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০ ০৩:২৫
Share: Save:

এ বারে চারমূর্তির হাতে সেরার নম্বর। উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাসে যা নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন ঘটনা। হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের ঐক্য বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার সাখাওয়াত মেমোরিয়ালের স্রোতশ্রী রায়, বাঁকুড়ার বড়জোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের গৌরব মণ্ডল এবং বাঁকুড়ার কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুলের ছাত্র অর্পণ মণ্ডল। শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে, চার জনই ৫০০-এর মধ্যে পেয়েছেন ৪৯৯ নম্বর।

করোনা আবহে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। যে ক’টি পরীক্ষা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই পুরো নম্বর দিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। প্রকাশ করা হয়নি মেধা-তালিকাও। তবে দেখা যাচ্ছে, চার জন ছাত্রছাত্রী পেয়েছেন ৪৯৯। এটাই সর্বোচ্চ। এই চার জনের মধ্যে আর একটি মিল, প্রায় সকলেই এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন — ‘‘আশা করেছিলাম ভাল ফল হবে, কিন্তু এতটা ভাল হবে ভাবতে পারিনি!’’

পড়ার পাশাপাশি ঐক্য ছবি আঁকেন। ঘর ভরে ছবি এঁকেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে আঁকার জন্য পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। বিতর্ক ও কুইজে আগ্রহী। বাবা সমরেশ ওই স্কুলেরই শিক্ষাকর্মী। মা রেখাদেবী গৃহবধূ। স্পষ্টবক্তা স্রোতশ্রীর প্রিয় বিষয় অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা। বাঁকুড়ার বড়জোড়ার গৌরব গল্পের বই আর ক্রিকেটে মশগুল থাকতেন। ফল জানার পরে হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘স্বপ্ন মনে হচ্ছে।’’ আঁকার শখ রয়েছে বাঁকুড়ার কেন্দুয়াডিহির অর্পণেরও। সঙ্গে ক্রিকেট খেলারও। অন্য বারের মতো এ বারে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হল না, এই আক্ষেপ রয়ে যাবে তাঁর।

৪৯৯ যদি সেরা নম্বর হয়, তা হলে তার ঠিক এক নম্বর পিছনেও রয়েছেন অনেক ছাত্রছাত্রী। বাঁকুড়ার ওন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী রিয়া দত্ত (৪৯৮) ও শিল্পা দত্ত (৪৯৭)। দু’জনেরই বাবাই দিনমজুর। তাই দুই বন্ধুর এখন চিন্তা, এত ভাল ফল করেও আগামীতে কী ভাবে পড়ার খরচ জোগানো সম্ভব হবে? রিয়ার বাবা সত্যরাম ও শিল্পার এত ভাল ফল হবে, ভাবেননি কেউ বাবা মিলনকৃষ্ণও আনন্দের মধ্যে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। বলছেন, ‘‘শিক্ষকদের সাহায্যে এত দূর এগিয়েছে ওরা। এর পরে কী হবে, জানি না!’’

আরও পড়ুন: ঢালাও নম্বর, কলেজে ভর্তি নিয়ে প্রশ্ন-সংশয়

৪৯৮ পেয়েছেন উত্তরবঙ্গের তিন পড়ুয়া। তাঁদের এক জন, মালদহের ইংরেজবাজারের নীলাব্জ দাস নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র। লকডাউনে মা আটকে জলপাইগুড়িতে, দাদুর বাড়িতে। বাবার সঙ্গে মালদহের শহরের বাড়িতে ছিলেন নীলাব্জ। ফল জানার পরে ভিডিয়ো কলে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। নীলাব্জের মতো রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের জয় মণ্ডল আর বালুরঘাট হাইস্কুলের সৌগত সরকারও পেয়েছেন ৪৯৮। মাধ্যমিকে নবম হয়েছিলেন জয়। সে বারে মেধা তালিকার শীর্ষে না থাকায় ভাল ফল করেও কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল দেখে কিন্তু খুশি জয়। সৌগত এই সাফল্য উৎসর্গ করলেন তাঁর বাবা-মা ও শিক্ষকদের। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চান তিনি।

আরও পড়ুন: ধৈর্য, অধ্যবসায়ে সাফল্য রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুলের

৪৯৮-এর ঘরে থাকা উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ হাইস্কুলের ছাত্র দেবার্ঘ চক্রবর্তীও চান ডাক্তার হতে। কারণ, তিনি বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরাই এখন মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন। তাঁরাই ভগবান।’’ ভাল গান করেন দেবার্ঘ। রবীন্দ্রসঙ্গীত তাঁর সব থেকে প্রিয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের গৌরব মাইতি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেন যোধপুর পার্ক বয়েজ হাইস্কুল থেকে। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৮। গৌরবও ডাক্তার হতে চান।

মাধ্যমিকে পঞ্চম হওয়া অনীক জানা উচ্চ মাধ্যমিকে পেলেন ৪৯৮। মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবনের এই ছাত্রের বাবা যাদবকুমার জানা চিকিৎসক। তবে অনীক চান পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে। নব নালন্দা শান্তিনিকেতন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র রৌনক সাহা মাধ্যমিকে হয়েছিলেন ষষ্ঠ। এ বারে পেলেন ৪৯৮। বাবা-মা দু’জনই শিক্ষক। হুগলির তারকেশ্বরের মুক্তারপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৪৯৮ নম্বর পেয়েছেন মহম্মদ তালহা। বাড়ি বর্ধমানের সরাইটিকোর গ্রামে। তাঁর সোজাসাপ্টা কথা, ‘‘লকডাউনের জেরে পদার্থবিদ্যায় পরীক্ষা না-হওয়ায় অঙ্কের ১০০ নম্বরই ওই বিষয়ে পেয়েছি। পরীক্ষা হলে পদার্থবিদ্যায় হয়তো পঁচানব্বইয়ের বেশি পেতাম না।’’ তালহাও চান ডাক্তার হতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary Exam 2020 Education WBCHSE
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE